সব জ্বল্পনা-কল্পনার পর বেঙ্গল ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে চুড়ান্ত অনুমোদ পেতে আরও একটি পর্ষদ সভার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অনুমোদন পাওয়ার অপেক্ষায় থাকা ব্যাংক আরও দুটি হলো- পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক।
এর আগে অক্টোবরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ বোর্ড সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পায় পুলিশ সদস্যদের মালিকানায় ‘কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশ’। ওই সভায় এজেন্ডাভুক্ত তিন ব্যাংকের কিছু কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় অনুমোদনের জন্য শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র বেঙ্গল ব্যাংকের শর্ত পূরণ করতে পেরেছে। বাকী পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক শর্তগুলো পূরণ না হওয়ায় আজকের বোর্ড সভায় ব্যাংক তিনটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সানবিডিকে বলেন, বেঙ্গল ব্যাংকের ব্যাপারে বোর্ডের সব সদস্যই অনুমোদনের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে আগামী বোর্ড পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে আগামী বোর্ড। আগামী বোর্ড সভায় ল্যাটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) পেতে পারে বলেও জানান তিনি।
বাংলা ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা হলেন বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন। দেশে তাদের প্লাস্টিক শিল্পসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের ভাই।
দ্য সিটিজেন ব্যাংকের মালিক হলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক। সিটিজেন ব্যাংকের প্রস্তাবে কিছু ঘাটতি রয়েছে। সেগুলা ঠিকঠাক করে উপস্থাপন করতে নির্দেশনা দেয়া হয় আগের বোর্ড সভায়।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই ব্যাংকের দুইজন পরিচালকের জাতীয় রাজস্ব (বোর্ড) কর বকেয়া রয়েছে। এনবিআর থেকে কর পরিশোধের সনদপত্র জমা দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিবে পর্ষদ।
পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্ত চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা এম এ কাশেম। এটির বিষয়ে তিনি বলেন, এই ব্যাংকের দুইজন নতুন পরিচালকের নাম দেয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে খোজ-খবর নিবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার পর অনুমোদনের জন্য বোর্ডে উঠবে। সব কিছু ঠিক থাকলে পর্ষদ তার অনুমোদন দিবে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। পর্ষদের অন্য সদস্যরা হলেন— জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. রুশিদান ইসলাম রহমান, ইসলাম আফতাব কামরুল অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের এ কে এম আফতাব উল ইসলাম এফসিএ এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ।
গত ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বনির্ধারিত বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও একজন পর্ষদ সদস্য দেশের বাইরে থাকায় তা স্থগিত হয়। ওই সভায়ও তিনটি ব্যাংকের অনুমোদনের বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিল।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে নয়টি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়া হয়। সেগুলোর বেশির ভাগই খারাপ অবস্থার মধ্যে আছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে উদ্যোক্তারা সরকারের ওপর এ বিষয়ে এক ধরেনর চাপ তৈরি করেন। কারণ নির্বাচনের আগে অনুমোদন না পেলে পরবর্তীতে হয়তো বিষয়টি ফাইলবন্দি হয়ে যাবে। তাই উদ্যোক্তাদের লোবিংয়ে ও সরকারের চাপে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে ব্যাংকগুলোকে লাইসেন্স দেয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেও কয়েকবার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি লেখেন। অর্থমন্ত্রী সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেন।