আম ছাড়া প্রাণ ফ্রুটো হয় না

নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০১৮-১১-১৩ ১০:৪৮:১৯


ঢাকা থেকে বসুন্ধরা, ৩০০ ফিটের রাস্তা। অতঃপর আরও এক ঘণ্টা গাড়ির চাকা ঘুরলেই পেয়ে যাবেন গাজীপুরের কালীগঞ্জ। যেখানে গড়ে উঠেছে প্রাণ গ্রুপের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। নামটা পার্ক হলেও এখানেই নিবিড় যত্নে তৈরি হয় আম থেকে আমের জুস। শনিবারই সেখানে হয়ে গেলো প্রাণ ফ্রুটোর ওপেন ডোর চ্যালেঞ্জ- টু।
চ্যালেঞ্জে অন্তত ৬০ জন মানুষকে দেখানো হয় কিভাবে প্রাণের কারখানায় প্রাণ ফ্রুটো জুস তৈরি হয়। সরাসরি কারখানা দেখতে এই চ্যালেঞ্জে ছিলেন শিক্ষক, চাকুরিজীবী, অভিনেতাসহ বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধি। চমক হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্বাচক ও সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার, চলচ্চিত্র অভিনেতা নিরব, তুসি ও সংগীতশিল্পী মাসুম হোসেন সুমন।
এই চ্যালেঞ্জ অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেন প্রাণ ফ্রুটোর হেড অব মার্কেটিং আতিকুর রহমান। আরটিভি অনলাইনের পক্ষ থেকে কারখানা ভিজিটে অংশ নেন এই প্রতিবেদক ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ আনোয়ার জাহিদ।
সরাসরি কারখানা পরিদর্শনে দেখা যায়, বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে অবস্থিত কারখানাটিতে প্রাণ ফ্রুটোর প্রায় সব ধরনের পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ধাপের পর সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেরিয়ে আসছে প্রাণ ফ্রুটোর বোতল।
প্রাণ ফ্রুটো উৎপাদনের মূল প্রক্রিয়াটা শুরু হয় আমের পাল্প নেয়া থেকে। একটি পাইপের সাহায্যে আমের পাল্প বিশাল আকারের ব্লেন্ডিং মেশিনে পৌঁছে। সেখানে এটি পাস্তুরায়জেশন হয়ে আরেকটি ব্লেন্ডিং মেশিনে পৌছে। এরপর পাল্পের সঙ্গে অন্যান্য উপাদান মিশে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় চূড়ান্তভাবে তৈরি হয়। সেখান থেকে যায় বোতল ও প্যাকেজিং সেন্টারে।
এখানে কোনও ধরনের হাতে স্পর্শ ছাড়াই প্রতিটি বোতলে জুস ভর্তি হয়। তার আগে মেশিনের সাহায্যে প্লাস্টিকের বোতলগুলো ওয়াশ করা হয়ে থাকে। জুস বোতলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূর্ণ হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতি বোতলে ছিপি দেয়া হয়। এরপর তার গায়ে মোড়ক ও উৎপাদন তারিখ দেয়া হয়; সেটাও স্বয়ংক্রিয়ভাবে।
কারখানায় কর্মরত শ্রমিকরা জানান, পুরো প্রক্রিয়ায় এক বিন্দু হাতের স্পর্শ থাকে না। কোনও বোতল যদি নিচে পড়ে যায়, তখনই সেটা হাত দিয়ে তুলে দেয়া হয়। প্রতি ঘণ্টায় এই কারখানায় ৩০ হাজার বোতল প্রাণ ফ্রুটো উৎপাদিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে ৫০০ বোতন জুস তৈরি হয়ে থাকে।
আমের পাল্প কখন সংরক্ষণ করা হয়- জানতে চাইলে কারখানার একজন কর্মকর্তা বলেন, সারা বাংলাদেশে প্রায় এক লাখ কৃষকের সঙ্গে প্রাণের বন্ধন আছে। আমের মৌসুমে আমরা তাদের কাছ থেকে আম সংগ্রহ করি। শুধু সংগ্রহ না, ওই আম চাষিদের আমরা বিনামূল্যে সার, প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এরপর ফ্রিজিং পদ্ধতিতে পুরো বছরের জন্য পাল্প আকারে সংরক্ষণ করি । সাধারণত এভাবে পাল্প দুই বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।
প্রাণের কারখানা পরিদর্শনের সময় অংশগ্রহণকারীরা আমের পাল্প ও প্যাকেজিং হওয়ার আগে ফ্রুটোর গরম গরম স্বাদ গ্রহণ করেন।
কারখানা পরিদর্শন শেষে অংশগ্রহণকারীরা এই প্রতিবেদকের কাছে আম ছাড়া যে প্রাণের ফ্রুটো হয় না তা তুলে ধরেন।
প্রাণ ফ্রুটোর হেড অব মার্কেটিং আতিকুর রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, কিছু মিডিয়া আসলে হলুদ সাংবাদিকতা করে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাতে চায়। আমাদের প্রতিষ্ঠান সব সময় সবার জন্য উম্মুক্ত। কেউ সরাসরি আমাদের পণ্যে উৎপাদন দেখতে চাইলে আমরা যেকোনও সময় তাদের দেখানোর ব্যবস্থা করতে প্রস্তুত। এজন্য তাদের বলবো- আপনারা স্বচক্ষে দেখুন, তারপর বলুন- আম ছাড়া প্রাণ ফ্রুটো উৎপাদন হয় কিনা? আমরা পণ্য নিয়ে যেকোনও ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে রাজি আছি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ তিন দশকে আমাদের কোম্পানি এই পর্যন্ত এসেছে। টানা ১৪ বার শীর্ষ বৃহৎ শিল্প হিসেবে সরকারের কাছ থেকে পুরস্কার পেয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত ১৪১টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে এখানে উৎপাদিত পণ্য। আমরা কখনও চাই না- মানুষকে ভেজাল খাওয়াতে। আমরা চাই- প্রাণ আরও অনেক দূর ছড়িয়ে পড়বে।