এই প্রথমবারের মত বাংলাদেশের সামনে তৈরি হলো টেস্টে ইনিংস ব্যাবধানে জয়ের সুযোগ। নিজেরা প্রথম ইনিংসে ৫০৮ রান করার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যে অলআউট করে দিলো মাত্র ১১১ রানে!
প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশ পেয়ে গেলো ৩৯৭ রানের বিশাল লিড। ক্যারিবীয়দের হেসে-খেলে ইনিংস ব্যবধানে হারানোর সুযোগ এখন বাংলাদেশের সামনে।
মেহেদী হাসান মিরাজ আর সাকিব আল হাসানের মায়াবী ঘূর্ণি ফাঁদে পড়ে মাত্র ১১১ রানেই অলআউট হয়ে গেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের ১০ উইকেটের ৭টিই নিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং ৩টি নিলেন সাকিব আল হাসান। বাকি বোলাররা হয়ে থাকলেন দর্শক।
সাম্প্রতিক অতীতে এতটা বিপর্যয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর কখনও পড়েছিল কি না সন্দেহ। মিরপুরের শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেটকে যখন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যখন ব্যাটিং করছিল, তখন মনে হচ্ছিল যেন এই উইকেট ব্যাটিংয়ের স্বর্গরাজ্য। কিন্তু যখন ক্যারিবীয়রা ব্যাটিং করতে আসলো তখন মনে হচ্ছে এখানে তো ব্যাটসম্যানদের জন্য কিছুই নেই। পুরোপুরি স্পিনারদের জন্য বানানো উইকেট।
স্পিনারদের জন্যই বানানো হয়তো। না হয় কি বাংলাদেশ আর চার স্পেশালিস্ট স্পিনার নিয়ে খেলে কিংবা একজন পেস বোলারও না নিয়ে খেলে! তার ফল হাতে নাতেই পেতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে সাকিব আর মিরাজ মিলে যেভাবে ক্যারিবীয়দের ওপর মায়াবি ঘূর্ণি জাল বিস্তার করেছিলেন, তাতেই দিশেহারা হয়ে পড়েছিল সফরকারীরা।
দ্বিতীয় দিন শেষ বিকেলে ৫জন আউট হয়েছিলেন ক্যারিবীয়দের, যাদের সবগুলোই বোল্ড। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে যা এই প্রথম। কোনো দলের সেরা ৫ ব্যাটসম্যানই বোল্ড হলেন, যার সবগুলোই স্পিনারদের হাতে। আবার ক্রিকেটের ইতিহাসে ১২৮ বছরে এই প্রথম সেরা ৫ জন ব্যাটসম্যানই হলেন বোল্ড।
৫ উইকেটে ৭৫ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। উইকেটে আশার প্রতীক হয়ে ছিলেন শিমরন হেটমায়ার। তিনি ছিলেন ৩২ রানে এবং শ্যান ডওরিচ ছিলেন ১৭ রানে অপরাজিত। তৃতীয় দিন ক্যারিবীয়দের প্রত্যাশা ছিল এই জুটি হয়তো কিছু একটা করে দেখাতে পারবে। তাদের সম্মানটাও হয়তো বাঁচাতে পারবে।
কিন্তু দিনের শুরুতে সাকিব আল হাসানকে হেটমায়ার ছক্কা মেরে শুরু করে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিলেও সেটা ছিল শুধুই অলীক কল্পনা। কারণ, এই জুটি মাত্র ১১ রান যোগ করার পরই মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণি ফাঁদে পড়ে যায়।
মিরাজের হাতেই রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন হেটমায়ার। ২৯ থেকে ৮৬, ৫২ রানের একটি দারুণ জুটি গড়েছিলেন হেটমায়ার আর ডওরিচ। অবশেষে সেটাও ভেঙে দিলেন মিরাজ। ৩৯ রান করে ফিরে যান হেটমায়ার।
এরপর মাঠে নামেন দেবেন্দ্র বিশু। কিন্তু তিনি টিকতে পারলেন কেবল ১০ বল। রান করলেন ১টি। অবশেষে মিরাজের বলেই সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান বিশু। ৮৮ রানে পড়লো ৭ম উইকেট।
মাঠে নামলেন কেমার রোচ। তিনিও করলেন ১ রান। মিরাজের বলে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনিও। ৬ উইকেট পেয়ে গেলেন মিরাজ। ৯২ রানে পড়লো ৮ম উইকেট।
পরের উইকেটটিও নিলেন মিরাজ। এবার তার বলে বিদায় নিলেন ডওরিচ। রিভিউ নিয়েছিলেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান। কিন্তু পরিস্কার এলবিডব্লিউ। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তকে বাতিল করতে পারেননি টিভি আম্পায়ার।
ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ফেললেন মিরাজ। নিলেন ৭ উইকেট। শেষ উইকেটটি নিলেন সাকিব আল হাসান। ৩৭তম ওভারের ৪র্থ বলেই শেমরান লুইসকে লেগ বিফোর করে দেন সাকিব। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ব্যাটসম্যান।