বিদ্যমান আইনি বাধার কারণে কারসাজিমূলক শেয়ার লেনদেন নিয়ন্ত্রণে স্টক এক্সচেঞ্জ চাইলেও অনেক ক্ষেত্রে কিছু করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট শেয়ারের লেনদেন স্থগিত, কোম্পানির কার্যালয় বা কারখানা পরিদর্শন, সার্কিট ব্রেকার তুলে দেওয়াসহ কয়েকটি বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে ছয় সদস্যের একটি কমিটি করেছে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ। প্রয়োজনে আইন সংশোধনে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অনুরোধ জানাবে স্টক এক্সচেঞ্জটি। এসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শেয়ার কারসাজি নিয়ন্ত্রণে কঠোর হচ্ছে ডিএসই।
রাজধানীতে ডিএসই কার্যালয়ে পর্ষদের এক বৈঠকে রোববার সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার পর এ কমিটি করা হয়। সংশ্নিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক ও দু'জন শেয়ারহোল্ডার পরিচালকের সমন্বয়ে কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি পরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়া চীনা কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিও টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে পর্ষদের এ বৈঠকে অংশ নেন।
বর্তমানে যে ১৫ কোম্পানির ব্যবসায়িক কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হচ্ছে, সেগুলোর অন্তত পাঁচটির বাস্তব অবস্থা পর্যালোচনা করবে নবগঠিত কমিটি। এর ভিত্তিতে কমিটি শেয়ার কারসাজি নিয়ন্ত্রণে করণীয় নির্ধারণে সুপারিশ দেবে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এর আগে বিদ্যমান আইনের মধ্য থেকে কারসাজি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ এবং কঠোর হতে ব্যবস্থাপনা বিভাগ ও প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে তাগিদ দিয়েছে পর্ষদ। তবে সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বর্তমান আইন ও বিধিবিধানের মধ্য থেকে কারসাজি প্রতিরোধে স্টক এক্সচেঞ্জের ক্ষমতা সীমিত। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অভিহিত করা ছাড়া তেমন কিছু করার নেই। লেনদেন স্থগিতের মধ্যে সিদ্ধান্ত সীমাবদ্ধ রাখতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকা রহিমা ফুড করপোরেশন ও মডার্ন ডাইংয়ের শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি ও লেনদেন পর্যবেক্ষণের পর কোম্পানি দুটিকে তালিকাচ্যুত করে ডিএসই। এরপর ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ থাকা আরও ১৫ কোম্পানির কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় পর্ষদ। এ ছাড়া পর্যবেক্ষণে আছে আরও এক ডজনের বেশি কোম্পানি।
বৈঠকের বিষয়ে ডিএসইর এক পরিচালক জানান, সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, কোম্পানি যত খারাপ, সেটির দর তত বাড়ছে। ফলে এ বাজার সম্পর্কে অনেকের মধ্যে খারাপ ধারণা তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রায় দিনই বাজারে কারসাজি হচ্ছে। এখন কারা কারসাজি করছে, তা খুঁজে বের করতে তদন্তের প্রয়োজনও পড়ে না। বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে কারসাজিকারকদের নাম, ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের নাম শোনা যাচ্ছে।
দায়িত্বশীলদের কানে এসব নাম পৌঁছালেও তারা আমলে নিচ্ছেন না। কারও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। কারসাজির ব্যাপকতা গত কয়েক বছরে মাত্রা ছাড়িয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আরেক পরিচালক বলেন, কারসাজি প্রতিরোধে শেয়ারবাজারে অনেক আইন থাকলেও কার্যকারিতা নেই। দায়িত্বশীলরাও অনেক ক্ষেত্রে চুপ থাকছেন। আবার আইনি বাধায় স্টক এক্সচেঞ্জেরও হাত-পা বাঁধা। এ অবস্থা অনির্দিষ্টকাল চলতে দেওয়া যায় না। এ থেকে উত্তরণের রাস্তা বের করতেই পর্ষদের এ সিদ্ধান্ত বলে জানান তিনি।
কারসাজি প্রতিরোধে কী ধরনের নতুন ব্যবস্থা আসতে পারে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোনো শেয়ারের মাত্রাতিরিক্ত দর বৃদ্ধি ঠেকাতে সার্কিট ব্রেকার চালু করা হয়েছিল। তবে এটিকেই এখন কারসাজির হাতিয়ার করা হয়েছে। এ কারণে পর্ষদে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সার্কিট ব্রেকার তুলে দেওয়ার প্রস্তাব এসেছে।