বিশ্বকাপের বাকি এখনও সাত মাসেরও বেশি সময়। অথচ, এখন থেকেই এ নিয়ে শুরু হয়েছে কথা-বার্তা। কোনো একদিন বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবে- এমন কথা অনেক আগে থেকেই শোনা যাচ্ছিল। সম্প্রতি এই উচ্চারণটা অনেক বেশি শোনা যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কান গ্রেট মাহেলা জয়াবর্ধনে কয়েকদিন আগে বাংলাদেশে এসেও টাইগারদের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছিলেন।
‘বিশ্বকাপ জয়ের প্রত্যাশা’ যখন চারদিক থেকে তৈরি হচ্ছে, তখন এ নিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে পারলেন না বাংলাদেশের অন্যতম সেরা পারফরমার সাকিব আল হাসানও। একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির অনুষ্ঠানে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বিশ্বকাপ নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হন সাকিব এবং সে সময় এই সম্ভাবনা নিয়ে নিজের মন্তব্য খোলামেলাভাবে তুলে ধরেন তিনি।
দেশের মানুষ যখন নিজেরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, এবার বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিততে পারে- সাকিব আল হাসান মনে করেন এটাই এখন তাদের বড় ভিত্তি এবং বড় শক্তি। সাধারণ মানুষের এই বিশ্বাসকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাকিব আল হাসান নিজের ব্যক্তিগত কিছু মত তুলে ধরেছেন। জানিয়েছেন, কিভাবে আগামী বিশ্বকাপ জিততে হবে- তার ফর্মুলাও।
বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে সাকিব বলেন, ‘সব থেকে বড় ভিত্তি হচ্ছে, দেশের সব মানুষ আশা করছে বাংলাদেশ এবার চ্যাম্পিয়ন হবে। এটা তো শুধু শুধু করছে না। এর আগে তো কোনোবার বলে নাই যে, আমরা বিশ্বকাপ জিততে পারি। এবার বলছে কারণ, তারাও এই জিনিসটা বিশ্বাস করে। এবং আমরা প্লেয়াররাও বিশ্বাস করি। আমি সিউর বিসিবির সবাইও বিশ্বাস করে যে এরকম কিছু আমরা করতে পারি।’
কেন এই বিশ্বাসটা জন্ম নিলো সবার মাঝে, তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘এই ফরম্যাটটায় আমরা সবচেয়ে শক্তিশালী। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির তুলনায় আমরা স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি ভাল অবস্থানে আছি। সেদিক থেকে অবশ্যই আশাবাদী। যেভাবে আমরা পারফর্ম করছি, আমরা এখন এশিয়ার সেকেন্ড বেস্ট টিম। শেষবার যখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হল, সেখানে ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল হল, আমরা সেই পাকিস্তানকে হারাতে পেরেছি।’
সাকিব নিজেও বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের খুব ভালো সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনেকরি আমাদের খুব ভাল সম্ভাবনা আছে। বেশ কিছু ভাল দল আছে। সুতরাং, আমাদের ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলতে হবে। যেহেতু বড় টুর্নামেন্ট- নয়টা ম্যাচ, সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়া অনেক কঠিন কাজ হবে। আমার কাছে মনে হয় পরের পার্টটা বরং আরও ইজি। এরপর মাত্র দুইটা ম্যাচ, সেমিফাইনাল ও ফাইনাল। প্রথমে আপনাকে নয়টা ম্যাচ ভাল খেলতে হবে, পরে দুইটা ম্যাচ।’
প্রত্যাশা এবং সম্ভাবনার কথা বললেও সাকিব কিন্তু প্রথমে বলেননি কিভাবে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিততে পারে। তবে প্রশ্নের ধারাবাহিকতা হোক কিংবা নিজের মনের ভেতর লালিত কথা-বার্তা হোক, বিশ্বকাপ নিয়ে সব কিছুরই ঝাঁপি খুলে দিয়েছিলেন সাংবাদিকদের সামনে। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ের ফর্মুলা জানান দিতে গিয়ে সাকিব শুরুতে তুলে ধরলেন কন্ডিশনের বিষয়টি।
ইংল্যান্ডের কন্ডিশন তো বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভিন্ন। সিমিং কন্ডিশন। বাংলাদেশের সমস্যা হবে না? জানতে চাইলে সাকিব বলেন, ‘(কন্ডিশন) আমাদের জন্য কঠিন, এটাতে দ্বিমত পোষণ করার কিছু নেই। ইংল্যান্ড এমন একটা জায়গা, যেখানে আমরা খুব বেশি ভালোও করিনি। যদিও আমরা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলেছি। আমরা কিন্তু শুধুমাত্র এক ম্যাচ ভাল খেলার কারণেই সেমিফাইনালে কোয়ালিফাই করি। ওভারঅল যদি টুর্নামেন্ট দেখেন, আমরা যে খুব বেশি ভাল করেছি সেটা আমি বলব না। আমাদের অনেক ভাল করতে হবে। আমাদের জন্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ভাল অভিজ্ঞতা ছিল, সেটা যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি, তাহলে আমাদের জন্য ভাল হবে।’
কোচ কি ভাবছেন এ নিয়ে? জানতে চাইলে সাকিব বলেন, ‘ও তো সব সময় পজেটিভ কথা বলে; কিন্তু বিশ্বকাপ নিয়ে আমরা খুব বেশি একটা কথা বলিনি এখনও। আমাদের চিন্তায় যখন বিশ্বকাপ আসে, তখন আমরা সর্বোচ্চ ফলাফলটা আনার চিন্তাই করি। ওই জায়গায় ফোকাস রেখেই সবাই অনুশীলন করছে, এই সিরিজগুলো সেই প্রস্তুতিরই অংশ।’
ইংল্যান্ডের কন্ডিশন কঠিন। তবুও বিশ্বকাপ জয়ের কথা আসছে। বিষয়টা কিভাবে দেখছেন সাকিব? ‘সবদিক থেকেই উন্নতি করার দরকার আছে। সেখানে যদি আমাদের ভাল করতে হয় তাহলে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে আমাদের ফিটনেস, যদিও আমাদের এখন সবকিছুই অনেক ভালো, তারপরও আরও অনেক ভাল করতে হবে বিশ্বকাপ জিততে হলে। আমার কাছে মনে হয় যথেষ্ট সময় আছে, ওইভাবে পরিকল্পনা করে এগোনোর জন্য। আমরা সেভাবেই অগ্রসর হচ্ছি। আমরা সঠিক রাস্তাতেই আছি। ওই পার্টিকুলার টাইমে আমাদের ফর্মটা ধরে রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে।’
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ের জন্য কি কি করতে হবে- এমন ফর্মুলাই একে একে উঠে আসতে থাকলো সাকিবের মুখ থেকে। তিনি বলেন, ‘দেখুন আমি আমাদের দল নিয়ে কিন্তু চিন্তিত না। কারণ আমাদের খুব ভাল ব্যালান্সড দল আছে। আর আইসিসি ইভেন্টগুলোতে উইকেট খুবই ফ্ল্যাট থাকে। ব্যাটিং সহায়ক হয়, তিনশ কিংবা তিনশ প্লাস রান হয়। আমি মনে করি আমাদের সেরকম বোলার আছে, যারা প্রতিপক্ষকে তিনশ বা তিনশর নিচে আটকে রাখতে পারবে। আমাদের ওই ব্যাটসম্যানও আছে যারা তিনশ প্লাস রান করতে সক্ষম। এ কারণেই আমি আশাবাদী। সবাই যা করছে খুবই ভাল করছে। তা না হলে এমন রেজাল্ট আমরা করতাম না। এই রেজাল্টটা ধরে রাখতে পারা ও এই আত্মবিশ্বাস আমাদের বিশ্বকাপে ভাল করতে সাহায্য করবে।’