১৯৭১ সালের জুন ও আগস্ট মাসে তৎকালীন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মুক্তিযাদ্ধারা দুইটি গেরিলা অপারেশন চালান-যা কীনা ইতিহাসে অপারেশন ‘হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-হিট অ্যান্ড রান’ নামে পরিচিত। সেই হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল কয়েক ঘন্টা পরেই আবার ফিরছে তার আদি নামে।
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল যা এর আগে রূপসী বাংলা এবং হোটেল শেরাটন নামে পরিচিত ছিল। আজ বৃহস্পতিবার ( ১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল উদ্বোধন করবেন। তবে উদ্বোধনের এক মাস পর বাণিজ্যিকভাবে এর কার্যক্রম শুরু হবে।
জানা গেছে, প্রায় তিন দশক পর এর ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হচ্ছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল, ১৯৮৩ সালের পর আবারও ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা নামে চালু হবে রাজধানী ঢাকার পাঁচ তারকা মানের এই হোটেলটি। রাজধানীর অন্যসব পাঁচতারকা মানের হোটেলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতেই হোটেলটির সংস্কার করা হয়।
বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের (বিএসএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন প্রধানমন্ত্রী হোটেল উদ্বোধন করার দুই মাস পর এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হবে। কারণ আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী উদ্বোধনের পর পরীক্ষামূলকভাবে কিছুদিন অপারেশন করতে হয়। আমরা আশা করছি ফের অতিথিদের কাছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
দেশের প্রথম পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ১৯৬৬ সালে শাহবাগে প্রায় সাড়ে চার একর জমির ওপর যাত্রা শুরু করে। স্থপতি উইলিয়াম বি ট্যাবলারের নকশার এ হোটেলটি আজও চমৎকার স্থাপত্য শিল্পের নিদর্শন। এটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামেই চলে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত। এরপর স্টারউড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় ১৯৮৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ঢাকা শেরাটন হোটেল নামে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলে।
শেরাটনের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ‘রূপসী বাংলা হোটেল’ নামে এটি পরিচালিত হয়। ২০১২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হোটেলটির মালিক কোম্পানি বাংলাদেশ সার্ভিস লিমিটেড ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপ (এশিয়া প্যাসিফিক) প্রাইভেট লিমিটেডের (আইএইজি) সঙ্গে ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বন্ধের পর ২০১৫ সালের মার্চে সংস্কার কাজ শুরু হয়।
হোটেলটির সংস্কার কাজের খরচও বহন করছে বিএসএল। তবে ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে হোটেল চালু করার কথা থাকলেও সেসময় নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি এর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ইনপ্রজেক্ট। যার কারণে সংস্কার খরচ বেড়ে যায় প্রায় সাড়ে ৫’শ কোটি টাকা।
মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, সংস্কার কাজের ক্ষেত্রে স্থানীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মোগল স্থাপত্য শৈলীকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংস্কার কাজের মাধ্যমে হোটেলটির কক্ষ পুনর্বিন্যাস করায় আগের চেয়ে এটির কক্ষ সংখ্যা কমে গেছে। আগে সব মিলিয়ে ২৭২টি কক্ষ ছিল।সংস্কারের পর এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩১।
আয়তনের দিক থেকে কক্ষের আকার দাঁড়িয়েছে ২৬ থেকে ৪০ স্কয়ার মিটার। বিশ্বমানের অতিথি সেবা নিশ্চিত করতে পরিবর্তন করা হয়েছে সুইমিং পুল ও ডাইনিং হলের স্থান। এর আগে হোটেলটির বলরুম ছিল একদিকে, উইন্টার গার্ডেন নামে সবচেয়ে বড় হলরুমের অবস্থান ছিল আরেক দিকে। এখন দুটি এক করে দেয়া হয়েছে। হোটেলটির মূল ফটকও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভেতরের সুইমিং পুলটিও স্থানান্তর করে সাজানো হয়েছে নতুন করে। গ্রাহকদের চাহিদার কথা মাথায় নিয়ে বাড়ানো হয়েছে সুযোগ-সুবিধা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক বলেন, ‘দেশের অন্যান্য বাণিজ্যিক ৫ তারকা হোটেলের চেয়ে এ হোটেল ভিন্ন। এর প্রতিটি রুমের আয়তন বাড়ানো হয়েছে। আগে হোটেলের প্রতিটি রুম ছিলো ২৬ বর্গমিটার, এখন তা ৪০ বর্গমিটার করা হয়েছে। হোটেলের ছাদ ও ভূমি ছাড়া সবকিছুতেই নান্দনিক সংস্কার আনা হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সঙ্গে চুক্তি অনুয়ায়ী ৪০ শতাংশ লাভ হলে হোটেল কর্তৃপক্ষ ৮ শতাংশ নিয়ে যাবে। আর ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ লাভ হলে ৯ শতাংশ আর ৫০ শতাংশ লাভ হলে ১০ শতাংশ তারা পাবে। হোটেলটি নতুন করে সংস্কারে ব্যয় হয়েছে ৬২০ কোটি টাকা।