দেশে একজন নারী তার জীবনের প্রায় ১২ বছর রান্নাঘরে কাটিয়ে দেন। গৃহস্থালি কাজে নারীরা দিনে সময় দেন ৭ দশমিক ৭৭ ঘন্টা। আর পুরুষেরা সময় দেন ১ দশমিক ৩২ ঘন্টা। অথচ গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি নেই। এমনকি কোনো রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারেও তা উল্লেখ নেই। তাই দেশের সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গৃহস্থালি কাজের স্বীকৃতি, মূল্যায়ন ও পুনর্বন্টন করা দরকার।
সোমবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ‘গৃহস্থালি সেবামূলক কাজ, চাই স্বীকৃতি, মূল্যায়ন ও পুনর্বন্টন’ শীর্ষক এক আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। একশন এইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি (ডিইউডিএস) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
একশন এইডের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭ সালে গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে সংস্থাটি পরিচালিত গৃহস্থালি কাজে নারী ও পুরুষের সময় ব্যবহার শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, নারীরা এ কাজে সময় দেন দৈনিক ৭ দশমিক ৭৭ ঘন্টা ও পুরুষেরা ১ দশমিক ৩২ ঘন্টা। পুরুষের তুলনায় বেশি সময় কাজ করার কারণে নারীরা সময় সংকুলানের চাপে পড়ছেন। ফলে অনেক ক্ষেত্রে নারীরা অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত হতে পারেননা।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে গৃহস্থালি কাজকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এটা কিভাবে কমিয়ে আনা যায় সে সম্পর্কে কিছু বলা নেই। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। দলগুলোর ইশতেহারে সরাসরি গৃহস্থালি কাজকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশে গৃহস্থালি সেবামূলক কাজের স্বীকৃতি আছে। আমরা ছোট বেলায় দেখেছি মায়ের আঁচলে ঘরের চাবি বাধা থাকতো। অর্থাৎ স্বীকৃতি যে নেই তা নয়। তবে, আমাদের প্রধান বিষয় নারীর ক্ষমতায়ন। আর এটা সম্ভব হলেই অন্যান্য স্বীকৃতি মিলে যাবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে বহুদূর এগিয়ে গেছে। আমাদের নেতৃত্ব অত্যন্ত প্রগতিশীল। আওয়ামী লীগ নারীর ক্ষমতায়নকে বড় করে দেখে। বিগত কয়েক বছর ধরে দেশে যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, উন্নয়নের জোয়ার; তা দীর্ঘস্থায়ী করা দেশের মানুষেরই দায়িত্ব।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, নারীর কাজকে জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। কারণ নারীর গৃহস্থালি কাজের মূল্যমান অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। কেবলমাত্র জিডিপির সংজ্ঞা পরিবর্তন করা সম্ভব হলেই তা করা যাবে। তাই নারীর কাজকে ‘কতোটা সময় ব্যয় করছে’ তা দিয়ে নির্ধারণ করতে হবে। গৃহস্থালি কাজকে স্বীকৃতি দিতে চাইলে প্রথমেই সবার মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। কাজকে কাজ হিসেবে দেখতে হবে। নারী বলে এটা নারীর কাজ তা ভাবা যাবে না। অথবা এটা পুরুষের কাজ তাও মান্ধাতার মানসিকতা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য নূহ উল আলম লেনিন বলেন, গৃহকর্মী হিসেবে যেসব নারীরা আমাদের বাসাবাড়িতে কাজ করেন তারা নানাভাবে অবহেলিত। আমরা তাদের বলি ভুয়া। অথচ আমাদের মা বোনদের বলি ভদ্র। মানুষে মানুষে সমতা থাকা উচিত। সবাইকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করতে হবে।
একশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, এখন আর কেউ কাজ না করে থাকেন না। কেউ বলতে পারবেন না আমার মা বা বোন কাজ করছে না। তাদের কাজকে মূল্যায়ন করতে হবে। কাজকে কাজ হিসেবেই দেখতে হবে। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।