নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় পরিবেশ পদক-২০১৮ পেলো দেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন গ্রপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। চলতি বছর ‘পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ’ ক্যাটাগরীতে এই পদক পেলো ওয়ালটন।
আজ বুধবার (১৮ জুলাই, ২০১৮) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় পরিবেশ পদক তুলে দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান এসএম শামসুল আলম। এসময় উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটন গ্রæপের পরিচালক এসএম মাহবুবুল আলম, নির্বাহী পরিচালক ইভা রিজওয়ানা, আশরাফুল আম্বিয়া ও অপারেটিভ ডিরেক্টর শরীফ হারুনুর রশীদ সনিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এ বছর তিন ক্যাটাগরিতে মোট চার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয়েছে জাতীয় পরিবেশ পদক। ‘পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ’ ক্যাটাগরিতে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের সঙ্গে যৌথভাবে পুরস্কারটি পেয়েছে কুষ্টিয়া পৌরসভা। এছাড়া ‘পরিবেশবিষয়ক শিক্ষা ও প্রচার’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাটার ফ্লাই পার্ক, ‘পরিবেশবিষয়ক গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন’ ক্যাটাগরিতে পদক পেয়েছেন হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম। পদক প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের হাতে ২১ ক্যারেট মানের দুই তোলা ওজনের স্বর্ণের সমপরিমাণ অর্থ এবং ৫০ হাজার টাকার চেক, ক্রেস্ট ও সনদপত্র তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সারা দেশে ৩০ লাখ গাছের চারা লাগানোর ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় জাতীয় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার এবারের প্রতিপাদ্য ‘সবুজে বাঁচি, সবুজ বাঁচাই; নগর-প্রাণ-প্রকৃতি সাজাই’।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বৃক্ষ আমাদের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ নৈসর্গিক শোভা বর্ধনে বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম।’
জাতীয় পরিবেশ পদক প্রাপ্তির প্রতিক্রিয়ায় ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান এসএম শামসুল আলম বলেন, ওয়ালটন বিশ্বাস করে ‘সবুজ এবং বাংলাদেশ’ একে অপরের সমার্থক। সবুজ বাংলাদেশের চিত্র বুকে ধারণ করে সকল পর্যায়ে পরিবেশ ও জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছে ওয়ালটন।
তিনি জানান, ওয়ালটন কারখানার মোট আয়তনের অন্তত ৪০ শতাংশ রাখা হয়েছে গ্রিন জোন হিসেবে। যেখানে রয়েছে লেক এবং খেলার মাঠ। পরিবেশ সুরক্ষা ও বর্জ্য পরিশোধনের ব্যাপারে শতভাগ আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করছে ওয়ালটন।
উল্লেখ্য, ওয়ালটন কারখানায় প্রতি ঘন্টায় ২০ ঘনমিটার শোধন ক্ষমতার একটি ইটিপি বা ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমোদিত বিদ্যমান ইটিপি জিরো ডিসচার্জ প্লান্টের মাধ্যমে দৈনিক ৪৩২ ঘনমিটার পানি পুনর্ব্যবহার করা হচ্ছে। ঘন্টায় ৩০ ঘনমিটার পানি পরিশোধণ ক্ষমতার আরেকটি ইটিপি স্থাপনের কাজ চলছে।
কারখানায় নিজস্ব এনভায়রনমেন্ট, হেলথ এবং সেফটি নীতিমালার আলোকে রয়েছে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পরিবেশ-বান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা। কর্মীরা কাজ করেন মনোরম ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে। প্রতিটি উৎপাদন ইউনিটেই প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে পরিবেশকে। রয়েছে সুবজ সুশোভিত পরিচ্ছন্ন প্রশস্ত রাস্তা।
ওয়ালটন সূত্রমতে, বাংলাদেশে ওয়ালটনই সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ ঈঋঈ, ঐঈঋঈ গ্যাস মুক্ত এবং পরিবেশ বান্ধব ঈুপষড়ঢ়বহঃধহব (সি-৫) গ্যাস ব্যবহার করে চড়ষুঁৎবঃযধহব ঋড়ধসরহম প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রতিটি রেফ্রিজারেটর উৎপাদন করে আসছে। ওয়ালটন রেফ্রিজারেটরে ব্যবহৃত হয় ঐুফৎড়পধৎনড়হ জ৬০০ধ রেফ্রিজারেন্ট, যা পরিবেশবান্ধব এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এছাড়াও ওয়ালটন ফ্রিজে ব্যবহৃত হচ্ছে ইন্টেলিজেন্ট ইনভার্টার প্রযুক্তির কম্প্রেসার। ফলে, ওয়ালটন ফ্রিজে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। ওয়ালটন পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং ইউএনডিপি-বাংলাদেশ এর সহায়তায় ঈুপষড়ঢ়বহঃধহব ধহফ জ৬০০ধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেশ ও দেশের বাইরে পরিবেশ বান্ধাব ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী পণ্য সরবরাহ করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
শুরু থেকেই শতভাগ কমপ্লায়ান্স মেনে চলছে ওয়ালটন। উচ্চমানসম্পন্ন পণ্য ও সেবা প্রদানের জন্য ওয়ালটন আইএসও ৯০০১:২০১৫ এবং আইএসও ১৪০০১:২০১৫ সনদ পেয়েছে। নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করায় ওএইচএসএএস ১৮০০১:২০০৭ সনদ অর্জন করেছে। ওয়ালটনের সফলতা নিয়ে ইউরোপ আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের বিবেচনায় শিল্পায়নের সাকসেসফুল মডেল হিসেবে স্থান পেয়েছে ওয়ালটন।