পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ব্যাংকিং চ্যানেলে নগদ লেনদেন হয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে দৈনিক ভিত্তিতে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে নগদ লেনদেন (কলমানি মার্কেট) হয় প্রায় এক লাখ কোটি টাকা।
এছাড়া নতুন টাকা বিনিময় ১৭ হাজার কোটি টাকা, রেমিটেন্স আহরণ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ডলার বিক্রি ২ হাজার কোটি টাকা, এটিএম বুথে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকাসহ অন্যান্য মাধ্যমে প্রায় আরও অর্ধলাখ কোটি টাকা নগদ লেনদেন হয়।
কলমানি মার্কেটে লেনদেন ৯৯ হাজার কোটি টাকা :
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ঈদে কলমানি মার্কেটে ৯৮ হাজার ৯২২ কোটি টাকার নগদ লেনদেন হয়েছে। ১-১৯ আগস্ট ১৪ কার্যদিবসে এসব লেনদেন হয়। এবার সর্বনিু সুদে এ লেনদেন হয়। প্রায় এক লাখ কোটি টাকা লেনদেন হয় মাত্র ২-৪ শতাংশ সুদে।
নতুন টাকা বিনিময় ১৭ হাজার কোটি টাকা : ঈদ উপলক্ষে ১৩-২০ আগস্ট পর্যন্ত ১৭ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বিনিময় করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ১৪টি শাখা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদে ১৭ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট বদলে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়াও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ১৪টি শাখার মাধ্যমে বিপুল অংকের এ নতুন নোট বদলে দেয়।
রেমিটেন্স ১৪৫ কোটি ডলার ছাড়ানোর আশা : কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানো বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি মাসের ১-১৭ তারিখ পর্যন্ত ৯৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে।
এর মধ্যে ঈদের আগের সপ্তাহেই (১১-১৭ আগস্ট) এসেছে প্রায় ৪৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগে শেষ কার্যদিবস ২০ আগস্ট পর্যন্ত রেমিটেন্স বেড়ে ১৩০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এটি আগস্ট শেষে ১৪৫ কোটি ডলারে উন্নীত হওয়ার আশা সংশ্লিষ্টদের, যা বাংলাদেশি টাকায় ১২ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগেই রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে। এটি চলতি মাস শেষে আরও বড় অংকে রূপ নেবে। কারণ প্রবাসীরা কোরবানিসহ ঈদের কেনাকাটা করতে প্রচুর টাকা পাঠিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হুন্ডি রোধে নানা পদক্ষেপ নেয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ঈদের আগে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ১-১৭ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ১৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক এ সময়ে রেমিটেন্স এনেছে প্রায় ৯ কোটি ৮৩ লাখ ডলার।
এছাড়া সোনালী ব্যাংক ৭ কোটি ২৮ লাখ ডলার, ডাচ্-বাংলা ৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার, জনতা ৫ কোটি ১৭ লাখ ডলার, সাউথ-ইস্ট ৩ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, পূবালী ৩ কোটি ২২ লাখ ডলার, ট্রাস্ট ব্যাংক ৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার, ব্যাংক এশিয়া ৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার, ব্র্যাক ব্যাংক ২ কোটি ৯৭ লাখ ডলার, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ২ কোটি ৭১ লাখ ডলার, ন্যাশনাল ব্যাংক ২ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, উত্তরা ব্যাংক ২ কোটি ৫৩ লাখ ডলার, এনসিসি ব্যাংক ২ কোটি ২৪ লাখ ডলার, প্রাইম ব্যাংক ২ কোটি ডলার, দ্য সিটি ব্যাংক ১ কোটি ৯২ লাখ ডলার, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ১ কোটি ৯২ লাখ ডলার এবং রূপালী ব্যাংক ১ কোটি ২৮ লাখ ডলার এনেছে।
এ প্রসঙ্গে অগ্রণী ব্যাংকের রেমিটেন্স বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শ্যামল চন্দ্র মহোত্তম বলেন, ১-২০ আগস্ট পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকের রেমিটেন্স বেড়ে ১২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার ছাড়িয়েছে। এ সময় ২ লাখ ৭২ হাজার গ্রাহক সুবিধা পেয়েছেন। এটি চলতি মাস শেষে ১৪ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৩১ কোটি ৭০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এ অংক গত বছরের একই মাসের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই মাসে ১১১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছিল।
ঈদের আগে পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি টাকা পাঠানোয় রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক ও ব্যাংকাররা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থবছরের প্রথম মাসে রেমিটেন্সের ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
ঈদ উপলক্ষে বেশি রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসীরা। সে হিসাবে আগস্টে রেমিটেন্স প্রবাহ আরও প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করা যায়।
ডলার বিক্রি ২ হাজার কোটি টাকা : চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি থাকায় চাপে আছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার। চাহিদা মেটাতে প্রচুর ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঈদের আগে ৩৫ কার্যদিবসে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ২৫ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ২ হাজার ৯৩ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে এনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এটিএম ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা : এছাড়া এবারের ঈদে এটিএম বুথের মাধ্যমে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।