রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুহাম্মদ আউয়াল খান পদত্যাগ করেছেন। ১২ অথবা ১৪ আগস্ট তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন বলে জানা গেছে। আগামী বোর্ড সভায় তার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে।
একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। সে কারণে খারাপ অবস্থা দেখে এমডি সরে গেছেন।
জানতে চাইলে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ রোববার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে জানান, হ্যাঁ, এমডি আউয়াল খান পদত্যাগ করেছেন। ইতিমধ্যে তার পদত্যাগপত্র পেয়েছি। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগ করেছেন। আসলে তিনি একজন পরহেজগার মানুষ, তাই এখানে থাকতে চাননি। তার পদত্যাগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে মুহাম্মদ আউয়াল খানের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, মুহাম্মদ আউয়াল খান ২০১৭ সালের ১ নভেম্বর বেসিক ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ তাকে তিন বছরের জন্য এ পদে নিয়োগ দেয়। ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর বেসিক ব্যাংকের পর্ষদ চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ৪ বছরে বেসিক ব্যাংকের লোকসান ২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, ব্যাংকটির ৬৮টি শাখার মধ্যে ২১টিই লোকসান গুনছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর আমলের চার বছরে বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বের করে নেয়া হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৫৯ দশমিক ২২ শতাংশই খেলাপি। ব্যাংকটির এখন মোট খেলাপি ঋণ ৮ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।
বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ তখনকার ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নামে-বেনামে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে। এটাকে দিবালোকে ডাকাতি বলে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। ওই ঘটনায় তৎকালীন এমডিকে বরখাস্ত করে পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়। পরে আলাউদ্দিন এ মজিদকে চেয়ারম্যান এবং খোন্দকার মো. ইকবালকে এমডি করে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়। এমডি খোন্দকার মো. ইকবালের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। পরে ২৩ অক্টোবর আউয়াল খানকে এমডি পদে নিয়োগ দেয়া হয়।
আউয়াল খান এর আগে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এমডির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর কৃষি ব্যাংকের এমডি পদে যোগ দেন। পরে ২০১৭ সালের আগস্টে অবসরজনিত ছুটিতে যান। আউয়াল খান রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকেরও এমডি ছিলেন। এর আগে তিনি ডিএমডি হিসেবে অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।