দেশে নতুন ব্র্যান্ডের স্বল্পমূল্যের কম্পিউটার তৈরি করছে ডেটাসফট সিস্টেম লিমিটেড। ব্র্যান্ড নাম ‘তালপাতা’ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি গাজীপুরের কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে তৈরি করেছে কম্পিউটারটি। ‘তালপাতা ক’ ও ‘তালপাতা ব’ নামের দুটি ল্যাপটপ পরীক্ষামূলক তৈরি ও ব্যবহার করছে প্রতিষ্ঠানটি। সফল হলে বছরের শেষেই চূড়ান্ত ও বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে প্রতিষ্ঠানটি।
২ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া ল্যাপটপ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ৩১ জুলাই আমি কালিয়াকৈরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে ছিলাম। সেখানে ডাটাসফটের জামান ভাই (মাহবুব জামান) আমাকে একটা ল্যাপটপ দেখাচ্ছিলেন। আমি মুগ্ধ হয়ে সেটি দেখছিলাম, ল্যাপটপটির নাম তালপাতা। এই ব্র্যান্ডটি বাজারে আসবে; আপনাদের কম্পিটেটর বাজারে আসতে যাচ্ছে।’
ল্যাপটপটি দেখে মুগ্ধ হওয়ার কারণ হিসেবে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘এটি ওয়াটারপ্রুফ এবং আপনি চাইলে এটি ফেলে দিতে পারবেন, ভেঙে যাবে না। এ ল্যাপটপটি ট্যাব হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। আমি জামান ভাইকে প্রশ্ন করলাম, এই ল্যাপটপের দাম কত হবে? তিনি আমাকে বললেন, ১০ হাজার টাকার কাছাকাছি। আমার মনে হল আমাদের সম্ভাবনা বাড়ছে। কারণ এত কম দামে একটি ডিভাইসে এত কিছু থাকছে।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানুফ্যাকচারিং ও অ্যাসেম্বিং ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন হাসান রহমান বলেন, ডেটাসফট আরএনডি করে একটি কম্পিউটার ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে শুরু করেছে। যেখানে ইতিমধ্যে দুটি মডেলের ল্যাপটপ তৈরি করা হয়েছে।
এ দুটি মডেলের একটি শিক্ষার্থীদের জন্য। আরেকটি ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের জন্য। ‘তালপাতা ক’ ডিভাইসটি তৈরি করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ করে। এ জন্য এর দামও রাখা হবে একেবারে হাতের নাগালে। ‘তালপাতা ব’ ব্যবসায়িক ব্যবহারের জন্য উপযোগী হবে বলে জানান রতন হাসান। রতন হাসান বলেন, আমাদের টার্গেট গ্রামবাংলার লোকজন। যারা একটি স্মার্টফোনের দামে কম্পিউটার কিনতে পারেন, তবে সুবিধা পান তার কয়েকগুণ বেশি। এ জন্য তালপাতা যেন সৌর বিদ্যুতে চলে সে চেষ্টা করা হয়েছে। ধুলাবালি এবং পানি নিরোধী রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আর এটি নির্দিষ্ট উচ্চতা থেকে পড়লেও ভাঙবে না। ডিভাইসটি তৈরিতে অনেকদিনই সময় নিয়েছে ডেটাসফট।
তাদের লক্ষ্য ছিল স্বল্পমূল্যের কিন্তু শক্তিশালী ডিভাইস তৈরি করা। এখন যে ডিভাইসগুলো পরীক্ষামূলক চলছে সেগুলো তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ দেয়। আমরা বেশকিছু প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের এটি ব্যবহার করতে দিয়েছি। তাদের বলা হয়েছে এর ল্যাকিংসগুলো জানাতে। সেগুলো আমরা দ্বিতীয় ধাপে উন্নয়ন করব। তখন এর ব্যাটারি ব্যাকআপ ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। বলেন রতন হাসান। নতুন এ কম্পিউটার ব্র্যান্ডটি চলতি বছরেই বাণিজ্যিক উৎপাদন করার কথা জানিয়ে রতন হাসান বলেন, আমরা ব্যবহারকারীদের থেকে যে ফিডব্যাপ পাব সেগুলো নিয়ে চলতি বছরের শেষ দিকেই বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাব।
আশা করছি চলতি বছরের বিজয় দিবসে এটি উদ্বোধন করা যাবে। বাণিজ্যিক উৎপাদনে গেলে ‘তালপাতা ক’ শিক্ষার্থীদের হাতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মধ্যে দেয়া সম্ভব হবে। এ ছাড়াও ‘তালপাতা ব’ একই দামে বিক্রি করা যাবে বলে জানান রতন হাসান। রতন হাসান বলেন, এমন একটি প্রকল্পে সরকারের সহায়তা দরকার। শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এমন বড় প্রকল্প নিয়ে এগোনো সম্ভব হয় না। আমরা অবশ্য সরকারের কাছ থেকে সহায়তার আশ্বাস পেয়েছি।