জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দাবির মধ্যে তিনটি দাবির বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। নির্বিঘ্নে সভা সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা ও রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করা হবে বলে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
তবে খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনের তফসিল পেছানোসহ অন্যান্য দাবি ঐক্যফ্রন্ট থেকে উত্থাপন করা হলেও এগুলোর বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া দেওয়া হয়নি। প্রয়োজন হলে নির্বাচন কেন্দ্রিক আবারও আলোচনার দুয়ার খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সংলাপে অংশ নেওয়া একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দল ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নেন।
সংলাপে অংশ নেওয়া ১৪ দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংলাপের শুরুতে উভয়পক্ষ নিজেদের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সুচনা বক্তব্য রাখেন। এরপরেই ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেন নিজেদের ৭ দফা দাবি উত্থাপন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্যরা মনযোগ সহকারে তাদের দাবিগুলো শোনেন।
নেতারা জানান, ঐক্যফ্রন্টের উত্থাপিত দাবিগুলো শুনার পর প্রধানমন্ত্রী বলেন সংবিধানের বাইরে গিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসকল দাবি রয়েছে তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
নেতারা জানান, আলোচনার এক পর্যায়ে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া ও রাজনৈতিক মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু করে।
এসময় খালেদা জিয়ার মুক্তি আদালতের বিষয় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা মামলা। আদালত মুক্তি দিলেই তিনি মুক্তি পাবেন।
এছাড়া রাজনৈতিক মামলার বিষয়ে তিনি ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের তালিকা দিতে বলেন। আর একাদশ সংসদ নির্বাচন পেছানোর দাবির বিপরীতে শেখ হাসিনা বলেন, এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এটি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু করার নেই।
এ সময় ড. কামাল নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়নের বিষয়টি উত্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি তো নির্বাচন করেছেন। ২০০১ সালের নির্বাচন ছাড়া কোনো নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার ছিল না। তাহলে এখন কেন চান? এছাড়া নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই বলেও জানানো হয়।
সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাংবাদিকদের বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সবাইকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচন কমিশনই যথেষ্ট নিরপেক্ষ অনুষ্ঠানের জন্য। সব দায়িত্ব তাদের। তফসিলের পর দায়িত্ব ইসির ওপর ন্যস্ত হবে। নির্বাচন নিয়ে ভয়ের, শঙ্কার কারণ নেই। তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে পর্যবেক্ষকরা আসবেন এতে আমাদের আপত্তি নেই।
কাদের বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা রাজনৈতিক মামলার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. কামাল ও ফখরুল সাহেবকে লক্ষ্য করে বলেছেন, যেসব মামলা মনে হয়েছে রাজনৈতিক মামলা তার একটা সংখ্যা পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
তিনি আরও বলেন, আমরা সংবিধানের বাইরে যেতে পারি না। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন হয় না। শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়েছেন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশ্বস্ত করছি। সরকার হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি সবার সহযোগিতা চেয়েছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা আদালতের বিষয়। এ বিষয় সংলাপের মধ্যে আসতে পারে না। দুইটি মামলা কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা।