ভারতে গোমাংস খাওয়া নিয়ে একজনকে পিটিয়ে হত্যা ও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের উসকানি এবং মুক্তবুদ্ধির লেখক বুদ্ধিজীবী কালবুর্গি হত্যার প্রতিবাদে একের পর এক সরকারি সম্মাননা ফিরিয়ে দিচ্ছেন লেখকরা। সেই মিছিলে এবার যোগ দিলেন বুকার পুরস্কার জয়ী লেখক অরুন্ধতী রায়। জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সেরা চিত্রনাট্য লেখার জন্য তিনি এই পুরস্কার পেয়েছিলেন।
সমাজে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়া ‘ভয়ানক সব হত্যা’র প্রতিবাদে পুরস্কারটি ফিরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান অরুন্ধতী। তিনি মনে করেন ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা এই সব খুন জখম আরও অস্বস্তিকর ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
‘দ্য গড অব স্মল থিংস’ উপন্যাসের এই বিশ্বখ্যাত লেখিকা ১৯৮৯ সালে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন ‘ইন হুইচ অ্যানি গিভস ইট দোজ ওয়ান্স’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখার জন্য। তিনি ভারতের একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার কলামে বৃহস্পতিবার সেই পুরস্কার ফিরিয়ে দেয়ার কথা জানিয়েছেন।
অরুন্ধতী রায় বলেছেন, গরুর মাংস খাওয়ার সন্দেহে যে দুইজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং আরও যেসব গুণী মানুষকে খুন করা হয়েছে এবং হচ্ছে; সেই পরিস্থিতি বুঝানোর জন্য শুধু ‘ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা’ শব্দটা ভুল শব্দ।
যে হারে গোলাগুলি, জ্বালাও পোড়াও, হত্যা এবং রাহাজানি হচ্ছে তাতে কেউ শান্তিতে নেই। মোসলমান, খ্রিস্টান, হিন্দু, আদিবাসী থেকে শুরু করে যেকোনো ধর্ম গোত্রের মানুষ স্থির হতে পারছে না। তারা সব সময় এক ধরনের আতঙ্কের মধ্যে আছে, কারণ তারা জানে না পরবর্তী হামলা ঠিক কখন কোথা থেকে আসবে। পরিস্থিতির এই ভয়াবহতা শুধু ‘ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা’ শব্দটা দিয়ে প্রকাশ করলে সেটা ভুল হবে।
গত মাসে ভারতের উত্তর প্রদেশে মো. আখলাক নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয় এই গুজবে যে, তার বাসায় গরুর মাংস ছিল। অন্যদিকে কাশ্মীরে জাহিদ আহমেদ নামের ১৯ বছরের এক তরুণকে একই সন্দেহে পেট্রোল বোমা দিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়।
অরুন্ধতী রায় আফসোস করে বলেন, আমরা এখন এমন একটা সময়ে বাস করছি যখন দুর্বৃত্তরা কাল্পনিক গো-হত্যাকে অবৈধ হত্যা মনে করে খুব চিন্তিত। কিন্তু সেই কারণে একজন মানুষকে মেরে ফেলতে তাদের দ্বিধা নেই।
উল্লেখ্য, একই প্রতিবাদে পাঞ্জাব, দিল্লি, গুজরাট, কেরল, মধ্যপ্রদেশসহ বেশক’টি রাজ্যের নামকরা লেখকরা সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন। আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কন্নড় লেখক এম এম কালবার্গি খুন বা উত্তরপ্রদেশের দাদরিতে ইখলাক নামে এক মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে এক-এক করে ভারতের ২১ জন লেখক আকাদেমি পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন।