কর্মক্ষেত্রে সততার নিদর্শন, শৃঙ্খলাবোধ, পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতার পুরস্কার পাবেন দেশের ব্যাংকাররা। সব ব্যাংক নিজ নিজ উদ্যোগে প্রতি বছর ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে এ পুরস্কারের জন্য যোগ্যদের নির্বাচিত করবে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতরা সার্টিফিকেটের পাশাপাশি এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পাবেন। এসব নির্দেশনাসহ গতকাল ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান নীতিমালা’ জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আবু ফরাহ মো. নাছের স্বাক্ষরিত এ সার্কুলারের কপি দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার ২০১২ সালে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল’ প্রণয়ন করে। ওই শুদ্ধাচার কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি ইংরেজি পঞ্জিকাবর্ষে এ পুরস্কার প্রদান করতে হবে বলে সার্কুলারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। চলতি বছর থেকেই এ নির্দেশ কার্যকর হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে পাঁচটি ধাপে পুরস্কার দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী থেকে পরবর্তী নিম্নতর দুই ধাপের কর্মকর্তা, চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ ধাপের কর্মকর্তা ও সপ্তম থেকে পরবর্তী নিম্নতর ধাপের কর্মকর্তারা পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবেন। এছাড়া এ শ্রেণীর ব্যাংকগুলোর শাখা ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীরাও দুটি ধাপে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হতে পারবেন।
বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাহী থেকে পরবর্তী তিন ধাপের কর্মকর্তা, পঞ্চম থেকে সপ্তম ধাপের কর্মকর্তা, অষ্টম থেকে পরবর্তী ধাপের কর্মকর্তারা পুরস্কার পাবেন। একইভাবে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক ও কর্মচারীরাও পুরস্কার পাবেন। কর্মচারী বলতে পিয়ন, মেসেঞ্জার, দারোয়ান, গার্ডসহ ব্যাংকে চাকরিরত অন্য সব কর্মচারীকে বোঝাবে।
পুরস্কারের জন্য ২০টি সূচকে মোট ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচন করতে হবে। সূচকগুলো হলো— পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা, সততার নিদর্শন, নির্ভরযোগ্যতা ও কর্তব্যনিষ্ঠা, শৃঙ্খলাবোধ, সহকর্মীদের সঙ্গে আচরণ, সেবাগ্রহীতার সঙ্গে আচরণ, প্রতিষ্ঠানের বিধিবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, সমন্বয় ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতা, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শিতা, পেশাগত, স্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক নিরাপত্তা সচেতনতা, প্রতিষ্ঠানের প্রতি অঙ্গীকার, উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা চর্চা, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নে তত্পরতা, সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার, তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা, উপস্থাপন দক্ষতা, প্রতিষ্ঠানের আধুনিকায়নে আগ্রহ, অভিযোগ প্রতিকারে সহযোগিতা, সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধানাবলি সম্পর্কে আগ্রহ ও পরিপালনে দক্ষতা এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ধার্যকৃত অন্যান্য কার্যক্রম। প্রতিটি সূচকে ৫ নম্বর করে মোট ২০টি সূচকে ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে ব্যাংক কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে।
ন্যূনতম তিন বছর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে কর্মরত থাকলেই কেবল পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য কেউ বিবেচিত হবেন। পুরস্কার প্রাপ্তির অন্য যোগ্যতা প্রসঙ্গে নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০টি সূচকে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত ব্যক্তিই পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হবেন। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ন্যূনতম ৮০ নম্বর না পেলে তিনি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবেন না। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী একবার পুরস্কৃত হওয়ার পর পরবর্তী তিন বছর পুনরায় পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবেন না। নিজ নিজ ব্যাংকের বাছাই কমিটি পুরস্কারের জন্য কর্মীদের নির্বাচিত করবেন।