ঝুঁকি ঋণে প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ ১৩ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-০৯-১৯ ০৯:২৩:৪৮


ব্যাংক খাতে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতের ১৩ ব্যাংক। এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। যার সিংহভাগই রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জুন-১৮ প্রান্তিকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

 

ব্যাংক ব্যবস্থার ঋণের শ্রেণিমান অনুযায়ী, নির্ধারিত পরিমাণ নিরাপত্তা সঞ্চিতির অর্থ সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, রূপালী, বেসিক ও অগ্রণী ব্যাংক। বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আইএফএইসি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণেই ব্যাংকিং খাতে বাড়ছে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ। আর এ সময়ে যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৫৮ হাজার ৫২১ কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। আর রাইটঅফ বা অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ যোগ করা হলে খেলাপি ঋণ দাঁড়াবে এক লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭ সালের জুন শেষে বছরের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৫ হাজার ১৯২ কোটি টাকা।

আলোচিত সময়ে ১৩ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। এরমধ্যে সবচেয়ে ঘাটতি সোনালী ব্যাংকের। জুন শেষে সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৬২২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এরপরই বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি তিন হাজার ২২২ কোটি ৯৩ লাখ, রূপালী ব্যাংকের এক হাজার ৩৭১ কোটি ৫৩ লাখ এবং অগ্রণী ব্যাংকের ৮৮৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

বেসরকারি খাতের ৯ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি এক হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে এবি ব্যাংকের ১৪৬ কোটি ৬৩ লাখ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৪২২ কোটি ২৩ লাখ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১৫৯ কোটি ৮৪ লাখ, আইএফএইসির ২০ কোটি ৯৬ লাখ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১০৫ কোটি ৯৭ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪৭৭ কোটি ৯০ লাখ, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ১১৬ কোটি ১৫ লাখ, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ৩৬৮ কোটি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৪৬ কোটি টাকা।

তবে কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনের অতিরিক্ত (উদ্বৃত্ত) অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রাখায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৫২ হাজার ৮৭৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৮৮৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। ফলে সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে মোট নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৯৮৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশিরভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকিতে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধি নিষেধ আরোপ করা আছে। এর একটি হলো প্রভিশন সংরক্ষণ।

নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। খেলাপি ঋণ বাড়লে, আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শেয়ারহোল্ডাদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না।