ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) স্ট্রিমিং সেবা, আইপি টিভি ও ভিডিও অনডিমান্ড সেবা দেওয়ার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। এতদিন সেবাদানে প্রতিটি খাতের জন্য আলাদা করে লাইসেন্স নিতে হতো। নতুন নিয়মের ফলে তা আর থাকলো না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা পুরোপুরি চালু হলে ইন্টারনেট ব্যবহারের হার যেমন বাড়বে, তেমনি গ্রাহককে সাশ্রয়ী মূল্যে ইন্টারনেটসেবা দেওয়াও সম্ভব হবে।
এতদিন এই সেবাদানে আইএসপিগুলোর ওপর বিধিনিষেধ ছিল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ২২১তম সভায় সিদ্ধান্ত হয়, কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে আইএসপিগুলো (আইএসপি) স্ট্রিমিং সেবা, আইপি টিভি ও ভিডিও অনডিমান্ড সেবা দিতে পারবে। একইসঙ্গে এ বিষয়ে বিটিআরসির ২০১৬ সালে জারি করা পত্র (নির্দশনা) বাতিল করা হয়েছে। গত ১৩ ডিসেম্বর আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) ভিত্তিক সেবাগুলোর বিষয়ে বিটিআরসি একটি নির্দশনাও জারি করেছে।
প্রসঙ্গত, আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) নম্বর দিয়ে ইন্টারনেট সেবা, আইপি টেলিফোনি, আইপি টিভি, ভিডিও অনডিমান্ডসহ (ভিওডি) বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়া হয়। এক আইপির অনেক ব্যবহার হলেও প্রতিবারই নতুন ব্যবহারে আলাদা লাইসেন্স নিতে হতো এর গ্রাহককে। যদিও বিটিআরসির রেগুলেশন ছিল– যেকোনও ধরনের টেলিকম সেবা দিতে লাইসেন্স নিতে হবে কমিশন থেকে। নতুন নিয়মের ফলে এসব আর করতে হবে না আইএসপিগুলোকে।
জানা গেছে, এতদিন আইপি-সেবা ব্যবহারের জন্য লাইসেন্স নিতে হতো টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির কাছ থেকে। যেকোনও আইএসপি প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার জন্য লাইসেন্স নেয় বিটিআরসি থেকে। ওই প্রতিষ্ঠান আবার আইপি টেলিফোনিক সেবা দিতে চাইলেও নতুন করে লাইসেন্স নিতে হতো। আবার এ প্রতিষ্ঠানই যদি আইপি টিভি সেবা দিতে চায়, সেক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানটিকে আবারও নতুন করে লাইসেন্স নিতে হতো। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি এই ভোগান্তি থেকে রক্ষা পেতে আইপি টিভিসেবা দিতে যেন লাইসেন্স না নিতে হয়, সেজন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে দীর্ঘদিন আগে আবেদন করেছিল। সেই আবেদনের সুফল মিললো দুই বছর পরে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘বিটিআরসির এই নির্দশনার ফলে এখন ট্রিপল প্লে (এক ক্যাবলে তিন সেবা) চালু করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে, ক্যাবল টিভি (ডিস সংযোগ) অপারেটরগুলোর দৌরাত্ম্য কমবে, টিভির ছবির মান ভালো হবে, বিশেষ কোনও কাজে ব্যস্ত থাকলে ওই সময়ে সম্প্রচারিত পছন্দের অনুষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড করে রাখার ব্যবস্থাও চালু থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই সেবা চালু হলে টিভিতে এইচডি (হাই-ডেফিনেশন) ও ফোরকে রেজুলেশন পাওয়া যাবে।’
আমিনুল হাকিম বলেন, ‘সম্প্রতি অনুমোদন পাওয়া গেছে। এই সেবা পুরোপুরি চালু করতে দুই মাসের মতো সময় লাগতে পারে। সেবা চালু হলে মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রবণতা বাড়বে। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারের হারও বাড়বে। ট্রিপল প্লে চালু করা গেলে গ্রাহককে সাশ্রয়ী দামে ইন্টারনেট সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’
ভয়েস (ল্যান্ডফোন), ডাটা (ইন্টারনেট) ও ভিডিও (আইপি টিভি) এই তিন সেবা একটি ক্যাবলের মাধ্যমে (ভূগর্ভস্থ ক্যাবল লাইন) দেওয়ার সুবিধাকে ট্রিপল প্লে বলা হয়।
এদিকে, এই সেবা (স্ট্রিমিং সেবা, আইপি টিভি ও ভিডিও অনডিমান্ড) চালু হলে মোবাইল ফোনেও আইপি ফোনের সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে। এতদিন মোবাইলে আইপি ফোন ব্যবহার করা যেতো না। নতুন এই সেবা চালু করা হলে একটি অ্যাপের ম্যাধ্যমে (স্মার্টফোনে আইপি অ্যাপ ব্যবহার করে) মোবাইলেও আইপি ফোন ব্যবহার করা যাবে। জানা গেছে, এরই মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানকে বিটিআরসি এই সেবাদানের অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান এখনই সেবা চালুর জন্য পুরো প্রস্তুতি নিয়েছে।