রাজনীতির মাঠে এবার জিয়ার ভাই!
প্রকাশ: ২০১৫-১১-০৪ ২০:০০:৩৭
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের চিরকুমার ভাই আহমেদ কামালকে নিয়ে রাজনীতিতে কানাঘুষা চলছে। বলা হচ্ছে, তিনি শিগগিরই রাজনীতিতে তার অবস্থান জানান দেবেন। আবার বার্ধক্যে নুইয়ে পড়া এই ব্যক্তিকে ঘিরে যার নাম আলোচিত হচ্ছে তিনি হচ্ছে শরিফুল আলম ডন বা এস আলম ডন। এই ডন ঘিরে অভিযোগ রয়েছে, তিনি জিয়াউর রহমান ভাইকে ব্যবহার করে আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন।
তেমনি একটি আলামত পাওয়া গেল আজ (বুধবার)। রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো ‘‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমাসহ মৃত পিতা-মাতা ও পরিবার বর্গের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল”।
জিয়াউর রহমানের একমাত্র জীবিত ছোট ভাই আহমেদ কামালের পক্ষ থেকে এই আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন তার কথিত ভাতিজা এস ইসলাম ডন।
তবে জানা যায়, এস আলম ডন খালেদা জিয়ার মায়ের এক বোন লিলিমন বিবির দিকের আত্মীয়। তিনি সম্পর্কে খালেদা জিয়ার ভাগনে হন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা থাকবেন এমন প্রচারণা বেশ কিছু দিন আগে থেকেই চালানো হয়েছিল। কিন্তু নেতাদের সেখানে যাওয়া তো দূরের কথা দাওয়াত প্রাপ্তির বিষয়টিও স্বীকার করেননি কেউ।
জিয়াউর রহমানের ভাইয়ের এ অনুষ্ঠান ঘিরে রাজনীতিতে কয়েকদিন ধরে বেশ জল্পনা কল্পনা চলছিল। অনুষ্ঠানে পাঁচশোর মতো লোক উপস্থিত হয়েছিল, যাদের অধিকাংশের বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে।
অনুষ্ঠানে আগত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। এর মধ্যে একজন মো. এনায়েত উল্লাহ। তিনি নিজেকে দনিয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি বলে পরিচয় দিয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে কেন এসেছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে আছি। জিয়াউর রহমানকে ভালোবাসি তাই এসেছি।’
মিলাদ মাহফিল কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয় উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘বাপ্পী ভাই (আহমেদ কামাল) আসতে বলছে তাই এসেছি।’
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন বলেন, ভাই সাংবাদিকতা করেন বোঝেন না, লোকজন কীভাবে আসে!
এদিকে ক’দিন আগে যিনি বারডেম হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময় চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন, তার মতো ব্যক্তি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে হল ভাড়া করে মিলাদ মাহফিল আয়োজন করার টাকা পেলেন কোথায়? আর এর প্রয়োজনই বা বোধ করলেন কেন? এ নিয়েও অনেকের কৌতূহল রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আহমেদ কামাল লিখিত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘দেশে বর্তমান সরকার যে গণতন্ত্রের কথা বলছে এটা গণতন্ত্র নয়। এখন এক নায়কতন্ত্র চলছে। এই নাজুক পরিস্থিতিতে দেশের মঙ্গলের জন্য সঠিক ও সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
তবে এটা একান্তই পারিবারিক মিলাদ মাহফিল উল্লেখ করে বলেন, ‘এটাকে অন্যভাবে না দেখার জন্য আমি সকলকে অনুরোধ করছি। তবে যদি কোনো দিন রাজনীতিতে আসি আপনাদের সবাইকে জানিয়ে আসবো।’
তিনি বলেন, ‘মিলাদ মাহফিল আয়োজন করার পেছনে ছোট একটা তাগিদ বোধ করছিলাম। আপনারা জানেন কিছুদিন আগে হঠাৎ করে আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলাম। কিন্তু সমগ্র দেশবাসী ও আপনাদের দোয়ায় এবং আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছি।’
সুস্থ হওয়ার পর থেকেই আমার মরহুম পিতা মনছুর রহমান, মাতা জাহানারা খাতুন ও ভাইদের এবং পরিবার বর্গের আত্মার মাগফিরাতের জন্য দোয়া মাহফিল আয়োজন করার তাগিদ বোধ থেকেই এই মাহফিলের আয়োজন করেছেন বলে তিনি জানান।
একই সঙ্গে বিএনপি এবং সুধী সমাজের অনেকের ফোন নম্বর ও ঠিকানা না পাওয়ায় দাওয়াত দিতে পারেননি বলে দুঃখও প্রকাশ করেন আহমেদ কামাল।
মিলাদ মাহফিল শেষে রহস্যময় ভাতিজা এস ইসলাম ডন বলেন, ‘মামলা-হামলা সরকারি দমন পীড়ন, আর যানজটের কারণে অনেকে অনুষ্ঠানে আসতে পারেনি। বিএনিপর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসতেন। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে এ অনুষ্ঠানকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি আহমেদ কামালের অনুষ্ঠানে কোনো সরকারি ষড়যন্ত্র আছে কি না সাংবাদিকদের খুঁজে বের করতে বলেন। মিলাদ মাহফিলে না যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রাধান্য পায়।’
এদিকে দোয়া মাহফিলকে ঘিরে দুপুরের পর থেকে অনুষ্ঠালস্থলের বাইরে উল্লেখযোগ্য পুলিশের উপস্থিতি দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত জুলইয়ের ২৫ তারিখে আহমেদ কামাল অসুস্থ হয়ে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন বিএনিপর সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন তাকে দেখতে যান। তবে বেগম খালেদা জিয়া তাকে দেখতে যাননি।
আহমেদ কামাল সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়। হাসপাতাল থেকে আহমেদ কামাল ছিলেন শান্তিনগরে ডনের বাসায়। ডনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার বাসায় গেলেও আহমেদ কামালের শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে দেখা করা সম্ভব নয় বলে জানান তিনি। গত ৩ মাসে ডনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বারবার তারিখ পরিবর্তন করেন।
এতদিন নীরবে থেকে হঠাৎ করে আহমেদ কামাল কেন প্রকাশ্যে আসতে চাইছেন তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের কথা শোনা যাচ্ছে।
জিয়াউর রহমানেরা পাঁচ ভাই। জিয়াসহ চারজন মারা গেছেন। অপর তিন ভাই হলেন রেজাউর রহমান, মিজানুর রহমান ও খলিলুর রহমান। তাদের বাবা-মাও মারা গেছেন। তাদের একমাত্র জীবিত ভাই আহমেদ কামাল। ১৯৭৮ সালে বিএনপির প্রতিষ্ঠার সময় নেপথ্যে তার কিছু ভূমিকা ছিল। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের সময়েও তিনি একবার রাজনীতিতে তৎপর হয়েছিলেন।
তবে ডনের রাজনীতিতে আসার ইচ্ছে আছে এ ব্যাপারে এর আগে তিনি গণমাধ্যমে বলেছিলেন, এখনো সে পর্যায়ে আসিনি। ভবিষ্যতে দেখা যাক। শরীর ঠিক থাকলে ভবিষ্যতে দেখা যাবে। সূত্র: বাংলামেইল
সানবিডি/ঢাকা/এসএস