‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে উত্তাল রাজধানীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল। মঙ্গলবার দুপুর থেকে মতিঝিলের কেন্দ্রবিন্দু শাপলা চত্বর ঘেরাও করে নটরডেমের শিক্ষার্থীরা এই স্লোগান দিয়েছেন।
বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় রোববার দুপুর থেকেই উত্তাল ঢাকা শহর। সোমবার ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধের পর মঙ্গলবারও রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক নিজেদের দখলে নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছেন। এ সময় তারা নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ ও ঘাতক বাসচালকের ফাঁসির দাবিতে স্লোগান দেন।
প্রায় কয়েকশ শিক্ষার্থীর সড়ক অবরোধের কারণে শাপলা চত্বরে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে জাগো নিউজের প্রতিবেদক শফিকুল ইসলাম জানান, বিক্ষোভ স্লোগানের এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা একটি বাস ভাঙচুর করেন।
দুপুর ১টা থেকে উত্তরার কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা উত্তরার জসীমউদ্দীন মোড়ে অবরোধ করেন। এ সময় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে তাদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অবরোধের ফলে উত্তরা-বিমানবন্দর সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ ছাড়া রামপুরা ব্রিজেও শিক্ষার্থীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে।
এদিকে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সাইন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন সিটি কলেজ এবং ধানমন্ডি আইডিয়ালসহ বেশ কয়েকটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে মিরপুর রোড, নীলক্ষেত এবং শাহবাগ থেকে সাইন্সল্যাব এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষার্থীদের অবরোধ ভেদ করে একটি বাস সাইন্সল্যাব মোড়ের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এসময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার এরশাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাইন্সল্যাবে হিমাচল পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। ধানমন্ডি থানা থেকে ফোন পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসের আগুন নিয়ন্ত্রণ করে।’
এদিকে বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর ফার্মগেটের সড়কে অবরোধ করেন সরকারী বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা। অবরোধ থেকে নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ, নিরাপদ সড়ক ও ঘাতক বাসের চালকের দ্রুত বিচার ও ফাঁসি দাবি ছাড়াও বেশ কয়েকটি দাবি করা হয়। ফার্মগেট ওভারব্রিজের নীচে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা কারওয়ান বাজার থেকে বিজয় সরণির দুই পাশে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
বেলা সাড়ে ১১টায় মিরপুর-১ নম্বর সড়কে অবস্থান নেন ঢাকা কমার্স কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা দুইটি বাসে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাঙচুর চালান। এ ছাড়াও মিরপুর-১০ নম্বর চত্বরে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।
গত রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। একই ঘটনায় আহত হন আরও ১০/১৫ শিক্ষার্থী।
চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যাওয়া দুই শিক্ষার্থী হলেন- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।
ওই ঘটনায় জাবালে নূরের তিন গাড়ির দুই চালক ও দুই হেলপারকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১। এর আগে নিহত মীমের বাবা ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি
শিক্ষার্থীরা যেসব দাবিতে সড়কে নেমেছে সে দাবিগুলো হলো- নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সকল সংসদীয় কমিটি, মালিক-শ্রমিক ফেডারেশন ও মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ, ক্ষতিগ্রস্ত সকল পরিবারের ন্যায্য দাবি পূরণ, পেশাদার লাইসেন্স প্রদানে স্বচ্ছতা, সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি, বিগত দিনের সকল দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন এলাকায় ওভারব্রিজ, সকল প্রকার দলীয় আচরণ ত্যাগ করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা, পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে সর্বোচ্চ আইন প্রণয়ন, ক্ষতিগ্রস্তদের বাস্তবসম্মত ক্ষতিপূরণ, গাড়ির ফিটনেস ও শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর করা।