নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ বের করতে সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিএনপি সব সময় প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (২৭ জুলাই) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি আগ্রহ প্রকাশ করলে নির্বাচন নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি তুললে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘আমরা তো বরাবরই আলোচনা চেয়ে আসছি। একটা সুস্থ অবস্থায় যাওয়ার জন্য, সুষ্ঠু নির্বাচনে যাওয়ার পথ বের করতে তাদের (আওয়ামী লীগ) সঙ্গে আলোচনার আহ্বান সবসময় জানাচ্ছি।’
‘আজকে আপনাদের মাধ্যমে আবার আহ্বান জানালাম— আসেন, আলোচনায় বসি, কথা বলি। কোথায় বসবেন? কী করবেন বলেন?। আমরা সব সময় প্রস্তুত আলোচনার জন্য’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আলোচনা চেয়ে আওয়ামী লীগকে ফোন করবেন কি না?— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আইডিয়াটা আপনারা দিলেন, আমরা ভেবে দেখি। তারা কল করলে, আমরা কলব্যাক করব।’
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা হচ্ছে কি না?— এমন এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা ওই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নিই নি। আমরা চেষ্টা করেছি ২০দল এক সঙ্গে নির্বাচন করার জন্য। জামায়াত ইসলাম এখন পর্যন্ত নির্বাচনে আছে—থাকতেই পারে তারা। এটা নিয়ে ২০ দলের জাতীয় পর্যায়ের যে ঐক্য, তা বিনষ্ট হয়নি।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি একাই নির্বাচন করে সরকার গঠন করেছিল। সুতরাং জেতার জন্য বিএনপিকে কারো ওপর নির্ভর করতে হয় না, বিএনপি নিজেই যথেষ্ট। আমরা ঐক্য করেছি বৃহত্তর স্বার্থে।’
‘‘স্বার্থটা কী? এই দানবের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা। নির্বাচন তো হচ্ছে আমাদের দ্বিতীয়, তৃতীয় ঐক্য। মূল বিষয়টি হচ্ছে, এই ভয়াবহ দানব সরকারকে সরানোর জন্য কেবল ২০ দলীয় ঐক্যজোট নয়, আমরা জাতীয় ঐক্য’রই ডাক দিয়েছি’’— বলেন ফখরুল।
সে কাজে বিএনপি অনেক দূর এগিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাম ৮টি দল ঐক্য তৈরি করে আমরা যে কথাগুলো বলি সে কথাগুলোই তারা বলেছে। আমরা আশাবাদী, বাকি দলগুলোও এটা চিন্তা করবে যে, দেশকে রক্ষা করতে হলে, মানুষকে রক্ষা করতে হলে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হলে ঐক্যর কোনো বিকল্প নেই।’
নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবি:
রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করতে না পারার অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পতদ্যাগ দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য, নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য গ্রেফতার হওয়া বিএনপির সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় তাদের পদত্যাগ দাবি করছি।’
ফখরুল বলেন, ‘‘ইলেকশন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এর প্রধান যাকে করা হয়েছে তিনিসহ অন্য কমিশনাররা শপথ নিয়েছেন, তারা কোনো রাগ বিরাগের বশবতী না হয়ে নিজেদের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন এবং সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচন করার জন্য তারা দায়বদ্ধ থাকবেন। দুর্ভাগ্য এই জাতির নির্বাচন কমিশন তার আশপাশ দিয়েও যাচ্ছে না। তাদেরকে ফোন করলে বলে, ‘চেষ্টা করছি’।’’
‘‘চেষ্টা করার করার জন্য তো আপনাকে রাখা হয়নি। আপনাদেরকে রাখা হয়েছে নির্বাচনকে সুষ্ঠু-অবাধ করার জন্য। প্রত্যেকটি মানুষ ট্যাক্স পে করছে। সেখান থেকে আপনাদের বেতন হচ্ছে। আপনাদেরকে অবশ্যই কতৃত্ব প্রয়োগ করে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে’’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আপনারা সে কাজে ব্যর্থ হয়েছেন। আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি, আপনাদের উচিত নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে পদত্যাগ করা। দয়া করে পদত্যাগ করুন, এই জাতিকে আপনারা রক্ষা করুন। আপনরা যে নির্বাচন সামনে নিয়ে আসছেন, এটা বাংলাদেশের ধ্বংস ছাড়া কিছু বয়ে আনবে না।’’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।