খেলাপি ঋণের হার বাংলাদেশেই বেশি 

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-০৮-১৪ ২০:৩৬:৪৫


দেশের ব্যাংকিং খাতে ভয়াবহ জাল-জালিয়াতির কারণে বড় অঙ্কের টাকা বেরিয়ে গেছে। বাণিজ্যের নামে বিদেশে পাচার হয়েছে অনেক টাকা। এসব টাকা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। ঋণ হিসেবে বের করে নেয়া ওই সব অর্থ এখন খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। যার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এ হার বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক দেশের তুলনায় খেলাপি ঋণের হার এখন বাংলাদেশেই বেশি।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। মার্চে এসে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপি ঋণের হার ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। পরিমাণে বেড়েছে ১৪ হাজার ২৮৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৮ হাজার ৫৮৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৩০৩ কোটি ১১ লাখ টাকা। এছাড়া অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
এসব মিলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে অবশোর ব্যাংকিং ইউনিট, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের হার লাগামহীনভাবে বাড়লেও অন্যান্য দেশে এ হার কমছে। এর মধ্যে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১ দশমিক ৬ শতাংশ, ফিলিপাইনে ১ দশমিক ৯ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ, শ্রীলংকায় ২ দশমিক ৬ শতাংশ, নেপালে ২ শতাংশ, ভারতে ৯.২ শতাংশ।
সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের তথ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি একটি প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্য সুত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দেশের তুলনায় খেলাপি ঋণের হার বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। আগে এ হার আরও বেশি ছিল। খেলাপি ঋণ অবলোপনে (মূল হিসাব থেকে আলাদা করে রাখা) এ হার কমেছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং খাতে জালিয়াতি বেড়ে যাওয়ার কারণে খেলাপি ঋণের হারও বেড়ে গেছে। এর আগে এ হার ৭ শতাংশের মধ্যে নেমে এসেছিল।
গত তিন বছরে কয়েকটি ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ভয়ানকভাবে বেড়ে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বেসিক ব্যাংকে। আগে এ ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৩ শতাংশের নিচে। এখন তা বেড়ে ৫৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। যার পরিমাণে প্রায় ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
সোনালী ব্যাংকের প্রায় ৩৯ শতাংশ খেলাপি ঋণ। পরিমাণে প্রায় ১৪ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের ৯ হাজার ৭০৩ কোটি টাকা খেলাপি, যা মোট ঋণের প্রায় সাড়ে ২২ শতাংশ। এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে সার্বিকভাবে বাংলাদেশ এ খাতে শীর্ষে ওঠে এসেছে।