মিশ্র ধারায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মুনাফা
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-১১-০৬ ০৮:২৩:২৬
খারাপ সময় কাটছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের কোম্পানিগুলোর। জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বছরের নয় মাসে ব্যাংক খাতের একটি ছাড়া সবগুলো মুনাফায় থাকলেও ১৫টিরই মুনাফা কমেছে ৭২৯ কোটি টাকা। বাকি ১৫টির মুনাফা বেড়েছে ৬৭১ কোটি টাকা। অর্থাৎ সাকল্যে নিট মুনাফা কমেছে।
একই চিত্র মিলেছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে। এ খাতের ২২ কোম্পানির মধ্যে ছয়টি লোকসান করেছে। তাছাড়া ১৫ কোম্পানির নিট মুনাফা গত বছরের প্রথম নয় মাসের তুলনায় কমেছে ২৭১ কোটি টাকা। বিপরীতে বাকি সাতটির মুনাফা বেড়েছে ৫৬ কোটি টাকারও কম।
গত সেপ্টেম্বর বা তৃতীয় প্রান্তিক শেষে ব্যাংক এবং ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের তালিকাভুক্ত ৫২ কোম্পানির প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য মিলেছে। তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন আইসিবি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের কোম্পানি হলেও এর আর্থিক হিসাব শেষ হয় জুনে। ফলে এটির তথ্য এ পর্যালোচনায় নেওয়া হয়নি। তথ্য বিশ্নেষণে দেখা গেছে, এ দুই খাতের ৫২ কোম্পানির নিট মুনাফা নয় মাসে সোয়া ১ শতাংশ কমে চার হাজার ৫৯২ কোটি টাকায় নেমেছে। তবে তৃতীয় প্রান্তিকে নিট মুনাফা ৬ শতাংশ কমে ১ হাজার ৫৪১ কোটি টাকায় নেমেছে।
এমন খারাপ দশার কারণ মন্দ ঋণ বা খেলাপি ঋণ বলে মনে করেন বেসরকারি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংক প্রভিশনিং মুনাফা খেয়ে ফেলছে। কোম্পানির হিসাব থেকে মন্দ ঋণগুলো বাদ দেওয়া ছাড়া এ অবস্থা থেকে উত্তরণের অন্য কোনো উপায় নেই। ব্যাংকের মালিকপক্ষ এ বিষয়ে কাজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে কথা দিয়েছে। দেখা যাক, তারা কী করেন। তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমার ক্ষেত্রে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমাকেও বড় কারণ বলে জানান তিনি।
ব্যাংকের মুনাফার চিত্র :ব্যাংক খাতের তালিকাভুক্ত ৩০ কোম্পানির মধ্যে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক বরাবরের মতো লোকসানে আছে। বাকি ২৯টি মুনাফায় থাকলেও ১৫টির মুনাফা কমেছে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ব্যাংকটির নয় মাসের ইপিএস হয়েছে ২ টাকা ১ পয়সা, যা গত বছর ছিল ৮৪ পয়সা। টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় নিট মুনাফা ৭২ কোটি থেকে বেড়ে ১১৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মুনাফা বৃদ্ধিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পূবালী ব্যাংকের ইপিএস ৭৬ শতাংশ বেড়ে ২ টাকা ৬৯ পয়সায় উন্নীত হয়েছে, যা গত বছর ছিল ১ টাকা ৫৩ পয়সা। এ ছাড়া যমুনা ব্যাংকের ইপিএস ৭৩ পয়সা বেড়ে ২ টাকা ২৪ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। ইপিএস প্রবৃদ্ধিতে এর পরের অবস্থানে ছিল ব্যাংক এশিয়া, এনসিসি ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
বিপরীতে মুনাফায় সর্বাধিক নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি ছিল এক্সিম ব্যাংকের। ব্যাংকটির ইপিএস ১ টাকা ১৩ পয়সা কমে মাত্র ১১ পয়সায় নেমেছে। গত বছরের নয় মাসে ব্যাংকটি ১১৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল, এ বছর তা সাড়ে ১৫ কোটি টাকায় নেমেছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত :এদিকে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ছয় কোম্পানি বিআইএফসি, প্রাইম ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং ও বে-লিজিং মোট ১৮৪ কোটি টাকা লোকসান করেছে। বাকি ১৭টি মুনাফা করলেও এর মধ্যে ১০টিরই ইপিএস কমেছে।
এর মধ্যে ভালো মুনাফা করেছে আইপিডিসি। প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস গত বছরের তুলনায় ৩০ পয়সা বেড়ে ১ টাকা ৩১ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ইপিএস ৪৮ পয়সা থেকে ৬০ পয়সায়, ইউনাইটেড ফাইন্যান্সের ইপিএস ৯৬ পয়সা থেকে ১ টাকা ১২ পয়সায় এবং উত্তরা ফাইন্যান্সের ইপিএস ৭ টাকা ৮৭ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৪ পয়সায় উন্নীত হয়েছে।
বিপরীতে তৃতীয় প্রান্তিকে লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের লোকসান সংশ্নিষ্ট সবাইকে অবাক করেছে। প্রতিষ্ঠানটি গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ৯০ পয়সা বা প্রায় ২৯ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল। এ বছর একই প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি ২৪ পয়সা বা নিট ১২ কোটি টাকারও বেশি লোকসান করেছে। এতে বছরের প্রথম নয় মাসের ইপিএস ২ টাকা ২ পয়সা কমে মাত্র ২৬ পয়সায় নেমেছে।