বিদেশি ঋণের সুদহার বাড়ানোর পক্ষে ব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-০৭-২৭ ১০:০৮:৫১
শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির দায় মেটানোর বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ বায়ার্স ও সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট নামে পরিচিত। এ ঋণের বিপরীতে বেশি সুদ নির্ধারণের সুবিধা চাচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংক। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংক-এডি ফোরামের বৈঠকে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রতিনিধি বৈদেশিক মুদ্রায় নেওয়া ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ছয় শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ আট শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
দেশের ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি বাকিতে আমদানি করতে পারেন। যাকে বলা হয় সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট সুবিধা। আবার দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়েও এসব পণ্য আমদানি করার সুযোগ রয়েছে। একে বলা হয় বায়ার্স ক্রেডিট সুবিধা। সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিটের তুলনায় বায়ার্স ক্রেডিটে পণ্যমূল্য কম হয়। যে কারণে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের কাছে বায়ার্স ক্রেডিট অর্থাৎ দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়ে পণ্য আমদানি করার ব্যবস্থা বেশি জনপ্রিয়। ইস্পাত কারখানা, ভোগ্যপণ্য বিশেষত ভোজ্যতেল ও চিনির কাঁচামাল আমদানি হচ্ছে এ ব্যবস্থায়। আর বস্ত্র, তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি হচ্ছে। কাঁচামাল আমদানি করলে ১৮০ দিনের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হয় আর মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করলে সর্বোচ্চ ৩৬০ দিনের মধ্যে মূল্য পরিশোধ করা যায়। সর্বসাকুল্যে সর্বোচ্চ ছয় শতাংশ পর্যন্ত সুদ পরিশোধ করা যায় এসব ঋণে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এডি ফোরামের বৈঠকে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেন, লন্ডন আন্তঃব্যাংক অফার রেট (লাইবর) বাড়ছে। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের ঋণের মার্ক আপও বাড়ছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে সুদের হার সর্বোচ্চ ছয় শতাংশের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে না। ফলে লাইবর ও মার্ক আপের ভিত্তিতে ভাসমান হার নির্ধারণ করা যেতে পারে। ইসলামী ব্যাংকের প্রতিনিধি এ ঋণে সুদহার সর্বোচ্চ আট শতাংশ করার মতো দেন। এ বিষয়ে সরকারের সম্পৃক্ততা থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা এ বিষয়ে আলোচনা করছেন বলে সভাকে অবহিত করা হয়। পাশাপাশি এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা ব্যাংকগুলোকে অবহিত করা হবে বলে জানানো হয়।
২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করে বিলম্বের মূল্য পরিশোধ সুবিধায় আমদানির সুযোগ দেয়। তখন সুদহারে কোনো সীমা নির্ধারণ করা ছিল না। ব্যাংক তাদের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে গ্রাহকদের অ্যাকসেপটেড বিলের বিপরীতে অর্থ পরিশোধ করত। ২০১২ সালে এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়ে দেয়, এ ধরনের ঋণে সর্বোচ্চ ছয় শতাংশ পর্যন্ত সুদ পরিশোধ করা যাবে। এই সুদহার লাইবরের সঙ্গে যোগ করে নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত ৩০ জুন পর্যন্ত এ ধরনের ঋণের স্থিতি ৯১০ কোটি ডলার।
বাংলাদেশে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও এইচএসবিসি প্রধানত এ ঋণ দিয়ে থাকে। দুবাইভিত্তিক ব্যাংক মাশরেক ব্যাংক, নুর ব্যাংক এবং বিশ্বব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইএফসি বাংলাদেশের গ্রাহকদের এ খাতে ঋণ দিচ্ছে। এছাড়া দেশের বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক তাদের অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রাহকদের এ ধরনের ঋণ সুবিধা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি ব্যাংকের উদ্যোক্তারা স্থানীয় মুদ্রার সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্যাংকগুলো তা বাস্তবায়নেরও ঘোষণা দিয়েছে। এ রকম সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণে বেশি সুদ পরিশোধে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ স্ববিরোধী অবস্থান।
কিছুদিন আগে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত এক সেমিনারে বিদেশি ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করার জোর সুপারিশ করেন আলোচকরা। সুপারিশের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিদেশি ঋণে লাইবরের সঙ্গে সাড়ে চার শতাংশ পর্যন্ত সুদ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া। বর্তমানে লাইবর হচ্ছে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। তিনি জানান, আরও তিন বছর সহজে বিদেশি ঋণ নেওয়ার সুবিধা দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এ ছাড়া সুদহার নির্ধারণ ও ঋণের পরিমাণ নিয়েও ভাবছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
পিআরআই নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুরের মতে, সুদহারে কোনো সীমা আরোপ করা ঠিক হবে না। কারণ লাইবর ওঠানামা করে। আবার দেশের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতাও বিবেচনা করতে হবে।