রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। ভোট শুরুর আগেই অনেক কেন্দ্রেই ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কেন্দ্রগুলোতে নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সোমবার (৩০ জুলাই) সকাল ৮টায় শুরু হওয়া এই ভোটগ্রহণ একটানা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
ইসি সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ জানান, তিন সিটিতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ নজর রাখছে প্রশাসন।
তিনি জানান, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট তিন সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মোট ১৯ জন। এ ছাড়া, ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ৩৮১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৪৯ জনসহ মোট ৫৪৯ জন প্রার্থী নির্বাচনে চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা আগেই শেষ হয়েছে। গতকাল রোববার (২৯ জুলাই) দুপুর থেকে পিকআপে করে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পুলিশি পাহারায় ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স পাঠানো হয়। ভোটের আগের দিন এখানে-সেখানে প্রার্থীদের পোস্টার ছাড়া বাড়তি কোনও উচ্ছ্বাস-উত্তেজনা দেখা যায়নি।
নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে রাজশাহীতে ১০ জন, বরিশালে ১০ জন এবং সিলেট সিটিতে ৯ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের দিন প্রতিটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ভোটকেন্দ্রে ২৪ জন এবং সাধারণ ভোটকেন্দ্রে (ঝুঁকিমুক্ত) ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন।
এছাড়া, তিন সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতিটি সাধারণ ওয়ার্ডে একটি করে মোবাইল ফোর্স এবং প্রতিটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে একটি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স রয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে র্যাবের টিম এবং বিজিবি সদস্যও মোতায়েন করা হয়েছে। প্রতি তিন ওয়ার্ডের জন্য একজন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন।
তিন সিটির এই নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যেমন জয়ের প্রত্যাশা করছে, তেমনি জয়ের আশায় বুক বেঁধেছে বিএনপিও। তবে বিএনপি আশঙ্কা করছে ভোট কারচুপির। তিন সিটিতেই বিএনপি প্রার্থীরা গতকালও এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ ধানের শীষেই ভোট দেবে। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আশা করছে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এবং জনগণ উন্নয়নের প্রতীক নৌকাতেই ভোট দেবে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই বিএনপি প্রার্থীরা আগাম অভিযোগ করে রাখছেন বলে মন্তব্য আওয়ামী লীগের।
এদিকে, তিন সিটির নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া কাজ করছে। ভোটারদের একটা অংশ বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। আবার অন্য অংশ বলছে, একজনের ভোট আরেকজন দিলেও কারও কিছু করার নেই।
রাজশাহী
দুই মেয়র প্রার্থী ধানের শীষের মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং নৌকার প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন একই কেন্দ্রে ভোট দেন। এসময় তাদের সঙ্গে তাদের স্ত্রীরাও উপস্থিত ছিলেন। সোমবার ৩০ জুলাই সকাল ৮টার দিকে উপ-শহর স্যাটেলাইট স্কুল কেন্দ্রেই ভোট দেন তারা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড ৩০টি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০টি। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৮টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ১ হাজার ২৬টি।
নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১৬০ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫২ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রাজশাহী সিটিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ আমিরুল ইসলাম।
পাঁচ মেয়র প্রার্থী হলেন— এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন (নৌকা), মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল (ধানের শীষ), মো. হাবিবুর রহমান (কাঁঠাল), মো. শফিকুল ইসলাম (হাতপাখা) ও অ্যাডভোকেট মুরাদ মুর্শেদ (হাতী)।
সিলেট
সিলেট সিটি নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড ২৭টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৯টি। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন। মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ২৮৮ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৪৪ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৪টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯২৬টি।
নির্বাচনে মেয়র পদে সাত জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১২৭ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৬২ জন নারী কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রিটানিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পাালন করছেন মো. আলিমুজ্জামন।
মেয়রপ্রার্থীরা হলেন— বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান (নৌকা), মো. আরিফুল হক (ধানের শীষ), বদরুজ্জামান সেলিম (বাস), এহসানুল মাহবুব জুবায়ের (টেবিল ঘড়ি), আবু জাফর (মই), এহসানুল হক তাহের (হরিণ) ও ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন (হাতপাখা)।
বরিশাল
বরিশালে সিটি নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড ৩০টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১০টি। নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। নারী ভোটার ১ লাখ ২০ হাজার ৭৩০ জন, পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২১ হাজার ৪৩৬ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১২৩টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ৭৫০টি।
নির্বাচনে মেয়র পদে সাত জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৫ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। এই সিটিতে রিটানিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন মুজিবুর রহমান।
মেয়র প্রার্থীরা হলেন— সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ (নৌকা), মজিবর রহমান সরওয়ার (ধানের শীষ), ডা. মনীষা চক্রবর্তী (মই), মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব (হাতপাখা), অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ (কাস্তে) ও ইকবাল হোসেন (লাঙ্গল)।