ল্যাপটপ চলা অবস্থায় হঠাৎ বন্ধ হলে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। হঠাৎ ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার এ সমস্যা সমাধান কি? এ ক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে করণীয় বিষয় গুলো তুলেধরা হলো নিচে-
বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যায় ল্যাপটপে কাজ করার সময় , কিন্তু যখন কাজের সুবিধার পরিবর্তে ল্যাপটপ অসুবিধা সৃষ্টি হয় তখন অনেক বিরক্তি লাগে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবার আগে জানার প্রয়োজন পড়ে ঠিক কী কারণে ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।আর এরকম ঘটতে থাকলে ল্যাপটপ নিয়ে কী করা যায় সে বিষয়গুলো জানা দরকার। হঠাৎ করে যাতে ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে না যায় সেক্ষেত্রে কয়েকটি পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
যে কারনে ল্যাপটপ বন্ধ হচ্ছে?
হঠাৎ করে ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এর মধ্যে তিনটি পরিচিত কারণ আছে। এ তিনটি কারণে মূলত আচমকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ তিনটি ঘটনায় ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে গেলে তা নিজে সমাধান করা সহজ।
১ম কারণ: বাহ্যিক
বাহ্যিক ল্যাপটপ বন্ধ হওয়ার প্রথম কারণ হচ্ছে বাহ্যিক। ল্যাপটপ থেকে অতিরিক্ত তাপ নির্গত হওয়ার কারণে ল্যাপটপ উত্তপ্ত হয়ে এটা ঘতে। ল্যাপটপের ভিতর জমে থাকা ধুলা বা ল্যাপটপ থেকে গরম হওয়া বের হতে না পারলে ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় এবং ল্যাপটপে টানা গেম খেলা, ভিডিও চালানো বা দীর্ঘক্ষণ কাজ করা হলে ল্যাপটপের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং ল্যাপটপ গরম হয়ে যায় যা ল্যাপটপ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।
দ্বিতীয় কারণ: অপর্যাপ্ত র্যামে
মানুষের মস্তিষ্কের মতোই ল্যাপটপের র্যামে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও তথ্য জমা থাকে। র্যামের ক্ষমতার চাইতে অতিরিক্ত চাপ পড়লে অনেক সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। ফলে ল্যাপটপের ধীর গতির হয়ে যায়। এমনকি প্রসেসরের ওপর চাপ পড়তেই ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে যায়। তাছারা ব্লুস্ক্রিন এর মতো ঘটনা ঘটতে পারে।
তৃতীয় কারণ: সফটওয়্যার
বায়োসের সমস্যা থেকে শুরু করে ম্যালওয়্যার, সফটওয়্যার বাগ ও ভাইরাসের কারণেও ল্যাপটপ হঠাৎ বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যে ব্যবস্থা নেবেনঃ
হঠাৎ হঠাৎ ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে যেতে দেখলে, এর কারণ যাই হোক না কেনো সব সময় প্রাথমিক তিনটি পদক্ষেপ নিতে পারেন।
১.যে প্রোগ্রামটির কারণে সমস্যা দেখা দিচ্ছে প্রথমে তা বন্ধ করে দিন। যদি একটি প্রোগ্রাম চালু থাকার সময় ল্যাপটপে সমস্যা দেখা যায় তবে সে প্রোগ্রামটি বন্ধ করলেই সমস্যা সাময়িক সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রোগ্রামটি বন্ধ করতে গিয়েও সমস্যা দেখা যায়। প্রোগ্রামটি যদি আনরেসপনসিভ বা বন্ধ হতে না চায় তবে টাস্ক ম্যানেজারে গিয়ে তা বন্ধ করে দিতে পারেন। আবার Ctrl+Alt+Delete দিয়েও প্রোগ্রামটি বন্ধ করা যায়। এ ছাড়াও Ctrl+Shift+esc দিয়েও প্রোগ্রামটি বন্ধ করতে পারেন।
২.যদি প্রোগ্রামটি কোনোভাবেই বন্ধ করা না যায় তবে তখন শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। অধিকাংশ ল্যাপটপের ক্ষেত্রে বেশ কিছু সময় ধরে power বাটন চেপে ধরে রেখে ল্যাপটপ বন্ধ করে দিতে হবে। সাধারণ সময়ের চেয়ে বেশিক্ষণ power বাটন চেপে রাখলে ল্যাপটপ বন্ধ হয়ে যায়। এতেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তবে বিদ্যুৎ সংযোগ সরিয়ে ফেলুন এবং ব্যাটারি খুলে ফেলুন।
৩.দ্বিতীয় ধাপটি হচ্ছে ল্যাপটপ কতটুকু গরম হয়েছে তা পরীক্ষা করা। হাতে স্পর্শ করেই ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে পারবেন। তবে সরাসরি হাত দিয়ে পরীক্ষার সময় অবশ্যই সচেতন থাকবেন যাতে হাত পুড়ে না যায়। ল্যাপটপ থেকে বাতাস বের হতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কী না বা ধুলা জমেছে কিনা পরীক্ষা করে দেখুন।
গরম হয়ে যাওয়ার সমস্যা
ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার সমস্যা সাধারণত ধুলো পরিষ্কার করলেই সেরে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ল্যাপটপের ফ্যান বা হিট সিঙ্ক ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় করণীয়গুলো ইন্টারনেটে সার্চ দিলেই নানা টিউটোরিয়াল থেকে জেনে নিতে পারবেন। তবে নিজে ল্যাপটপ খোলার ঝুঁকি নিতে না চাইলে অবশ্যই পেশাদার সারাইখানায় নিয়ে সমস্যা সমাধান করে নিতে পারবেন।
ল্যাপটপের মেমোরি সমস্যা সমাধান করতে হলে আপনার ল্যাপটপে মেমোরি দখল করেছে কোন প্রোগ্রাম তা বের করুন। টাস্ক ম্যানেজারের ‘প্রসেস’ ট্যাব থেকে আপনি আপনার ল্যাপটপের চলমান প্রসেসগুলো জানতে পারবেন। কোনো প্রোগ্রাম চালু না করে আপনি কোন প্রোগ্রাম কতটুকু জায়গা নিয়েছে তা দেখে নিতে পারবেন। যদি কোনো প্রোগ্রাম চালু না থাকা অবস্থায় অনেক বিশাল জায়গা ব্যবহৃত হচ্ছে দেখায় তবে সমস্যা রয়েছে বলেই ধরে নিতে হবে। যদি ফিজিক্যাল মেমোরির বেশির ভাগ খালি থাকে তবে সর্বশেষ ব্যবহৃত প্রোগ্রামটি আবার চালু করে দেখতে পারেন। এভাবে ব্যবহৃত অ্যাপ্লিকেশনগুলো কতটুকু মেমোরি ব্যবহার করছে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। উইন্ডোজ মেমোরি ডায়াগনস্টিক টুল থেকে মেমোরি টেস্ট দিয়েও এ পরীক্ষা চালাতে পারেন। যদি জায়গার স্বল্পতা দেখায় তবে অবশ্যই আপনাকে কিছু প্রোগ্রাম আন ইনস্টল করে জায়গা ফাঁকা করতে হবে। মেমোরি দখল করে এমন অপ্রয়োজনীয় ফাইল, প্রোগ্রাম সরিয়ে ফেলুন এবং হার্ডড্রাইভে অধিকতর ফাইল সংরক্ষণ করুন। ল্যাপটপে র্যাম বাড়ান এবং মেমোরি উন্মুক্ত রাখুন।
ল্যাপটপে যদি সফটওয়্যার জনিত সমস্যা হয় তবে দুটি উপায়ে সমাধান করা যেতে পারে। একটি হচ্ছে সিস্টেম রিস্টোর পদ্ধতি। সিস্টেম টুলস ফোল্ডার থেকে সিস্টেম রিস্টোর করে ল্যাপটপকে একেবারে প্রথম থেকে চালু করা যায়। দ্বিতীয় সমাধান হচ্ছে ল্যাপটপের ড্রাইভার আপডেট ও ভাইরাস স্ক্যান।
ল্যাপটপের ব্যাটারি আয়ু বাড়ানোর পরামর্শ
ল্যাপটপে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন অথচ এমন সময়ে দেখলেন ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ায় হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে ল্যাপটপ। অধিকাংশ ল্যাপটপে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ল্যাপটপের ব্যাটারির আয়ু কমে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। খুব বেশি কাঠখঢ় না পুড়িয়েও কয়েকটি ছোট পরামর্শ মেনে চললে ল্যাপটপের ব্যাটারির আয়ু বাড়ানো সম্ভব।
ইউএসবি সাবধানতা
ইউএসবির মাধ্যমে ল্যাপটপে যুক্ত করা এক্সটার্নাল পণ্য ল্যাপটপের ব্যাটারি থেকে চার্জ গ্রহণ করে। ব্যাটারির আয়ু বাড়াতে কাজ শেষ হলেই এক্সটার্নাল ডিভাইসগুলো সরিয়ে ফেলুন। ইউএসবি থেকে ভাইরাস ল্যাপটপে আসতে পারে। তাই ইউএসবি ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। ব্যবহারের আগে স্ক্যান করে নিন।
ব্রাইটনেস কমাতে পারেন
মুঠোফোনের মতো ল্যাপটপের ডিসপ্লে অতিরিক্ত চার্জ ব্যবহার করে ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেয়। তাই ডিসপ্লের ব্রাইটনেস বা উজ্জ্বলতা যতটা সম্ভব কমিয়ে রাখতে পারেন। এ ছাড়া কিবোর্ডের ব্যাকলাইট বন্ধ করে রাখুন।
ল্যাপটপ ঠান্ডা রাখুন
ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হলে এর ভেতরের পাখা দ্রুত ঘুরতে থাকে, যা ব্যাটারি থেকে অতিরিক্ত চার্জ ব্যবহার করে। তাই ল্যাপটপ অতিরিক্ত গরম হওয়া ঠেকাতে ল্যাপটপ কুলার ব্যবহার করতে পারেন। ল্যাপটপ স্ট্যান্ডবাই মোডে রাখার চেয়ে হাইবারনেট মোডে
পেশাদারদের কাছে যাবেন কখন?
ল্যাপটপের সমস্যা সমাধানের এ সাধারণ উপায়গুলো যখন ব্যর্থ হবে তখনও হতাশ হওয়া কোনো কারণ নেই; আছে, আর দুটি পথ খোলা রয়েছে আপনার সামনে। একটি হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন গুগলে অনুসন্ধান করা। ল্যাপটপের মডেল নম্বর ও সমস্যার কথা লিখে গুগলে সার্চ দিন। আপনার ল্যাপটপের সমস্যা জানিয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বরাবার মেইল করতে পারেন। যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ল্যাপটপ কিনেছেন তাদের সার্ভিস সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন।
পাওয়ার প্ল্যান সেট আপ
উইন্ডোজনির্ভর ল্যাপটপগুলোতে পাওয়ার প্ল্যান সেটিংস বিল্ট ইন থাকে। এই পাওয়ার প্ল্যান থেকে সুবিধামতো অতিরিক্ত চার্জ গ্রহণ করে, এমন বিষয়গুলো বন্ধ করে রাখতে পারেন।
যখন আর কোনো উপায়ই কাজে আসবে না তখন কম্পিউটার মেরামতের দোকান বা সারাইখানার খোঁজ করবেন। আপনার আশে পাশে পরিচিত অনেক কম্পিউটার সারাইখানাই পাবেন, যেখানে হঠাৎ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়া ল্যাপটপ সমস্যা নিয়ে অনেকে যান। এসব সারাইখানায় অনেক বড় সমস্যা দেখিয়ে প্রচুর অর্থ দাবি করে। ল্যাপটপ সারাই করার খরচ সর্বনিম্ন এক হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হয়। ল্যাপটপের সামান্য সমস্যায় অনেককেই বিপর্যস্ত হতে দেখা যায়, সমস্যা সমাধানের সামান্য কিছু কৌশল জানা থাকলে সমস্যা সমাধান করা যায় নিজেই।