বিচ্ছিন্নভাবে ছাত্রদের কাছে না গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ট্রেজারারের সঙ্গে চুক্তি করবে ব্যাংক। চুক্তির আওতায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভর্তি, টিউশন ফিসহ সব ধরনের লেনদেন পরিশোধ হবে চুক্তিবদ্ধ ব্যাংকের মাধ্যমে। এতে ব্যাংকের ব্যয় কমে আসার পাশাপাশি ব্যাংক ও শিক্ষার্থীদের সময় ও শ্রম কম লাগবে। ব্যয় কমায় মুনাফাও বাড়বে ব্যাংকের। স্বল্প প্রচারণায় ব্যাংকের কার্যক্রম পৌঁছে যাবে অধিক সংখ্যক গ্রাহকের কাছে।
দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য ‘এডুব্যাংক’ নামে নতুন এ ধারণা নিয়ে এসেছেন তরুণ শিক্ষার্থী মাশাহেদ হাসান সীমান্ত। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ ৪২তম ব্যাচের এ শিক্ষার্থীর উপস্থাপিত নতুন এ ধারণা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ‘উরি আইডিয়া ফেস্ট-২০১৮’-এ। সম্প্রতি রাজধানীর লেকশোর হোটেলে এ আইডিয়া উৎসবের গ্র্যান্ড ফিনালে অনুষ্ঠিত হয়। দেশে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী দক্ষিণ কোরীয় উরি ব্যাংক এ উৎসবের আয়োজন করে।
উরি আইডিয়া ফেস্টে চ্যাম্পিয়ন হওয়া মাশাহেদ হাসান সীমান্ত বলেন, ‘ব্যাংককে যদি অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে হয়, তাহলে ব্যবসা কার্যক্রম অনেক বেশি সম্প্রসারণ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে গিয়ে ব্যাংকের ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে ব্যাংক প্রত্যাশিত মুনাফা না করতে পেরে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়। উরি আইডিয়া ফেস্টে উপস্থাপিত আমার ব্যাংকিং ধারণাটি বাস্তবায়ন করা হলে, ব্যাংকের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হবে, কিন্তু ব্যয় অনেক কমে আসবে। কারণ এ ধারণা অনুযায়ী, ব্যক্তিবিশেষের কাছে না গিয়ে ব্যাংকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছে যাবে। এতে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব সদস্য ব্যাংকের গ্রাহক হবে। লেনদেনের টাকা ব্যাংকে জমা হওয়ায় আমানত বাড়বে। ব্যাংক পরিবারের সদস্য হওয়ায় অনেকে ঋণ নেয়ার জন্য আসবে।’
উরি আইডিয়া ফেস্ট-২০১৮ আয়োজনের জন্য মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে উরি ব্যাংক। মোট চারটি বিশ্ববিদ্যালয়— ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, নর্থ সাউথ ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী এ উৎসবে অংশ নিতে রেজিস্ট্রেশন করেন। তবে ব্যাংকিং বিষয়ে আইডিয়া জমা পড়ে ২৪৬টি। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জমা দেয়া আইডিয়া থেকে সেরা ১২টি প্রথম রাউন্ডে বাছাই করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গ্র্যান্ড ফিনালের জন্য নির্বাচন করা হয় সেরা তিনটি আইডিয়া। এ তিন সেরা আইডিয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্র্যান্ড ফিনালের আয়োজন করা হয়। এতে শিক্ষার্থীরা ১২টি নতুন ধারার ব্যাংকিং প্রডাক্ট তুলে ধরেন। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়নকে ১ লাখ, রানারআপকে ৫০ হাজার, দ্বিতীয় রানারআপকে ৩০ হাজার এবং তৃতীয় রানারআপকে ২০ হাজার টাকার চেক ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। এছাড়া গ্র্যান্ড ফিনালেতে অংশ নেয়া ১২ শিক্ষার্থীর হাতে সনদ তুলে দেয়া হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। উরি ব্যাংকের কান্ট্রি ম্যানেজার জং হো চেয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট রিয়াদ উদ্দিন খান। অতিথিরা অংশগ্রহণকারী ও বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের ব্যাংকগুলোর প্রডাক্টে কোনো বৈচিত্র্য নেই। প্রচলিত ধারার ব্যাংকিং প্রডাক্ট নিয়ে কিছু গ্রাহকের পেছনে সবগুলো ব্যাংক ছুটছে। তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত ব্যাংকিং আইডিয়াগুলো চালু করা সম্ভব হলে দেশের ব্যাংকগুলোর প্রডাক্টে বৈচিত্র্য বাড়বে। তরুণদের নতুন নতুন ভাবনাগুলো ব্যাংকিং খাতের দুর্দশা কাটাতে ভূমিকা রাখতে পারবে।
প্রতিযোগিতায় প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে স্বল্প সুদে ঋণসেবা দেয়ার নতুন ধারণা উপস্থাপন করে রানারআপ হয়েছেন বিলদানা হক সৌমি। ব্যাংকের শাখা পৌঁছায়নি, এমন প্রান্তিক কৃষকদের জন্য ‘উরি কৃষি কার্ড’ নামে নতুন ব্যাংকিং আইডিয়া নিয়ে এসেছেন বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ সমাপনী বর্ষের এ শিক্ষার্থী।
বিলদানা হক তার আইডিয়া প্রসঙ্গে বলেন, ব্যাংকগুলো এখনো প্রান্তিক কৃষকদের কাছে ঋণ নিয়ে পৌঁছতে পারেনি। জনবল ও শাখা সীমিত হওয়ায় ব্যাংকের পক্ষে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকদের কাছে পৌঁছানো অনেক কঠিন। এজন্য ব্যাংকগুলো এনজিওর মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করছে। এতে কৃষকরা চড়া সুদে ঋণ গ্রহণে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, উরি কৃষি কার্ড হবে অনেকটা ক্রেডিট কার্ডের মতো। এজেন্টের মাধ্যমে প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে এ কার্ড বিতরণ করা হবে। এতে কৃষক উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের মুনাফাও বাড়বে।
উরি আইডিয়া ফেস্টের চ্যাম্পিয়ন মাশাহেদ হাসান সীমান্ত ২০১৬ সালে বক্তব্য দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের হাউজ অব কমন্সে। চীনের বেইহ্যাং ওয়ার্ল্ড ডিবেট একাডেমিতে অংশগ্রহণ করেছেন ২০১৫ সালে। গত বইমেলায় সীমান্তের লেখা ‘লাইফ ইজ ভেরি ইজি’ বই প্রকাশ হয়। তিনি বলেন, প্রথাগত চাকরির কথা কখনো ভাবিনি। এরই মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছি। আমি মানুষকে জীবনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের দর্শন শেখাতে চাই।