এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত ছয় বছরের মধ্যে পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। কাক্সিক্ষত ফলাফল না পেয়ে প্রকাশিত ফলাফল চ্যালেঞ্জ করেছে আবেদন করেছে এক লাখ ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। আবেদনের শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বোর্ড। বিষয়ভিত্তিক আবেদনে শীর্ষে রয়েছে ইংরেজি, আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) ও পদার্থ বিজ্ঞান। সব বিষয় মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ আবেদন জমা পড়েছে বিভিন্ন বোর্ডে। গত বছরের তুলনার এবার আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৫ হাজার। আর পত্রের সংখ্যা বেড়েছে ৩৩ হাজারের বেশি। আগামী ২২ আগস্ট পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশা করা হবে বলে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক আজকালের খবরকে বলেন, ‘বিগত বছরের তুলনায় এবার ফল খারাপ হয়েছে। ইংরেজি, আইসিটি, পদার্থ বিজ্ঞানের পরীক্ষা কঠিন হওয়ার কারণে অনেকেই কাক্সিক্ষত ফল পায়নি। এ তিন বিষয়ের আবেদন বেশি পড়েছে। এছাড়াও গত দুই বছর থেকে বিষয় ভিত্তিক সিকিউ, এমসিকিউর আলাদা আলাদা নম্বর জানার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী প্রান্তিক নম্বর পেয়ে আবেদন করেছেন।’
শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আটটি সাধারণ বোর্ড ও মাদ্রাসা বোর্ডে এক লাখ ২৫ হাজার ২৩৮ জন শিক্ষার্থী ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৪৬ হাজার ৩৭০ জন পরীক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে এক লাখ ৩৪ হাজার বিষয়ে আবেদন করেছে। এর মধ্যে ইংরেজি দুই পত্রে ৪০ হাজার, আইসিটিতে ১৮ হাজার ও পদার্থ বিজ্ঞানে আট হাজার আবেদন করেছে।
চট্টগ্রাম বোর্ডে ১৭ হাজার ৭৪০ জন পরীক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে ৬১ হাজার ৬৯৯টি আবেদন করেছে। এ বোর্ডে সবচেয়ে বেশি আবেদন ইংরেজি বিষয়ে। ইংরেজি প্রথম পত্রে ছয় হাজার ৬২৭টি ও দ্বিতীয় পত্রে ছয় হাজার দুইটি, আইসিটিতে ছয় হাজার ৭৮৩টি, পদার্থ বিজ্ঞান প্রথম পত্রে আবেদন করেছে তিন হাজার ৫৮৬ ও দ্বিতীয় পত্রে তিন হাজার ৪২টি আবেদন করেছে শিক্ষার্থীরা। বরিশাল বোর্ডে তিন হাজার ৭৮৩ জন পরীক্ষার্থীর বিষিয় ভিত্তিক ১৪ হাজার ৬৮২টি আবেদন করেছে। এর মধ্যে ইংরেজি প্রথম পত্রে দুই হাজার ৬২৩টি ও দ্বিতীয় পত্রে এক হাজার ৯১৮টি, পদার্থ বিজ্ঞান প্রথম পত্রে ৭৩৩টি ও দ্বিতীয় পত্রে ৫৪১টি, আইসিটিতে ৯২১টি আবেদন পড়েছে।
রাজশাহী বোর্ডে ১৩ হাজার ৪২৮ জন পরীক্ষার্থী ৩৪ হাজার ৪৬৮টি আবেদন করেছে। এর মধ্যে ইংরেজি প্রথম পত্রে ছয় হাজার ৪৩১টি ও দ্বিতীয় পত্রে পাঁচ হাজার ৬২৯টি, আইসিটিতে দুই হাজার ৭৬৯টি, পদার্থ বিজ্ঞান প্রথম পত্রে এক হাজার ৯৫৭টি ও দ্বিতীয় পত্রে দুই হাজার ৪৫টি আবেদন রয়েছে। দিনাজপুর বোর্ডে ৮৮৫৭ জন পরীক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে মোট ২৩ হাজার ৫৪২টি আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ইংরেজি প্রথম পত্রে চার হাজার ৪৮৫টি ও দ্বিতীয় পত্রে তিন হাজার ৯৫১টি, আইসিটিতে দুই হাজার ৩৫০টি, পদার্থ বিজ্ঞানে প্রথম পত্রে এক হাজার ৪৩০টি ও দ্বিতীয়য় পত্রে এক হাজার ৫২৭টি।
সিলেট বোর্ডে সাত হাজার ৭৬২৯ জন পরীক্ষার্থী প্রকাশিত ফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেছেন। তারা বিভিন্ন বিষয়ে ১৮ হাজার ৩২২টি পত্রের ফল চ্যালেঞ্জ করেছে। এর মধ্যে ইংরেজি প্রথম পত্রে তিন হাজার ২১৩টি ও দ্বিতীয় পত্রে তিন হাজার ৪০২টি, আইসিটিতে দুই হাজার ৩৩৪টি আবেদন রয়েছে। যশোর বোর্ডে বোর্ডে ১৩ হাজার ১৫৪ জন পরীক্ষার্থী ৩৩ হাজার ৫৫৮টি আবেদন করেছে। কুমিল্লা বোর্ডের ৯৩৫৫ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে ২৮ হাজার ৭৬৮টি পত্রে আবেদন করেছে। এর মধ্যে ইংরেজি প্রথম পত্রে পাঁচ হাজার ৭২৭টি ও দ্বিতীয় পত্রে পাঁচ হাজার ৫৬৫টি। আইসিটিতে দুই হাজার ৬৯৩টি আবেদন রয়েছে। পদার্থ বিজ্ঞান প্রথম পত্রে এক হাজার ৩১ জন ও দ্বিতীয় পত্রে ৯০৩ জন আবেদন করেছেন। মাদ্রাসা বোর্ডে চার হাজার ৯২২ জন পরীক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে ১০ হাজার ৭৯৬টি আবেদন করেছেন। এ বোর্ডেও ইংরেজিতে বেশি আবেদন পড়েছে। যার সংখ্যা ১৭৮৫টি। এরপরই ১৩৯৬টি আবেদন পড়েছে আইসিটিতে। গত ১৯ জুলাই এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর দিন থেকে গত বৃহস্পতিবার পুনঃনিরীক্ষার আবেদন নেওয়া হয়েছে। আবেদন শেষে আটটি সাধারণ ও মাদ্রাসা বোর্ডের তথ্য জানা গেলেও কারিগরি বোর্ডের তথ্য জানাতে পারেননি বোর্ডটির কর্মকর্তারা।
যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র ও কুমিল্লা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ জানিয়েছেন, পুনঃনিরীক্ষণে শুধুমাত্র চারটি বিষয় দেখা হয়। এগুলো হলো- উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেওয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা সঠিকভাবে করা হয়েছে কিনা, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে উঠানো হয়েছে কি না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটে বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি না। এসব বিষয় পরীক্ষা করেই পুনঃনিরীক্ষার ফল দেওয়া হয়। এর মানে কোনো শিক্ষার্থীর উত্তরপত্র ফের মূল্যায়ন করা হয় না। তারপরও প্রতি বছর অসংখ্য পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হচ্ছে। এটি পরীক্ষকদের উদাসীনতার কারণেই ঘটেছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদ ইসলাম আজকালের খবরকে বলেন, সব কিছু ডিজিটাল হওয়া সহজেই আবেদন করতে পারছেন শিক্ষার্থী। ফলে আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় খারাপ করার পরে চাপে অভিভাবকদের বলে পরীক্ষায় ভালো করেছি ফল পুনঃনিরীক্ষণ করলে পরিবর্তন হবে। ফলে অভিভাবকরা আবেদন করাচ্ছেন। এছাড়া কিছু পরীক্ষার্থী আত্মবিশ্বাস থেকেই আবেদন করছেন। তাদের ফল পরিবর্তনও হচ্ছে। পরীক্ষক্ষদের উদাসীনতার কারণে এ ঘটনা ঘটছে জানিয়ে তিনি বলেন, অভিযুক্ত পরীক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম বোর্ডে গত জেএসসি পরীক্ষায় উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে ২০০ জন পরীক্ষক ভুল করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।