বাবা পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ। একটি দলের প্রতিষ্ঠাতা। এখনও সভাপতি পদে বহাল। রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ারও। জীবনে বহু নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
এবার বাবার সঙ্গে ভোটের মাঠে দেখা যাবে তার মেয়েকে। বলছি টাঙ্গাইলের বিখ্যাত সিদ্দিকী পরিবারের সদস্য কাদের সিদ্দিকী ও তার মেয়ে কুড়ি সিদ্দিকীর কথা।
কাদের সিদ্দিকী এবার দুটি আসনে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। সেই দুটি আসনের একটি কালিহাতী ও অন্যটি টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসন।
টাঙ্গাইল-৮ আসনে কাদের সিদ্দিকীর পাশাপাশি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তার মেয়ে কুড়ি সিদ্দিকী। দুজনই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ থেকে নির্বাচন করতে চাইছেন।
গত বুধবার মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিনে তারা মনোনয়নপত্র জমা দেন।
ভোটের মাঠে বাপ-মেয়ের লড়াই নিয়ে টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
জানা গেছে, দুজন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ভোটের মাঠে থাকবেন একজনই।
স্থানীয়রা বলছেন, ঋণখেলাপির কারণে বাবা কাদের সিদ্দিকীর প্রার্থিতা বাতিল হলে কুড়ি ঐক্যফ্রন্টের হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন।
এ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমানও প্রার্থী হয়েছেন।
তিনি জানান, টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনে ঐক্যফ্রন্টের এমপি প্রার্থী হিসেবে শুধু বাবা-মেয়েই মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি, আসনটির তৃতীয় প্রার্থী হিসেবে তিনিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ভোটের মাঠে সিদ্দিকী পরিবারের বাহাস নতুন নয়। এর আগেও সিদ্দিকী পরিবারের একাধিক সদস্য একই আসন থেকে নির্বাচন করেছেন।
এবার যোগ হয়েছেন তাদের পরবর্তী প্রজন্ম।
কাদের সিদ্দিকী-কুড়ি সিদ্দিকী ছাড়াও এবার নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন এই পরিবারের আরও তিনজন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য, বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী।তিনি টাঙ্গাইল-৪ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
আরেক ভাই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সরকারি সাদত কলেজের সাবেক ভিপি শামীম আল মনসুর আজাদ সিদ্দিকীও একই আসনে নিজ দলের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
সিদ্দিকীদের আরেক ভাই মুরাদ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৫ সদর আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
সিদ্দিকীদের অপর ভাই বেলাল সিদ্দিকী রাজনীতি থেকে দূরে, তাই তিনি নির্বাচন করছেন না। তিনি প্রবাসে থাকেন।
লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতী থেকে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, ১৯৭৩, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। তখন তাকে শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার পূর্ণ মন্ত্রী করা হয়।
ওই বছরই সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে পবিত্র হজ ও তাবলিগ জামাত এবং প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। তার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ কারণে মন্ত্রিত্ব ও দলীয় পদ হারান সিদ্দিকী পরিবারের এ বড় সন্তান। পরে সংসদ থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি।
এই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রধান। মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর প্র্রধান স্বাধীনতার পর বীরোত্তম খেতাব পান।
একসময় আওয়ামী লীগ করলেও মতবিরোধের জেরে দল ত্যাগ করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেন। এর পর এই দল থেকেই একাধিক নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।
এই আসনে ২০১৭ সালের জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী নির্বাচন করার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিলেও ঋণখেলাপির কারণে তার প্রার্থিতা অযোগ্য ঘোষণা করেন উচ্চ আদালত।
সিদ্দিকীদের আরেক ভাই মুরাদ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৫ সদর আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মুরাদ সিদ্দিকী স্থানীয় রাজনীতিতে প্রিয়মুখ।