ব্যাংক খাতে যোগ্য নেতৃত্বের সঙ্কট
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-১০-২২ ২১:৩৫:০৭
ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনায় জড়িতদের নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা সন্তোষজনক নয়। সাম্প্রতিক কালে অর্থনৈতিক যে অগ্রগতি হচ্ছে তা ধরে রাখতে দরকার দক্ষ এবং যোগ্য নেতৃত্বের। এছাড়া বর্তমান ও আগামী দিনের ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির বিকল্প নেই। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব কথা উঠে এসেছে।
সোমবার (২২ অক্টোবর) বিআইবিএম এর অডিটোরিয়ামে ‘লিডারশীপ অ্যাপ্রোসেস, অ্যান্ড ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স: দ্যা কেস অব দ্যা ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (ট্রেনিং) ড.শাহ মো. আহসান হাবীবের নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকে কর্মরতদের একটি বড় অংশের মতে কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংকের ব্যবস্থাপকদের নেতৃত্ব খুব ভালো এবং আরও ভালো করার সুযোগ রয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে যোগ্য নেতৃত্ব ও সুশাসনের উন্নয়নে ব্যাংকিং খাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ জরুরী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেমিনারে উপস্থিত বিআইবিএমের নির্বাহী কমিটির সভাপতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস.এম মনিরুজ্জামান বলেন, ব্যাংকের দক্ষ এবং কার্যকরী নেতৃত্বের সংকটের কারণে খেলাপী ঋণ, তারল্য সংকট এবং অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এসব বন্ধ করতে যোগ্য নেতৃত্ব প্রয়োজন। একজন দক্ষ ব্যবস্থাপক অলাভজনক ব্যাংককে অল্প সময়ের মধ্যে লাভজনক করতে পারেন।
বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ব্যাংকের যারা নেতৃত্ব দেবে তাদের ব্যাংকিং ধারণা স্পষ্ট থাকতে হবে। ব্যাংকিং সম্পর্কে পুরো ধারণা না থাকলে অধস্তনদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। ৯০ শতাংশ সিদ্ধান্ত সঠিক হলে মনে করতে হবে সে ভালো নেতা। সফলতা সবাইকে ভাগ করে নিলে আগামী দিনে কাজে সুবিধা হবে।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, পরিচালনা পর্ষদ এবং শীর্ষ ব্যবস্থাপনার মধ্যে ভালো সম্পর্ক জরুরী। যোগ্য নেতৃত্বই একমাত্র ব্যাংকিং খাতের বিপর্যয় রোধ করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো: ইয়াছিন আলি বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের উচ্চ পর্যায়ে নেতৃত্বেও সংকট প্রকট। সব কাজে দক্ষতা থাকলেও নেতৃত্বের গুণাবলী না থাকলে কাজে লাগবে না।
সাউথ ইস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. কামাল হোসেন বলেন, যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে বর্তমানে ব্যাংকিং খাতের কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। কিছু বড় ব্যাংকিং খাতের অনিয়মের জন্য ব্যাংকাররা আংশিকভাবে দায়ী। ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন ধরণের পরিবর্তন হচ্ছে, এ সময়ে নেতৃত্বের পরিবর্তনও দরকার।
মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো:সফিউল্লাহ আজম বলেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বিভিন্ন ধরণের চাপের মধ্যে কাজ করতে হয়। নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার, বোর্ড এবং ব্যবসায়িক চাপ থাকবে তা মোকাবেলার মতো নেতৃত্ব দরকার। ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের না বলার ক্ষমতা থাকতে হবে।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-এর অধ্যাপক ড. এ. কে. এম. সাইফুল মজিদ ব্যাংকে সুশাসনের ওপর জোরারোপ করেন।
ব্যাংক খাতে নেতৃত্ব বিষয়ক এই গবেষণা দলে আরও ছিলেন বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য এসকে নাজিবুল ইসলাম; বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম; বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র পন্ডিত; বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক শাকিল এজাজ; আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান মো:মাজহারুল ইসলাম।