দেশে প্রথমবারের মতো ১৬৫ থেকে ৫০০ সিসির (ইঞ্জিন ক্ষমতা) মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে রানার অটোমোবাইলস। দেশীয় এ প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে উচ্চক্ষমতার মোটরসাইকেল উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে।
২০১৭ সালের শুরুতে নেপালে মোটরসাইকেল রপ্তানি শুরু করে রানার। এবার কোম্পানিটির নজর ভুটান, মিয়ানমার, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্য এবং আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের দিকে। রানার বলছে, ওই সব দেশে রপ্তানি-সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করে তারা বাজার ধরার সুযোগ দেখছে। এ জন্যই উচ্চক্ষমতার মোটরসাইকেল উৎপাদনে যাচ্ছে তারা।
রানার অটোমোবাইলস জানায়, তারা শুরুতে ২০০ থেকে ২৫০ সিসির মোটরসাইকেল তৈরিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরে তাদের ময়মনসিংহের ভালুকার কারখানায় এসব মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু হবে। ২০১৯ সালের গোড়ার দিকে তারা তা রপ্তানি শুরুর আশা করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান তাঁর কার্যালয়ের মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা খুবই আনন্দিত যে আমাদের আবেদনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সাড়া দিয়েছে। এখন আমরা উচ্চদামের মোটরসাইকেলের বাজারে প্রবেশ করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখন বাজার গবেষণা, উদ্ভাবন ও মান নিয়ন্ত্রণের কাজ করছি।’
কোম্পানিটি জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ৩০ আগস্ট তাদের ১৬৫ থেকে ৫০০ সিসি পর্যন্ত মোটরসাইকেল উৎপাদনের কাঁচামাল ও উপাদান আমদানির অনুমতি (আইপি) দিয়েছে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেশের বাজারে উচ্চক্ষমতার মোটরসাইকেল ও খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রি না করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। এটি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
২০০০ সালে রানার আমদানি করা মোটরসাইকেল দেশে বাজারজাত করতে শুরু করে। কয়েক বছর পর প্রতিষ্ঠানটি মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ সংযোজন শুরু করে। ২০০৭ সালে ময়মনসিংহের ভালুকায় দেশে প্রথম মোটরসাইকেলের বিভিন্ন অংশ বা কম্পোনেন্ট তৈরির মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে মোটরসাইকেল উৎপাদন শুরু করে রানার। ২০১১ সালে রানার পানচিং, ওয়েল্ডিং, পেইন্টিং, অ্যাসেম্বলিং (সংযোজন), টেস্টিং ইত্যাদি যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে মোটরসাইকেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকারি অনুমোদন লাভ করে। আর পূর্ণাঙ্গ মোটরসাইকেল তৈরির কারখানা হিসেবে রানারের যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালে।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের কারখানায় মোটরসাইকেল উৎপাদনক্ষমতা দৈনিক ৫০০টি। চলতি বছরের মধ্যে তা এক হাজারে উন্নীত করার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিতে তৈরি উচ্চক্ষমতার ইউএম-রানার ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ৩ হাজার ৬৬৭ কোটি ডলার, যার ৮০ শতাংশের বেশি এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। রপ্তানি পণ্যের সম্ভারে নতুন যুক্ত হয়েছে মোটরসাইকেল। রানার জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ২১ জানুয়ারি তারা নেপালে মোটরসাইকেল রপ্তানি করে। ভালুকায় রানারের রপ্তানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। পরবর্তী সময়ে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর দেশের বিজয় দিবসে ৮০ থেকে ১৫০ সিসির সাতটি মডেলের মোটরসাইকেল নিয়ে ব্যাপক পরিসরে নেপালের বাজারে রপ্তানি সম্প্রসারণ করে রানার অটোমোবাইলস। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, রপ্তানি শুরুর পর থেকে নেপালে তারা প্রায় ৩ হাজার মোটরসাইকেল পাঠিয়েছে, যা আগামী দিনগুলোতে আরও বাড়বে।
রানার অটোমোবাইলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকেশ শর্মা এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এ বছরের শেষ নাগাদ রপ্তানির উদ্দেশ্যে উচ্চ সিসির মোটরসাইকেল উৎপাদন করতে পারব। আগামী বছর থেকে তা রপ্তানি শুরু হবে।’