কোন মিউচ্যুয়াল ফান্ডে লাভ বেশি!

পুঁজিবাজার ডেস্ক আপডেট: ২০১৮-০৮-১৮ ১৯:১৪:২৩


বিশ্বের সবখানে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকে নিরাপদ বলে মনে করা হয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে সাধারণ মানুষ মিউচ্যুয়াল ফান্ডে অনেক বেশি বিনিয়োগ করেন। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ওপর এখনও বিনিয়োগকারীদের আস্থা আসেনি। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইক্যুইটি শেয়ারের মতো মিউচ্যুয়াল ফান্ডে ক্লিয়ার ধারণা এবং ফান্ড ম্যানেজারদের স্বচ্ছতা বাড়লে এই খাতেও আস্থা আসবে।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড কি?
কালেক্টিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা মিউচ্যুয়াল ফান্ড হচ্ছে এক ধরণের বিনিয়োগ, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে ইউনিট বিক্রির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান শেয়ার, বন্ড, ঋণপত্র, এফডিআর ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করে। এই একত্রিত বিনিয়োগকে বিনিয়োগযোগ্য দলিলে রূপান্তর করে। যা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের পোর্টফোলিও নামে পরিচিত। প্রতিটি ইউনিটের বিনিয়োগকারী ওই ফান্ডের মালিকানার অংশ প্রাপ্য হয়, সেই অনুযায়ী আয়ও পেয়ে থাকে।
তবে আরও সহজভাবে বলতে গেলে ধরুন, আপনি পুঁজিবাজারে টাকা খাটাতে চান। অথচ কোন শেয়ারে কখন কত টাকা খাটাবেন, তা নিয়ে আপনার কোন ধারণা নেই। এক্ষেত্রে সোজা উপায় হল, মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে টাকা তুলে সেই টাকা দিয়ে যখন একসঙ্গে প্রচুর শেয়ার কেনা হয়, তাকে বলে মিউচ্যুয়াল ফান্ড স্কিম।
তাই মিউচ্যুয়াল ফান্ড কোনো কোম্পানির শেয়ার নয় এবং এর আয় নির্ভর করে অর্থ বাজার ও শেয়ারবাজারের ওঠানামার উপর। এ বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি তার খরচ বাদ দিয়ে উদ্যোক্তা ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে লভ্যাংশ হিসেবে ভাগ করে দেয়।
মিউচ্যুয়াল ফান্ডের প্রকার:
প্রত্যেক তহবিলের একটি পূর্ব পরিকল্পিত বিনিয়োগের উদ্দেশ্য থাকে। যেমন আয়ের প্রত্যাশা, সম্পদের সুরক্ষা, ঝুঁকি ইত্যাদি। যার ওপর নির্ভর করে তহবিলের সম্পদ ব্যবস্থাপনা করা হয়। বিনিয়োগের এসব বিবেচনা করে সম্পদ ব্যবস্থাপক ৩ ধরনের তহবিল গঠন করে থাকে।
# ইক্যুইটি ফান্ড।
# ফিক্সড ইনকাম ফান্ড।
# ইনডেক্স ফান্ড।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড মূলত ২ প্রকার। মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বে-মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড:
এ ফান্ডের নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে, প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়। মেয়াদ শেষে যা অবশিষ্ট থাকবে তা বিতরণ করে এর ফান্ড বিলুপ্ত হয়। তবে এই ফান্ডে যখন ইচ্ছা টাকা তোলা যাবে না। তালিকাভুক্ত মেয়াদি ফান্ড থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে হলে সেকেন্ডারি মার্কেটে ইউনিটের বাজার মূল্যই ভরসা। বাজার মূল্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীরা ইউনিটের লেনদেন করতে পারেন।
বে-মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড:
বে-মেয়াদি ফান্ড স্বাধীনভাবে চাহিদার ওপর নতুন ইউনিট ইস্যু করতে পারে কিংবা ইউনিট পুনঃক্রয় করে কমিয়ে দিতে পারে। এই ধরণের মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন করা হয় নেট সম্পদ মূল্যের ওপর। এটা কখনও বিলুপ্তি হয় না।
 মেয়াদি বা ক্লোজ-এন্ড ফান্ডের কিছু বৈশিষ্ট্য:
১। এই ফান্ডে তহবিল খাটে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য।বাংলাদেশে এই ধরণের ফান্ডগুলোর মেয়াদ সাধারণত ১০ বছরের হয়।
২। মেয়াদ পূর্ণ হলে ফান্ডের অবসায়ন ঘটানো হয়। তবে সেটা নির্ভর করে অধিকাংশ ইউনিটহোল্ডারদের সিদ্ধান্তের ওপর। এর মধ্যে হিসাব বছর শেষে ট্রাস্টি ইউনিটহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
৩। সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করে।
৪। পুঁজিবাজারের মাধ্যমেই ইউনিট লেনদেন করা যায়। এতে অনেক সময় এনএভি থেকে অনেক কম মূল্য লেনদেন হয় মার্কেটে। তাতে লোকসান হয় বিনিয়োগকারীদের।
৫। মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড মেয়াদ শেষে ওপেন এন্ড ফান্ডে রূপান্তরিত হয়। তবে সেটা নির্ভর করে অধিকাংশ ইউনিটহোল্ডারদের সিদ্ধান্তের ওপর।
 বে-মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বৈশিষ্ট্য:
১। এই ফান্ডে তহবিলের মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকে না। ইউনিট সংখ্যারও কোনো নির্দিষ্টতা থাকে না।
২। বে-মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয় না।
৩। বে-মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লিক্যইডেশন কম হয়ে থাকে। কার্যদিবস শেষে প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) হিসাব করা হয়।তবে বাংলাদেশে সপ্তাহে একবার প্রকৃত সম্পদ মূল্য (এনএভি) হিসাব করা হয়।
৪। এই ধরণের ফান্ডে ক্যাশ রিজার্ভের প্রয়োজন রয়েছে।
৫। বে-মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড এনএভি অনুযায়ী বিক্রি করা যায়।