বাংলাদেশের কোথাও কোনো হ্যাকিং হলে তা এখন আমরা নিজেরাই প্রতিরোধ করতে পারব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজদে জয়।
তিনি বলেন, এখন কোনো প্রতিষ্ঠান হ্যাকিংয়ের শিকার হলে কোন আইএসপিতে হ্যাকিং হয়েছে, তা ওই প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেবো। আর সরকারি কোনো সংস্থায় হ্যাকিং হলে আমরা নিজেরাই তা ঠেকাব।
এসময় তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই সিস্টেম যদি আমাদের কয়েকবছর আগে থাকত, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের হ্যাকিং আমরা আগেই ধরতে পারতাম। এই সিস্টেম আজ আইসিটি বিভাগে স্থাপন করা হলো।’ তবে দেরিতে হলেও সরকারের সব ক্রিটিক্যাল অবকাঠামোতে এখন নিজেরাই মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে বলে সন্তোষ জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) আগারগাঁওয়ে আইসিটি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ কম্পউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ভবনের আইসিটি টাওয়ারে স্থাপিত স্টার্টআপ বাংলাদেশের অ্যাকসেলেরেটর এবং সফটওয়্যার কোয়ালিটি টেস্টিং ও ইনসিডেন্ট রেসপন্ন টিম ল্যাবের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্থাপিত কোয়ালিট টেস্টিং ও সার্টিফিকেশন সেন্টারটি সফটওয়্যারের গুণগত মান নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের একটি ল্যাব। অন্য ল্যাবটি হলো কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম (BD-CIRT) ল্যাব। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকারের প্রথম অ্যাকসেলেরেটর প্রোগ্রাম হলো ২০২১ সালের মধ্যে এক হাজার উদ্ভাবনী পণ্য/সেবা তৈরির উদ্দেশ্যে স্টার্টআপদের প্রথম পদক্ষেপ।
সজীব ওয়াজেদ জয় অ্যাকসেলেরেটির বিশেষত্ব তুলে ধরে বলেন, আইটি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, বিদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়ে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করার মতো কাজগুলো এর মাধ্যমে করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমি চাই, বাংলাদেশে নতুন নতুন আইটি কোম্পানি নিজেদের উদ্যেগে গড়ে উঠবে। বাংলাদেশে উদ্যোক্তরা গড়ে উঠবে।’
স্টার্টআপ বাংলাদেশ-আইডিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে এই অ্যাকসেলেরেটর বাস্তবায়ন করছে। এটি আইসিটি টাওয়ারের ১৫ তলায় অবস্থিত। এতে কো-ওয়ার্কিং স্পেস, মেন্টরিং, ভিডিও কনফারেন্স, নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড হোস্ট পিচিং সেশনসসহ বুট ক্যাম্পের ব্যবস্থা থাকবে। স্টার্টআপরা দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারী ও পার্টনারদের সঙ্গে মিটিং করার জন্য এখান থেকে বিশ্বমানের কনফারেন্স রুম ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়াও স্থানীয় ও বৈশ্বিক সদস্যদের সমন্বয়ে স্টার্টআপ সার্কেলের এই ফ্ল্যাগশিপের নিচে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কর্মসূচির সুযোগ পাবে।
সফটওয়্যার টেস্টিং ল্যাবটির বিশেষত্ব তুলে ধরে জয় বলেন, বাংলাদেশে আমাদের আগে কোনো সফটওয়্যার টেস্টিং ল্যাব ছিল না। আমাদের বাইরের কোম্পানি থেকে সফটওয়্যার টেস্টিং করে সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হতো। এখন এটা আমাদের দেশ থেকেই করে নিতে পারব, আমাদের আইসিটি মিনিস্ট্রিতেই এই ল্যাব আছে।
উল্লেখ্য, এ সেন্টারে সফটওয়্যার কোয়ালিটি টেস্টিং ও সার্টিফিকেশন সেন্টারে আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেটধারী ১২ জন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা কাজ করছেন। ভবিষ্যতে এ সেন্টারের মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যারের মান পরীক্ষা করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
এ ছাড়াও শিগগিরই সফটওয়্যার কোয়ালিটি টেস্টিংয়ের ক্ষেত্রে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে এ সেন্টারে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সফটওয়্যার কোয়ালিটি টেস্টিং বোর্ডের সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালু করা হবে।
সজীব ওয়াজেদ বলেন, স্টার্টআপ বাংলাদেশের অ্যাকসেলেরেটার ও দু’টি বিশেষায়িত ল্যাব উদ্বোধনের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
এই ল্যাবটিতে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনসহ নেটওয়ার্ক অ্যানালাইসিস করার অত্যাধুনিক সফটওয়্যার ও যন্ত্রপাতি রয়েছে, যা দেশে সংগঠিত সাইবার অপরাধ ও অপরাধী শনাক্তকরণে সক্ষমতা বাড়াবে। দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে স্থাপিত এটিই প্রথম কোনো ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব জুনেয়া আজিজ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক প্রার্থ প্রতিম দেবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।