ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিতর্কের পটভূমিতেই জনপ্রিয় বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন।
অসহিষ্ণুতা ভারতকে অন্ধকার যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, নিজের জন্মদিনে শাহরুখ খান এই মন্তব্য করার পর বিজেপির একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা হুমকি দিয়েছেন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা এবার তার সিনেমা বয়কট করা শুরু করবে।
এর পাশাপাশি পাকিস্তানি গজল শিল্পী গুলাম আলিও জানিয়ে দিয়েছেন, ভারতে পরিবেশ যতদিন না ঠিক হচ্ছে ততদিন তিনি আর সে দেশে কোনও অনুষ্ঠানে গান গাইতে যাবেন না।
ভারতে অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে লেখক-বিজ্ঞানী-ইতিহাসবিদদের প্রতিবাদকে বিজেপি নেতৃত্ব আগেই ‘‘সাজানো’’ বলে নাকচ করে দিয়েছে, এবারে বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খানকেও দলের নেতারা সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখলেন। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়ভার্গীয়া এর আগেই টুইট করেছিলেন শাহরুখের ‘‘হৃদয় পড়ে আছে পাকিস্তানে’’।
তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে সেই টুইট তুলে নিলেও তিনি আজ জানাতে ভোলেন নি ভারত যদি অসহিষ্ণুই হত, তাহলে শাহরুখ খানের মতো একজন মুসলিম অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের পরই দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনপ্রিয় তারকা হতে পারতেন না।
বিজেপির কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা ও সন্ন্যাসী এমপি মহন্ত আদিত্যনাথ আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে যা বলেছেন তার অর্থ শাহরুখ খান যেন মুখ সামলে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘‘শাহরুখ যেন এটা মনে রাখেন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা যদি তাঁর ছবি বয়কট করতে শুরু করেন তাহলে একজন সাধারণ মুসলিমের মতো তাকেও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে। কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই দেশের বদনাম করতে ও বিজেপির বদনাম করতে কেউ যখন এভাবে বিশ্বের সবচেয়ে সহিষ্ণু সমাজকে অপমান করে – তখন তাকে সামাজিকভাবে বয়কট করা দরকার।’’
কিন্তু শাহরুখ খান কী এমন বলেছিলেন যা বিজেপি নেতাদের এতটা গাত্রদাহের কারণ হচ্ছে?
নিজের ৫০তম জন্মদিনে তিনি আসলে দেশের একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়ে মন্তব্য করেন ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি দেশকে অন্ধকার যুগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শাহরুখ খান সেখানে আরও বলেন, ‘‘ধর্মীয় সহিষ্ণুতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আর কিছুই নয়। এভাবে চলতে থাকলে ভারতীয়রা বাইরে গিয়ে কীভাবে মুখ দেখাবেন, যখন তাদের শুনতে হবে তোমাদের দেশে এমনটা হয় না কি?’’
শাহরুখ খানকে এর আগেও পাকিস্তানের দালাল বলে গালাগাল শুনতে হয়েছে – এই সাক্ষাৎকারের পর যথারীতি সেই আক্রমণও বেড়েছে।
আর এই বিতর্কের মধ্যে পাকিস্তানি গজল শিল্পী গুলাম আলিও আজ বুধবার জানিয়ে দিয়েছেন, রবিবার দিল্লিতে তাঁর যে অনুষ্ঠানে গাইবার কথা ছিল সেটা বাতিল করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভারতে আগামী দিনে পরিস্থিতির উন্নতি না-হলে তিনি আর কখনওই গাইতে আসবেন না।
ভারতে ভীষণই জনপ্রিয় গুলাম আলির এই তীব্র অভিমানের কারণ, গত মাসেই মুম্বাইতে শিবসেনার প্রতিবাদের মুখে তার কনসার্ট বাতিল করতে হয়েছে। প্রবীণ শিল্পী তাই স্থির করেছেন, নিজেকে নিয়ে তিনি ‘‘রাজনীতির খেলা’’ খেলতে দেবেন না।
গুলাম আলির কনসার্ট বাতিল হওয়ায় দিল্লির বহু শ্রোতা যেমন হতাশ, তেমনি শাহরুখ খানের ওপর আক্রমণকেও অনেকেই ভাল চোখে দেখছেন না।বিরোধী দল কংগ্রেস বলছে, বিজেপি যদি ভাবে তারা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করে, তাহলে তারা ভুল ভাবছে।
দলীয় মুখপাত্র আনন্দ শর্মার কথায়, ‘‘বিজেপি-সঙ্ঘ পরিবারকে ভারতের নাগরিকরা এই অধিকার দেয়নি যে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভাবনা বা সংস্কৃতিকে তুলে ধরবে। তাদের মাথা থেকে এই ভুল ধারণাটা বের করে দেওয়া দরকার। ২০১৪-র নির্বাচনেও ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি – অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের বেশির ভাগের ভোট কিন্তু তারা তখনও পায়নি।’’
কিন্তু বিজেপির প্রাপ্ত ভোটের হার যাই হোক, বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর দলের এক শ্রেণীর কট্টরপন্থী নেতা যে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতাকে ক্রমাগত ইন্ধন দিয়ে চলছেন তাতে কোনও ভুল নেই।
ভারতে গানবাজনা বা সিনেমার যে দুনিয়া অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্য পরিচিত, সেটাও এখন তার আঁচ থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
সূত্র: বিবিসি
সানবিডি/ঢাকা/রাআ