ইন্টারনেট ব্যাংকিং প্রসারে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৮-০৭-৩১ ০৯:১৪:৫৩


আর্থিক খাতে পেমেন্ট সিস্টেম বা পরিশোধ পদ্ধতির ব্যাপক আধুনিকায়ন হলেও ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের তুলনায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রসার দ্রুত হয়েছে। ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের প্রসারে ধীরগতির অন্যতম কারণ এ খাতে বিনিয়োগে ব্যাংকগুলোর অনীহা। এখন ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে উদ্যোগ নিয়ে পরিচালনা পর্ষদকে বুঝিয়ে ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তঃসংযোগ লেনদেন ব্যবস্থা দ্রুত চালু করতে হবে। সোমবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার এবং ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশ (এবিবি) যৌথভাবে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্যে পরিশোধ ইকোসিস্টেম নির্মাণ :প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়াশিংটন ডিসির এফটিআই কনসালটিংয়ের পাবলিক পলিসি উপদেষ্টা টম ক্রাফোর্ড। তিনি কিউ আর কোডভিত্তিক মোবাইল আর্থিক সেবা পরিচালনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলার পরামর্শ দেন।

সেমিনারে এশিয়া প্যাসিফিক লিড অ্যাট বেটার দ্যান ক্যাশ অ্যালায়েন্সের প্রতিনিধি ডায়ান্নে রাজারত্নম কয়েকটি দেশের মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের বড় চ্যালেঞ্জ হলো জাতীয় পরিচয়পত্র সত্যায়ন সাপেক্ষে গ্রাহক পরিচয়পত্র সংরক্ষণ করা। বৈঠকের সঞ্চালক পিআই স্ট্র্যাটেজির ম্যানেজিং পার্টনার পিয়াল ইসলাম বলেন, দেশে অনেক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও পরিশোধ পদ্ধতির অনেক অগ্রগতি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক লীলা রশিদ বলেন, ইন্টারনেট ব্যাংকিংই ব্যাংক খাতের ভবিষ্যৎ। তবে অনেক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিষয়টি ভালোভাবে না জানায় এ খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী হচ্ছেন না। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বোঝানোর মাধ্যমে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, দেশের ইলেকট্রনিক পরিশোধ ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানের। বর্তমানে অনেক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যাংকগুলো বিনা খরচে লেনদেনের সুযোগ পাচ্ছে। তবে পর্যাপ্ত প্রচার না থাকায় এসব প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করেন না। সব ই-পেমেন্ট পদ্ধতির আন্তঃসংযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে।

লীলা রশিদ বলেন, দেশে বর্তমানে মোট ৮ কোটি ৭০ লাখ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। অথচ কার্ড রয়েছে মাত্র এক কোটি ৩৫ লাখের মতো। আর পুরোপুরিভাবে এখন ৩০টি ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং রয়েছে। এর মধ্যে আন্তঃসংযোগের আওতায় এসেছে ১৩টি ব্যাংক। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে আন্তঃসংযোগ চালুর চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, বেসরকারি খাতের কোনো প্রতিষ্ঠান এনপিএসবির মতো প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলতে চাইলে কোনো বাধা নেই। তবে অনেক বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় এক্ষেত্রে কেউ আগ্রহী হয় না।

ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের ইলেক্ট্রনিক পেমেন্ট পদ্ধতির বড় চ্যালেঞ্জ অবকাঠামো উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে লেনদেন পরিচালনা করা। সংগঠনটির সাবেক চেয়ারম্যান ও এমটিবির এমডি আনিস এ খান বলেন, পরিশোধ পদ্ধতির উন্নয়নের ফলে গ্রামের মানুষরা দ্রুত টাকা পেয়ে যাচ্ছে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংক যেমন কম খরচে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষদের সেবা দিতে পারছে, তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন বলেন, ডাচ্‌-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং (রকেট) অ্যাকাউন্টগুলোর মূল প্রতিষ্ঠানের হিসাবের সঙ্গে যুক্ত করা হলেও অন্যান্য ব্যাংক এই কাজটি করেনি। দেশের অধিকাংশ ব্যাংকই প্রযুক্তি গ্রহণের জন্য টাকা খরচ করতে আগ্রহী নয়।

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম আধুনিক পরিশোধ পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে আরও বেশি সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে মত দেন। ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি শেহজাদ মুনিম বলেন, বিদেশি উদ্যোক্তাদের লেনদেন সম্পন্ন করতে যত কম ব্যাংকে যেতে হবে ততই ভালো। অ্যামচেমের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম পরিশোধ পদ্ধতিগুলোকে আরও বৈচিত্র্যময় করার তাগিদ দেন। বৈঠকে বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কার্ড সেবা প্রতিষ্ঠান, সরকারি সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশ নেন।