দেশের পরিস্থিতি এখন উত্তেজিত। বেপরোয়া গাড়ি চালানোয় প্রথমে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি ও পরে রমিজউদ্দিন বিদ্যালয়ের ছাত্র নিহত হওয়ায় প্রতিবাদ চলছে। প্রতিবাদে শামিল হয়েছে সমাজের প্রায় সব শ্রেণীর মানুষ। অভিভাবক, শিক্ষক, অভিনেতা, ক্রিকেটারসহ সব শ্রেণীর অংশগ্রহণ পরিস্থিতি ক্রমে জটিল করে তুলেছে। সরকার পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার নানা চেষ্টা চালাচ্ছে। পুলিশও চেষ্টা করছে। ছাত্রলীগও চেষ্টা করছে। বাস ড্রাইভার, মালিক সবাই চেষ্টা করছেন কীভাবে বেরিয়ে আসা যায়। আবারো ফেসবুক প্রশ্নের সম্মুখীন। এরই মধ্যে ট্রাম্পের মতোই আমরাও চলছি ফেইক নিউজের খোঁজে।
আলোচনা-সমালোচনাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি ভাগ মূলত বেপরোয়া গাড়ি চালানোর বিপক্ষে। একটি ভাগ আন্দোলনের পক্ষে থেকে ব্যস্ত সরকারকে উদ্ধারের জন্য। একটি ভাগ সুযোগের অপেক্ষায়— নিজেরা পারেনি, এবার শিশুদের কাঁধে ভর করে কী করে ক্ষমতায় আসা যায়। শেষ দুই পক্ষের ডামাডোলে মূলপক্ষ এখন কিংকর্তব্যবিমূঢ়!
অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনকে আমরা সবাই জানি। বহুদিন ধরে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পক্ষে প্রচার ও নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে তিনি এ আন্দোলনকে নিজের করে নিয়েছেন। বুঝতে পেরেছিলেন, রাস্তায় নিরাপদে ভ্রমণ করতে না পারলে দীর্ঘশ্বাসের কোনো সমাপ্তি নেই। বিশিষ্ট শিল্পপতি আবদুল মাতলুব আহ্মাদ (যিনি বাংলাদেশে টাটা গাড়ির পরিবেশক) বহুদিন ধরে বলে আসছেন, ‘একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না।’ গাড়ি ব্যবসায়ীর এমন অনুভূতি তার ব্যবসার প্রতি দায়িত্বশীলতার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বাংলাদেশে ট্রাক ও বাসের একচেটিয়া ব্যবসা টাটার। দুর্ঘটনার একচেটিয়া দায়ও বাস ও ট্রাকচালকদের। তাই তাদের মনে দুর্ঘটনার বার্তা পৌঁছাতে তার এ স্লোগানভিত্তিক প্রচারণা আমাকে সবসময় নাড়া দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের মাঝে সামাজিক দায়িত্ববোধ খুব একটা দেখা যায় না। থাকলে ‘ভেজাল’ শব্দটি থাকত না।
এবারের দুর্ঘটনায় নিহত একজন ছাত্রের বাবা বাসের চালক। আমার ধারণা ছিল, দুর্ঘটনা থেকে দেশের সব ড্রাইভারের মনে অন্তত এ অনুভূতি আসবে যে, দুর্ঘটনার শিকার আমরাও হতে পারি। তারা তাই ছাত্রদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করবেন এবং বলবেন, আজ থেকে আমরা আর বেপরোয়া গাড়ি চালাব না। কিন্তু তা নয়, তারা এখন বেপরোয়া গাড়ি চালানোর লাইসেন্স চাইছেন! রাস্তাঘাটে পুলিশের বদলে ছাত্রদের লাইসেন্স ‘পরীক্ষা’য় তারা বিব্রত, তাই গাড়ি চালাচ্ছেন না। আমার আজকের আলোচনা সড়ক দুর্ঘটনাবিষয়ক। যদি বলেন, এর সঙ্গে অর্থনীতির সম্পর্ক রয়েছে কিনা, তাহলে একটু অপেক্ষা করুন।
প্রথমেই একটি অংক দিই। একটি গাড়ি যদি ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলে, তবে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বের একটি শহরে যেতে ১ ঘণ্টা লাগবে। আর যদি গাড়িটি ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলে, তবে লাগবে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। এ ১৫ মিনিট সময়ের জন্যই একটি জীবনে আসে সারা জীবনের কান্না। কী হয় ১৫ মিনিট পরে গেলে? ঢাকা শহরে এত গতিতে গাড়ি চলে না। গড় গতি ১০-১৫ কিলোমিটার আর কখনো কখনো তা প্রায় ৫ কিলোমিটারে নেমে আসে। তাই উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে যেখানে ১ ঘণ্টা লাগার কথা, সেখানে লাগে ৩ ঘণ্টা। বুঝতেই পারছেন, একটি গাড়ি দিনে প্রায় ৬৭ শতাংশ কর্মক্ষমতা হারায়। অর্থাৎ মালিকের আয় ৬৭ শতাংশ কমে যায়। তাদের আয় কমে গেলে ‘বাস ব্যবসা’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই মালিক সমিতি ঢাকায় একটি বিশেষ ব্যবস্থার আশ্রয় নিয়েছে। প্রথমত. তারা আশ্রয় নিয়েছে ‘সময়’ গণনার। প্রতিটি বাস একটি নির্দিষ্ট জংশন থেকে পরবর্তী জংশনে যেতে তারা বেঁধে দিয়েছেন সময়। এর বেশি সময় লাগলে ড্রাইভারদের জরিমানা হবে। তারা ‘সময়মতো’ পৌঁছতে পারেননি! এ ব্যবস্থায় দায় মালিকের হাত থেকে চলে যায় ড্রাইভারের হাতে। দ্বিতীয়ত. ড্রাইভার এখন বুঝতে পারেন যে, তাদের হয় দক্ষ চালক হতে হবে অথবা রাস্তায় জট তৈরি করতে হবে! অর্থাৎ রাস্তায় জট তৈরি হলে কোনো বাসই নির্দিষ্ট স্থানে সময়মতো পৌঁছতে পারবে না। নিয়ম অনুযায়ী অন্যরাও না পৌঁছতে পারলে বলা যাবে রাস্তায় জট ছিল, তাই জরিমানা প্রযোজ্য হবে না। ফলে ড্রাইভারদের আচরণে যে পরিবর্তনটি লক্ষ করা যাবে তা হলো, একটি গাড়ি অন্য গাড়িকে ঠেকাবে। থামার সময় সামনের গাড়ির সামনে এমনভাবে দাঁড়াবে, সে তো চলবেই না; বরং পেছনের গাড়িও থেমে থাকবে। তৈরি হবে যানজট। অথবা পেছনের কোনো গাড়ি যদি আমার সামনে চলে যায়, তবে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাকে ঠেকাতে হবে। সুতরাং মালিকদের সময় গণনার ফলে হয় যানজট তৈরি হবে নচেৎ রেস। ঢাকার ভেতরের রাস্তায় হবে প্রথমটি, কারণ এখানে রেস করা সম্ভব না। তবে একটু বাইরে যেমন এয়ারপোর্ট রোডে তা হবে রেস।
তৃতীয়ত. কোনো কোনো মালিক একটু বেশি বুদ্ধিমান। তারা বাসচালককে বাস ভাড়া দেন নির্দিষ্ট দৈনিক হারে। এক্ষেত্রে দায় চলে যাবে ড্রাইভারদের কাঁধে। তাদেরকেই বুঝতে হবে কীভাবে তারা আয় করবেন। আয়ের রাস্তা হলো রেস কিংবা প্রতিপক্ষকে ঠেকানো। বুঝতেই পারছেন বেপরোয়া গাড়ি চালানোর মূলে রয়েছে অধিক মুনাফার লোভ। অর্থনীতির ভাষায় এ ‘গেমে’র একটাই পরিণতি— বেপরোয়া গাড়ি চালানো।
আমার গল্প বা অংক যা-ই বলেন না কেন, এখানেই শেষ নয়। ড্রাইভার ও মালিকদের মাঝে থাকে পুলিশ, বিআরটিএ ও সড়ক কর্তৃপক্ষ। তাদের দায়িত্ব ভিন্ন ভিন্ন। দুর্ঘটনার ফলে কারো জীবন গেছে। কারো হাত-পা গেছে। কারো জীবন অচল হয়েছে। তাই দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলে দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই তাদের। তাদের কাজ হলো, খেলার এ পরিণতিকে বদলানোর চেষ্টা করা। ফলে পৃথিবীর সর্বত্র এসব কর্তৃপক্ষ প্রতিটি দুর্ঘটনার পৃথক পৃথক তদন্ত করে।
ট্রাফিক পুলিশের কাজ হলো আইন লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, তার তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। যেমন— ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল কিনা কিংবা গাড়িটির ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল কিনা ইত্যাদি। বিআরটিএ— যারা ড্রাইভারকে লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস দিয়ে থাকে, তাদের দায়িত্ব তদন্ত করে জানা, ড্রাইভারের লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও কেন দুর্ঘটনা ঘটল। লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন কোনো নিয়ম চালুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা তা বোঝা। রাস্তায় সব সাইন ঠিক ছিল কিনা তাও দেখা। নাকি সড়কের সাইনগুলো দলীয় পোস্টারে ঢেকে গেছে তা দেখা। সড়ক কর্তৃপক্ষও তদন্ত করে দেখবে তাদের সড়ক ডিজাইন, ফুটপাত, সাইন ইত্যাদি সঠিক ছিল কিনা। অর্থাৎ দুর্ঘটনা ঘটলে সবাই দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসবে— এটিই আমাদের কাম্য।
আরো রয়েছে বীমা কর্তৃপক্ষ। সব গাড়ি বীমার আওতায়। দুর্ঘটনা ঘটলে আক্রান্তজন বীমার ক্ষতিপূরণ পাবে— এটাই নিয়ম। এজন্যই বাধ্যতামূলক বীমা রয়েছে, যার নাম তৃতীয় পক্ষ বীমা। অর্থাৎ গাড়ির মালিক, ড্রাইভার বাদে তৃতীয় পক্ষ এ বীমার আওতায় রয়েছে। আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন, কখনো কি শুনেছেন যে বীমা কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণে এগিয়ে এসেছে? যে কয়েকটি দুর্ঘটনা দিয়ে এ আন্দোলনের সূত্রপাত, যেখানে প্রধানমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ দিতে এগিয়ে এসেছেন, সেখানে সরকারের আইনের আওতায় সৃষ্ট বীমা কর্তৃপক্ষ কী করেছে? যত ক্ষুদ্রই হোক না এ ক্ষতিপূরণের অংক, তাদের দায়িত্ব প্রতিটি দুর্ঘটনার পর ক্ষতিপূরণের অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা। তা না করতে পারলে এ বীমার প্রয়োজন নেই।
এ তো গেল নিয়মকানুনের কথা। তাহলে সবাই ব্যর্থ হলো কেন? কেন ট্রাফিক পুলিশের নিজেরই লাইসেন্স নেই। কেন মন্ত্রীদের গাড়ির ড্রাইভারের কাগজপত্র ঠিক থাকে না? কেন বেপরোয়া বাসের চালক নিশ্চিন্তে গাড়ি চালান? কেন ঢাকায় শত শত ট্রাফিক লাইট চালু থাকার পরও পুলিশ হাত তুলে গাড়ি থামায়? কেন লাইসেন্সবিহীন গাড়ি বা ড্রাইভার রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলতে পারে? আমাদের এর উত্তর খোঁজা দরকার। জানি আপনারা হাসছেন, সবাই জানে। সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতিগ্রস্ত। সরকারের প্রতিটি বিভাগ দুর্নীতির আস্তানা! শুনতে খারাপ শোনালেও তা সত্য। এর মধ্যেও কিন্তু অনেক সৎ ও একনিষ্ঠ সরকারি কর্মচারী-কর্মকর্তা রয়েছেন। তারা কোণঠাসা! অসহায়! হতাশ! নাকি মনোবলহীন!
বহুদিন আগের একটি ঘটনা। ১৯৯৭ সাল। ঢাকায় বহুতল ভবন বাড়ছে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় শহরের পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে একটি কমিটি গঠন করেছিল। অনেকের মধ্যে আমাকেও কমিটিতে দাওয়াত দিয়েছিলেন তত্কালীন বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী। কমিটির সভায় ঢাকা ওয়াসা জানাল, তারা পানি দিতে পারবে না। তাই ঢাকায় বহুতল ভবনের আর কোনো ছাড়পত্র তারা দিতে চায় না। সভায় প্রশ্ন করলাম— ঢাকার জনসংখ্যা বাড়ছে, অর্থনীতি বড় হচ্ছে, সব সংবাদই সবাই জানে। পরিসংখ্যান ব্যুরো তা নিয়মিত প্রকাশও করছে। তা জানা সত্ত্বেও ওয়াসা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে আজ সব দায় জনগণের ওপর দিচ্ছে কেন? আমার মতে, প্রথমে ওয়াসাকে দায়িত্বে ব্যর্থতার দায়ে বন্ধ করা উচিত। তারপর আমরা অন্য ব্যবস্থা নিতে পারি। কথাটি বললাম এ কারণে যে, আমরা আমাদের সংবিধিবদ্ধ সংস্থাকে দায়বদ্ধ করছি না। নিশ্চয়ই তারও কারণ আছে! একসময় বলা হতো সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কম, তাই তারা দুর্নীতিগ্রস্ত (অবিশ্বাস্য যুক্তি)! তাহলে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন হওয়ার পরও দুর্নীতি কেন রয়ে গেল? আমাদের কি উচিত নয় বেতন স্কেলকে আগের জায়গায় ফিরিয়ে নেয়া?
সরকারের প্রতিটি সংস্থার এ করুণ পরিণতি দেশকে ক্রমে ধ্বংস করে দিতে পারে, তা অনুধাবন করা উচিত। কেউ কেউ বলেন, সরকারের সব দুর্নীতি এখন সড়ক খাতে। মালিক কিংবা ড্রাইভার বলে থাকেন, সড়কে চলে চাঁদাবাজি। কেউ বলেন না, কেন তারা বেআইনি কাজ করেন।
আবারো আশ্রয় নিই অর্থনৈতিক গেম থিওরিতে। কেন এসব কর্তৃপক্ষ তাদের কাজ করছে না! তাদের স্বার্থ কোথায়? সহজ উত্তর— দুর্নীতি। কিন্তু কী ধরনের দুর্নীতি? বহুদিন আগে এক রাজনীতিবিদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। সড়ক বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জানা গেল, কোনো এক বাস কোম্পানিতে তারও বাস রয়েছে। জিজ্ঞেস করলাম— কী করে সম্ভব? এটা তো অমুকের কোম্পানি! জানালেন, সত্যি। তবে কোম্পানিতে নানাজন বাস দিয়ে থাকে। ফলে বাসের মূল মালিক আর কোম্পানির মালিক এক নয়। কোম্পানির লাভ, কারণ তাতে তার কোম্পানি বড় হয়। অল্প বিনিয়োগে বা অন্যের বিনিয়োগে তার কোম্পানি বড় হয়ে যায়। প্রতিটি বাসের লাভ চলে যায় বাসের মূল মালিকের হাতে। আমার চোখ খুলে গেল! এমন ব্যবস্থা কি সম্ভব? তিনি জানালেন সম্ভব, কারণ তারা জানেন যে সঠিক অংকে আমাদের লাভ না দিলে তারই ক্ষতি হবে। তাহলে কি সব কোম্পানিতেই এ ব্যবস্থা আছে? তিনি বললেন, অবশ্যই। অধিকাংশে রয়েছে, নচেৎ এত তাড়াতাড়ি তারা বড় হয় কী করে? কারা এসব বিনিয়োগকারী? শুধুই কি রাজনীতিবিদ? না তা নয়, অনেকেই রয়েছে। পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তা, যারা দুর্নীতির টাকা ব্যাংকে রাখতে ভয় পান, তারা তাদের অর্থ এসব বা অন্য অনেক ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন।
বসে বসে অংক করতে লাগলাম! মনে করুন আমি একজন সরকারি কর্মকর্তা— আমি কি বাস কিংবা ট্রাকে বিনিয়োগ করব? আমার মন বলল, না তা করব না। কারণ বাস বা ট্রাক কোম্পানিকে আমি কেন বিশ্বাস করব? তারাই বা আমার কথা শুনবে কেন বা বিশ্বস্ত থাকবে কেন? তবে হ্যাঁ, আমি যদি পুলিশ, বিআরটিএ কর্মকর্তা হই, তবে ওরা আমার কথা শুনবে। গল্প করতে করতে জানলাম যে, বাস বা ট্রাকের ব্যবসায় এদেরই প্রাধান্য।
এবার আসুন আমার গেম থিওরিতে। আমি যদি বেপরোয়া গাড়িচালক নিয়ন্ত্রণ করি, তবে এ ব্যবসায় লাভ কমে যাবে। আমি যদি নিয়মিত দায়িত্ব পালন করি, তবে আমারই আয় কমে যাবে। তাই আমি কী করব? চেষ্টা করব দায়িত্বে অবহেলা করার। তবে শতভাগ নয়। তাই আমি অবশ্যই নিয়মিত ফাইন আদায় করব। আমার খাতায় দেখা যাবে আমাদের জরিমানা আদায়ের অংক ক্রমাগত বড় হচ্ছে। সমাজ বাহবা দেবে। কারণ আমরা প্রতি বছর বেশি বেশি করে জরিমানা আদায় করছি! কখনো কি ভেবেছেন, যদি ঢাকায় প্রতি বছর ২০ শতাংশ হারে গাড়ি বেড়ে থাকে, তবে প্রতি বছর কত হারে জরিমানা আয় করলে আমি আমার সততার পরীক্ষায় পাস করব? আমার মতে, প্রতি বছর ন্যূনতম ৫০ শতাংশ হারে তা বাড়াতেই হবে। পুলিশ তা করতে না পারলে ভাবতে হবে প্রতিনিয়ত বেআইনি কার্যক্রম বাড়ছেই।
লেখক: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং পরিচালক, এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট