মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি মওকুফের সুবিধা আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত না বাড়ানোর সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এর আগে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) আওতায় মোটরসাইকেলের বর্ধিত ৪০ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন ফি মওকুফের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অর্থ বিভাগের কাছে আবেদন করে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বিআরটিএর আবেদনে সাড়া না দিয়ে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল-বিরোধী অভিযান চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ সূত্রে এসব খবর জানা গেছে। উল্লেখ, ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি ৪০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, বিআরটিএর আওতায় বর্তমানে রেজিস্ট্রিকৃত মোটরসাইকেলের সংখ্যা ১২ লাখ ৫১ হাজার ৮০৫টি এবং মোটরসাইকেল চালানোর জন্য ইস্যু করা ড্রাইভিং লাইসেন্সের সংখ্যা ৫ লাখ ২৪ হাজার ৮৮৫টি। গত পাঁচ বছরে মোট ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮৭৫টি মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। এ সময় এ খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৭৩ কোটি ৪৪ লাখ ১৯ হাজার টাকা। অর্থাৎ এ খাতে বাৎসরিক রাজস্ব আয় ১৩০ কোটি টাকারও বেশি।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করা মানে বিশাল ঝামেলার বিষয়। বিশেষ করে রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে বিআরটিএর কর্মকর্তা থেকে সেখানকার দালালদের খপ্পরে পড়ে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দেওয়ার পরও রেজিস্ট্রেশন পেতে নানা ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। এ ছাড়া রেজিস্ট্রেশন ছাড়া সড়কে চলতে তেমন সমস্যা হয় না। খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাই রেজিস্ট্রেশন ছাড়া মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন। এ ছাড়া ঝামেলা এড়াতে বেশির ভাগ মোটরসাইকেল চালক ড্রাইভিং লাইসেন্সও নেয় না। ফলে সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর পদ্ধতি সহজ করা হলেও এ খাতে সরকারের বিপুল রাজস্ব আয় হবে।
অর্থ বিভাগের কাছে করা বিআরটিএর আবেদনে বলা হয়েছে, মোটরসাইকেল রেজিস্ট্রেশনকালীন ১০ বছরের জন্য একবারই রোড ট্যাক্স নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে আর কোনো রোড ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয় না, অন্যান্য মোটরযানের মতো মোটরসাইকেলের বছর বছর ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে হয় না এবং মালিকানা বদল না হলে মোটরসাইকেলের মালিকরা সাধারণত একবারই বিআরটিএ অফিসে আসেন। তবু মোটরসাইকেল মালিকদের অনেকেই মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন করতে আগ্রহী হন না। এদিকে বাংলাদেশ মোটরসাইকেল অ্যাসেম্বলার অ্যান্ড ম্যানুফাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বিক্রীত মোটরসাইকেলের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন হয় না।
সূত্র জানায়, ২০০২ সালে মোটরসাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ফি ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ১০০ সিসি পর্যন্ত ৩ হাজার টাকা এবং ইঞ্জিন ক্যাপাসিটি ১০০ সিসির ঊর্ধ্বে ৪ হাজার টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ মোটরযানের বিভিন্ন ফিস বাড়ানোর বিষয়ে অর্থ বিভাগের মতামত চেয়ে একটি প্রস্তাব পাঠায়। সে সময় অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত ব্যক্তিগত মোটরযানের বিভিন্ন ফিস ৪০ শতাংশ বাড়ানোর পরিবর্তে ৮০ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে মতামত দেন।
সূত্র জানায়, ২০০২ সালের পর ফিস বাড়ানো না হওয়ায় ২০০৫ সালে অর্থ বিভাগের সম্মতিকৃত পুনর্নির্ধারিত ফিস বাস্তবায়ন করতে না পারা এবং সড়ক পরিবহণ উপদেষ্টা পরিষদের ফি পুনর্নির্ধারণের বিষয়টি পাঠাতে হলে তা দীর্ঘসূত্রতার মধ্যে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ফিস ৪০ শতাংশ বাড়াতেই অর্থমন্ত্রী সম্মতি দেন।
বিগত কয়েক বছরে খেলাপি মোটরযানের মালিকদের জরিমানা মওকুফ বা শিথিলের মাধ্যমে মেয়াদ উত্তীর্ণ যানবাহনের রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন, ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ সব ধরনের কর/ফি পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হলেও মোটরযান মালিকদের মধ্যে এ সুযোগ নেওয়ার তেমন উৎসাহ দেখা যায়নি এবং খেলাপি হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। ফলে দিন দিন বিপুলসংখ্যক যানবাহনের কাগজপত্র হালনাগাদ না করায় একদিকে যেমন পরিবহণ সেক্টরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, অপরদিকে সরকারও প্রাপ্য রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এ অবস্থায় অর্থ বিভাগ থেকে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ বিআরটিএর আওতায় মোটরসাইকেলের বর্ধিত ৪০ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন ফি মওকুফের সুবিধা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত না বাড়ানোর সুপারিশ করলে অর্থমন্ত্রী তাতে সম্মতি দিয়েছেন। একই সঙ্গে রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে অভিযান চালনোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে বিআরটিএকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলে অর্থ বিভাগ। সূত্র: রাইজিংবিডি