তুলনামূলক সস্তা শ্রমের কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত বিশ্বে নজর কেড়েছে। বর্তমানে দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। জাতীয় অর্থনীতির বিকাশ অনেকাংশে এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। তৈরি পোশাক খাতের ক্রমবিকাশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সুতা ও সুতা তৈরির কাঁচামাল তুলার চাহিদা। গত এক দশকেই দেশে তুলার চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। সেই তুলনায় বাড়েনি পণ্যটির উৎপাদন। এ কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় পুরোটাই আমদানি করা তুলা দিয়ে পূরণ করতে হচ্ছে। চাহিদার পাশাপাশি গত এক দশকে দেশে তুলা আমদানিও দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, তুলার ভোক্তা দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ। ২০০৯ সালে দেশে তুলার চাহিদা ছিল ৪০ লাখ ১০ হাজার বেল (প্রতি বেলে ৪৮০ পাউন্ড)। এরপর ২০১১ সাল বাদে প্রতি বছরই দেশে তুলার চাহিদা বেড়েছে। ২০১০ সালে পণ্যটির অভ্যন্তরীণ চাহিদা ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেড়ে ৪২ লাখ ১০ হাজার বেলে দাঁড়ালেও এক বছরের ব্যবধানে ২০১১ সালে তা নেমে দাঁড়ায় ৩৭ লাখ ১০ হাজার বেলে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ কম।
এর পর থেকে আর তুলার অভ্যন্তরীণ চাহিদায় মন্দাভাব দেখা যায়নি। ২০১২ সালে দেশে তুলার চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়ে ৪৭ লাখ ১০ হাজার বেলে পৌঁছে যায়। পরের বছর পণ্যটির চাহিদা আরো ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ লাখ ১০ হাজার বেলে। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দেশে তুলার অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল যথাক্রমে ৫৮ লাখ ১০ হাজার ও ৬৩ লাখ ১০ হাজার বেল।
প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে তুলার অভ্যন্তরীণ চাহিদা ৭ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮ লাখ ১০ হাজার বেলে। আর সর্বশেষ ২০১৭ সালে পণ্যটির চাহিদার পরিমাণ ছিল ৭৫ লাখ ১০ হাজার বেল, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি। চলতি বছর শেষে দেশে তুলার চাহিদা আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়ে ৮০ লাখ ১০ হাজার বেলে পৌঁছতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ইউএসডিএ। সেই হিসাবে, বিগত এক দশকে দেশে তুলার চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।
চাহিদা বাড়লেও দেশে তুলা উৎপাদন সেই তুলনায় বাড়েনি। ২০০৯ সালে বাংলাদেশে সাকল্যে ৫০ হাজার টন তুলা উৎপাদন হয়েছিল বলে জানিয়েছে ইউএসডিএ। ১০ বছর পেরিয়ে ২০১৮ সাল শেষে পণ্যটির উৎপাদন দাঁড়াতে পারে ১ লাখ ৩৫ হাজার বেলে। অর্থাৎ, এক দশকে দেশে তুলা উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ৮৫ হাজার বেল। এ কারণে তুলার চাহিদা পূরণে ক্রমশ আমদানিনির্ভর হয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ তুলা আমদানিকারক দেশ। ইউএসডিএ জানিয়েছে, ২০০৯ সালে দেশে ৪০ লাখ বেল তুলা আমদানি হয়েছিল। মাঝে এক দফা কমলেও ২০১২ সালে পণ্যটির আমদানি ৫০ লাখ বেলে পৌঁছে যায়। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে ২০১৫ সালে তুলা আমদানি ৬০ লাখ বেলের মাইলফলক ছুঁয়ে যায়। প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ ২০১৭ সালে দেশে সব মিলিয়ে ৭৬ লাখ বেল তুলা আমদানি হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। চলতি বছর শেষে দেশে তুলা আমদানি আরো ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেড়ে ৮১ লাখ বেলে পৌঁছে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থাৎ এক দশকে দেশে তুলা আমদানি ৪০ লাখ বেল থেকে দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ৮১ লাখ বেলে পৌঁছে যেতে পারে।