জন্মদিনের অগ্রিম শুভেচ্ছা, শুভ জন্মদিন দাদা
প্রকাশ: ২০১৫-১১-০১ ১৬:০০:১৯
সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় যাচ্ছি। নৌকায়; মানে, বাসে। সাতক্ষীরা থেকে বের হওয়ার কোনো রুটেই কোনো ভাল রাস্তা নেই। ভাঙাচোরা, খানাখন্দে ভরা। বাস তো চলে না, যেন দোলে। আমি স্থলপথে পাখির ডানায় চেপে দুলতে দুলতে যাচ্ছি। (বাসের নাম ঈগল)।
আপনি খুব সতেজ শরীরে বাসে উঠবেন, আর বাসের প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতে শরীরের আর মনের সমস্ত চাপ এসে আপনাকে ক্লান্ত করে দেবেই; এটাই সাতক্ষীরা থেকে সড়কপথে বের হওয়ার নিয়ম। সে নিয়মেই ঘুমিয়ে পড়লাম। অবশ্য আমি যেকোনো পরিস্থিতিতেই ঘুমিয়ে পড়ার অসীম প্রতিভাসম্পন্ন মানুষ।
ভোরে ঘুম ভাঙল পাশের সিটের বানরের বাচ্চার চিঁচিঁ চ্যাঁচ্যাঁ শব্দে। (বাচ্চাটির মা ওকে ধমকাচ্ছিলেন, “এই বান্দরের বাচ্চা, চুপ, একদম চুপ! কানবি না! কানলে তুইল্যা আছাড় মারমু!” বানর সাহেব পাশেই নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন।) এসব দেখে আর শরীরের অসীম ক্লান্তিতে মনমেজাজ খারাপ করে আকাশ দেখছিলাম। আকাশ অনেককিছুই ভুলিয়ে রাখতে পারে। সকল এসি বাসই পর্দাসীন। সেই পর্দা সরিয়ে ভোরের স্নিগ্ধ আকাশটাকে দেখা যায়, একটু একটু ছুঁয়েও ফেলা যায়।
ঘুম ভাঙল আর একটুখানি ফেসবুকে ঢুকব না, এ তো হয় না। ফেসবুকে ঢুকে ট্যাগ রিভিউ চেক করতে গিয়ে দেখি, এক শিল্পীর তুলিতে আমি! প্রথমটায় ধাক্কা খেয়েছিলাম। আঁকাও এতটা নিখুঁত হয়! ধরে নিতে ইচ্ছে করছিল, আমার একটা পুরোনো ফটোকে ফটো এডিটরে এডিট করা হয়েছে। পরে খেয়াল করে বুঝলাম, এটা আঁকা ছবি। আমি তো ছবি অতো বুঝি না, আমার কাজ ছবি দেখা আর শিল্পীর অসাধারণত্বে শ্রদ্ধায় মাথা নত করা। যেকোনো সৃষ্টিতেই অসীম কষ্ট সহ্য করতে হয়। সেই কষ্টের কথা ভাবলেই তো স্রষ্টার প্রতি মাথা এমনিতেই নুয়ে আসে।
দেখি, সে ছবিতে ক্যাপশন দেয়া : “তার বিশেষণ, তিনি একজন ভাল মানুষ ! আমাদের Sushanta দা ! heart emoticon
পৃথিবীতে আসতে আপনার এখনো তিনদিন বাকি। tongue emoticon
জন্মদিনের অগ্রিম শুভেচ্ছা, শুভ জন্মদিন দাদা !!! grin emoticon
অনেক দিন পর একটা সিজি পেইন্টিং করলাম ! colonthree emoticon
সময়ঃ ২২ ঘণ্টা ! স্বত্বঃ Azad Rahman’s Creation ! :-B”
ইনবক্সে দেখি আজাদ লিখেছে : “দাদা, আপনার অনুমতি ছাড়াই, আপনাকে একটা পেইন্টিং ট্যাগ করেছি, আপনি ঘুম থেকে উঠে সারপ্রাইজড হবেন।
অনেক আগে বলেছিলাম আপনার একটা ছবি আঁকবো, সময় হয়ে ওঠেনি frown emoticon
আজ সাহস করে একে ফেললাম। smile emoticon
ভালো থাকবেন দাদা, অনেক ভালো থাকবেন !”
শুধু একটা মুহূর্তও আপনার জীবনটা সুন্দর করে দিতে পারে; ভুলিয়ে দিতে পারে আগের সকল মুহূর্তের কষ্ট কিংবা বিরক্তি। পোস্টটা দেখছিলাম আর অসীম মুগ্ধতায় ভাবছিলাম, ভাল ফটোগ্রাফার আর আর্টিস্ট বন্ধু থাকলে নিজেকে সুন্দর অবয়বে বারবার পুনরাবিষ্কার করতে আর কী লাগে! তার উপরে শিল্পী আমার শুধু বন্ধুই না, খুব প্রিয় এক ছোটভাই। ওকে আমি ‘তুই’ করে বলি। ও আমাকে ভালোবাসে, আমাকে নিয়ে নিশ্চয়ই ভাবে। নাহলে এতটা নিখুঁতভাবে আমাকে বিশ্লেষণ করে আঁকতে পারত না। একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে দেখলাম, ও ওর প্রোফাইল পিকচার বদলে রেখেছে এই ছবিটাই! আমি কি এরও যোগ্য! ভাবা যায়!!
কিন্তু সিজি পেইন্টিংটা আবার কী বাবা? বুঝি নাতো! শিল্পীকে ফোন দিলাম। “দাদা, একটা বাড়তি যন্ত্রকে কম্পিউটারের সাথে কানেক্ট করে মূল ছবিটা হাতে এঁকে সেটিকে ডিজিটাইজড করা হয়।” “মানে, ছবিটা তুই আসলে হাতে এঁকেছিস?” “জ্বি দাদা।” “বলিস কীরে! এটা আঁকতে কত সময় লাগল?” “দাদা, বেশি সময় লাগেনি। আপনার ভাল লেগেছে?” “না লাগলে কি আর ফোন করি নাকি গাধা?” “থ্যাংকস দাদা, অনেক থ্যাংকস! আপনি আমাকে ফোন করতে পারেন, এটা আমি কখনও ভাবতেও পারিনি।”
“বললি নাতো কত সময় লাগল!” “দাদা, এটা নিয়ে দুইদিন কাজ করেছি। মাত্র ২২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়েছে।” ওকে আর কিছু বলতে পারলাম না। যে শিল্পী তার সৃষ্টিকে এতটা ভালোবেসে অসীম ধৈর্য আর আন্তরিকতা দিয়ে ভালোবেসে কাজ করতে পারে, সে কখনওই পিছিয়ে থাকবে না। আমি ওর জন্য মন থেকে দোয়া করি। আপনারাও ওর জন্য দোয়া করবেন।
আমি সাধারণত জন্মদিনের উপহার নিতে পছন্দ করি না। কিন্তু ভালোবাসা নিই। ভালোবাসা না নেয়া যে পাপ!
আজাদ, ভাল থাকিস রে! ভালোমানুষদের ভাল থাকতে হয়।
পুনশ্চ। ভাল কথা, আজাদকে আপনাদের মনে নেই? একটা ছেলে ঢাকা নিউমার্কেটের সামনে যে কাপড়ের দোকানগুলি আছে, সেখানের এক দোকানদার এক তরুণীর গায়ে হাত তুললে প্রতিবাদ করতে গিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিল। আমাদের এই গা-বাঁচিয়ে-চলা সমাজে সে-ই শুধু জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে বোনটিকে বাঁচাতে গিয়েছিল। পরে পুলিশ এসে ওকে ওই অমানুষদের হাত থেকে রক্ষা করে। মনে নেই সে মহান মানুষটিকে? সেই মানুষটিই এই পেইন্টিংয়ের স্রষ্টা।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস