হালাল পণ্য উৎপাদনের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল: বিডা’র চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক আপডেট: ২০১৮-১২-০৯ ১৫:০০:৫৩


হালাল পণ্য উৎপাদনের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্ধ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০ ভাগই মুসলমান, যার ফলে হালাল পণ্য উৎপাদান ও রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বলেও মসে করেন তিনি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত “হালাল সনদের মানদ- এবং প্রতিবন্ধকতাঃ বাংলাদেশের সম্ভাবনা” শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন। গতকাল ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,বাংলাদেশে নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ আল-মেহেরি।
কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমান বিশ্বে হালাল বিষয়টি শুধুমাত্র খাদ্য পণ্যের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের সাথেও জড়িত। তিনি জানান, আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো, রপ্তানি পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ এবং আরও অধিক হারে জনগনের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে হালাল পণ্য উৎপাদনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই অঞ্চলে হালাল পণ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে।
বিডা’র চেয়ারম্যান বলেন, হালাল খাদ্য মানুষের জীবন ধারণের জন্য অত্যন্ত নিরাপদ। যা মুসলমানদের পাশাপাশি অমুসলিমরাও গ্রহণ করে থাকে। ফলে এ ধরনের পণ্যের সম্ভাবনা পৃথিবীর সকল দেশেই রয়েছে। তিনি হালাল পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, এর সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদান এবং জনবলের দক্ষতা বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন। সর্বোপরি হালাল পণ্য সম্প্রসারণের জন্য সরকারের পক্ষ হতে সর্বাতœক নীতিগত সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।

স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস বাংলাদেশ আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ২৮তম এবং ২০৫০ সালে ২৩তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়ার পূর্বভাস প্রদান করেছে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকা- বিস্তৃত করার কোন বিকল্প নেই। তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় মুসলিম অধ্যুষিত দেশ।যার ফলে আমাদের দেশে হালাল পণ্য উৎপাদন ও সারা বিশ্বে এধরনের পণ্যের বাজারজাতকরণের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। তিনি আরও জানান, বর্তমানে বৈশ্বিক ইসলামিক বাজার মূল্য প্রায় ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা পৃথিবীর মোট খরচের প্রায় ১১.৯ শতাংশ। এখান থেকে অনুমান করা যায়, সারা বিশ্বে হালাল পণ্যের বেশ চাহিদা রয়েছে ও প্রতিনিয়ত তা বাড়ছে। ডিসিসিআই’র সভাপতি বলেন, পৃথিবী জুড়ে হালাল পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং থাইল্যান্ড এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু মুসলিম প্রধান দেশ হিসেবেও আমরা ভালো অবস্থানে যেতে পারিনি। তিনি বাংলাদেশে হালাল পণ্যে উৎপাদন কে আরো জনপ্রিয় ও এখাতের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও সহযোগিতা প্রদান, দক্ষ জনবল তৈরি এবং প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা উন্নয়ন, হালাল সনদ প্রদানের প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং অবকাঠামো উন্নয়নে স্বল্পসুদে আর্থিক প্রণোদনা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
রাষ্ট্রদূত সাইদ মোহাম্মদ সাইদ বলেন, মুসলিম প্রধান দেশগুলোর পাশাপাশি অমুসলিম জনবহুল দেশগুলোতে হালাল পণ্যের চাহিদা ও ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধির ফলে হালাল পণ্য উৎপাদনের বিষয়টি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে। তিনি জানান, ট্রান্সপারেন্সি মার্কেট রিসার্চ এর হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সারা পৃথিবীতে হালাল পণ্যের বাজার মূল্য ছিল প্রায় ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৪ সালে এটি প্রায় ১০.৫১ ট্রিলিয়নে এসে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি দেশে শুধুমাত্র মাংস রপ্তানি করছে, এবং বিশেষকরে গো-খাদ্যে যেন কোনভাবেই ক্ষতিকারক রাসায়নিক অথবা ঔষধ ব্যবহার কার না হয় সেদিকে আরো যতœবান হওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের হালাল পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি বাড়াতে হলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন, হালাল সনদ প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নের কোন বিকল্প নেই। তিনি আরোও জানান, তাঁর দেশ এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত আরো বেশি হারে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। সেমিনারে দুবাই ভিত্তিক প্রতিষ্ঠা আরএসিএস কোয়ালিটি সার্টিফিকেটস ইস্যুয়িং সার্ভিসেস এলএলসির বিক্রয় ও বিপনন বিভাগের প্রধান ওসামা ইমাম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ডিসিসিআই এর পরিচালক এস এম জিল্লুর রহমান, ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী, সাবেক ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম, এম এস সেকিল চৌধুরী এবং আহবায়ক এম এস সিদ্দিকী।