কৃষিপণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য আর্জেন্টিনার খ্যাতি রয়েছে। গম, ভুট্টা, সয়াবিন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য রপ্তানি করে দেশটি। তবে ভৌগোলিকভাবেই খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ আর্জেন্টিনা। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদে আর্জেন্টিনার অবস্থান দ্বিতীয়। পণ্যটির উত্তোলন বাড়িয়েছে দেশটি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পর জ্বালানি পণ্যটির বাড়তি অংশ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসে (এলএনজি) রূপান্তর করে রপ্তানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ২০১৯ সালের মধ্যেই এলএনজি রফতানিকারক দেশগুলোর তালিকায় নাম লেখাতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। খবর অয়েলপ্রাইসডটকম ও ব্লুমবার্গ।
আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় শীর্ষ প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলনকারী দেশ। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের পাতাগোনিয়া অঞ্চলের নাওকুয়েন প্রদেশে ভাকা মুয়ের্তা গ্যাসক্ষেত্রের অবস্থান। ২০১১ সালের মে মাসে এখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান মেলে। পরের বছর থেকেই শুরু হয় উত্তোলন কার্যক্রম। আর্জেন্টিনার অন্যতম বড় গ্যাসের মজুদ বিবেচনা করা হয় ভাকা মুয়ের্তাকে। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে শেল গ্যাস (পাথুরে ভূমি থেকে উত্তোলন হওয়া প্রাকৃতিক গ্যাস) মজুদ থাকা হাতেগোনা কয়েকটি জায়গার মধ্যে এটি অন্যতম। প্রাথমিকভাবে এ ক্ষেত্র থেকে উত্তোলন হওয়া প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজিতে রূপান্তরের পর রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছে আর্জেন্টিনা সরকার। জ্বালানি পণ্যটির রপ্তানিতে মূল দায়িত্ব পালন করবে আর্জেন্টাইন জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ওয়াইপিএফ।
এলএনজি রফতানি শুরুর জন্য এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বুলগেরিয়ান শিপিং জায়ান্ট এক্সমারের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করেছে। ১০ বছর মেয়াদি এ চুক্তির আওতায় আর্জেন্টিনা থেকে এলএনজি রপ্তানিতে ওয়াইপিএফকে জ্বালানিবাহী কার্গো জাহাজ সরবরাহ করবে এক্সমার। একই সঙ্গে জ্বালানি পণ্যটির রপ্তানির জন্য আর্জেন্টিনার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাহিয়া ব্লান্সা বন্দরে একটি ভাসমান এলএনজি ইউনিট তৈরি করা হবে। এরই মধ্যে ভাসমান এলএনজি ইউনিট তৈরির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসভিত্তিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠান এক্সলারেট এনার্জি। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে ওয়াইপিএফ। দুটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে বাহিয়া ব্লান্সা বন্দরসংলগ্ন এলাকায় সমীক্ষা পরিচালনা করবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা রয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) এলএনজি রপ্তানিকারকদের তালিকায় কাতার, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, নাইজেরিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর মতো দেশগুলোর পাশে আর্জেন্টিনা আনুষ্ঠানিকভাবে নাম লেখাবে বলে এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে ওয়াইপিএফ ও এক্সমার। এতে বলা হয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে বছরে পাঁচ লাখ টন এলএনজি রফতানি করতে পারবে আর্জেন্টিনা।
এ বিষয়ে ওয়াইপিএফের প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল গুতেরেজ বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, জাপান, পাকিস্তান, ভারত, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলোয় এলএনজির চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। এটা আমাদের সামনে বড় একটি সুযোগ। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এশিয়ার দেশগুলোয় এলএনজি রফতানির চেষ্টা করা হবে। আর্জেন্টিনার ভৌগোলিক অবস্থান এশিয়ার দেশগুলোয় জ্বালানি রপ্তানির জন্য বেশ সুবিধাজনক। এতে পরিবহন ব্যয় অনেক কম লাগবে। ফলে এলএনজি বাণিজ্যে আমদানিকারক-রপ্তানিকারক উভয়েই লাভবান হবে। এ কারণে আর্জেন্টিনার এলএনজি রপ্তানি খাত দ্রুত বিকাশ লাভ করবে। নতুন ক্রেতারা আর্জেন্টাইন এলএনজিতে আকৃষ্ট হবেন।
প্রতি বছর জুন-আগস্ট পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় শীতকাল চলে। এ সময় দেশটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা অনেকাংশে বেড়ে যায়। সেপ্টেম্বর-নভেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে বসন্তকাল। এ সময় প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা কমতে শুরু করে। পরবর্তী সময়ে ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আর্জেন্টিনায় গ্রীষ্ম মৌসুম। গরমকালে দেশটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার ন্যূনতম পর্যায়ে নেমে আসে। তাই গ্রীষ্মকালে উদ্বৃত্ত প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানি করলে জ্বালানি পণ্যটির অভ্যন্তরীণ চাহিদায় কোনো ঘাটতি তৈরি হবে না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এলএনজিতে রূপান্তরের পর প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আর্জেন্টিনা সরকার।