এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যু আতঙ্ক যেন নগরবাসীর পিছু ছাড়ছে না। গত সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও বেড়েছে ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু সংখ্যা। অক্টোবর মাসে মোট ২ হাজার ৩৭৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। অর্থাৎ গত মাসে গড়ে প্রতিদিন ৭৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৯ অক্টোবর রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মিজানুর রহমানের মৃত্যু হয়। সেপ্টেম্বর মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৮৭ জন। মৃত্যুবরণ করেন চারজন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে আক্রান্ত ও মৃতের যে সংখ্যা বলা হচ্ছে প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে বেশি বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীতে স্বাস্থ্য অধিদফরের রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত শতশত বেসরকারি হাসপাতাল থাকলেও অধিদফতর হাতেগোনা ডজন দুয়েক হাসপাতাল থেকে নিয়মিত তথ্য পাচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, অধিদফতর থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়মিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তদের তথ্য পাঠাতে চিঠি দেয়া হলেও অনেক হাসপাতাল চিঠির উত্তর দেয়নি।
পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে গত তিন মাস যাবত বেশ কিছুসংখ্যক নারী, পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুসহ একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আক্রান্ত কিংবা মৃতের সংখ্যার তথ্য পায়নি অধিদফতর।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৮ হাজার ৬৩৩ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে মোট ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ তালিকায় শিশু, গৃহবধু, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও চিকিৎসক রয়েছেন।
মাসওয়ারি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা জানুয়ারিতে ২৬ জন, ফেব্রুয়ারি ৭ জন, মার্চ ৯ জন, এপ্রিল ২৯ জন, মে ৫২ জন, জুন ২৯৫ জন, জুলাই ৯৪৬ জন, আগস্ট ১ হাজার ৭৯৬ জন, সেপ্টেম্বর ৩ হাজার ৮৭ জন ও সর্বশেষ অক্টোবরে ২ হাজার ৩৭৬। তাদের মধ্যে জুন মাসে ৩ জন, জুলাইয়ে ৪ জন, আগস্টে ৬ জন, সেপ্টেম্বরে ৪ জন ও অক্টোবরে ৫ জন মারা যান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) মেডিসিন ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহসহ একাধিক চিকিৎসক জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, বিগত বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রোগীর প্রচণ্ড জ্বর, মাথা ও শরীর ব্যথা হতো। এখন শরীরে জ্বর জ্বর ভাব, সামান্য জ্বরের সঙ্গে হালকা ব্যথা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। হালকা জ্বর দেখে অনেকে মনে করেন এটি সাধারণ জ্বর, তেমন একটা পাত্তা দেন না- অথচ ততদিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন। একপর্যায়ে রোগীর প্লাটিলেট কমে কমায় চলে যাচ্ছে। কিছু বুঝে উঠার আগে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, এ বছর ডেঙ্গু রোগীর উপসর্গ দেখে বোঝা যায়, ডেঙ্গুর ধরন বদলেছে। একই ব্যক্তি চারবার পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্তই সর্বাধিক। দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে হেমোরেজিকের সংখ্যা বেশি। এটাতে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।
চিকিৎসকরা বলছেন, সামান্য জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোনো ধরনের এ্যাসপিরিন ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না। প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার না করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।