ধানের শীষে ভোট দেওয়া মানেই দুর্নীতি, বোমা হামলা, জঙ্গিবাদ, মানি লন্ডারিং, এতিমের অর্থ আত্মসাতকে ফিরিয়ে আনা। অন্যদিকে, নৌকা মানেই দেশের ও জনগণের সমৃদ্ধি। আর তারই সুফল জনগণ ভোগ করছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ধানের শীষে ভোট মানেই দুর্নীতি, ধানের শীষে ভোট মানেই বোমা হামলা, ধানের শীষে ভোট মানেই জঙ্গিবাদ, মানি লন্ডারিং, ধানের শীষে ভোট মানেই এতিমের অর্থ আত্মসাৎ। অন্যদিকে, নৌকা মানেই সমৃদ্ধি, নৌকা মানেই উন্নতি, নৌকা মানেই স্বাধীনতা, নৌকা মানেই মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ও কল্যাণ। নৌকায় ভোট দিয়ে সেই সুফল এখন দেশবাসী পাচ্ছেন। সেটা বিবেচনা করেই আমাদের প্রার্থী যারা আছেন, তাদের ভোট দেবেন— এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) বিকেলে গুলশান-২-এর ইয়ুথ ক্লাব মাঠে আওয়ামী লীগের এক নির্বাচনি জনসভায় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। জনসভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত রাজধানীর সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট চান তিনি। এসময় ঢাকা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী সালমান এফ রহমানও উপস্থিত ছিলেন। তার পক্ষেও ভোট চান শেখ হাসিনা।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি-জামায়াত দুর্নীতি করেছে, লুটপাট করেছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আইভী রহমানসহ আমাদের ২২ জন মারা গেছেন। বহু নেতাকর্মী শরীরে স্প্লিন্টারের আঘাত পেয়েছেন। বহু কষ্টের মধ্যে আছেন তারা। যারা মারা গিয়েছেন, তাদের পরিবারের কথা একবার চিন্তা করুন।
তিনি বলেন, তারপর শুরু হলো অগ্নিসন্ত্রাস। আপনারা নিজেরাই একবার চিন্তা করে দেখুন, কোনো মানুষ কি কখনও কাউকে পুড়িয়ে মারতে পারে? তারা জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তারা মসজিদে পর্যন্ত আগুন দিয়েছে। সারাদেশে ৩৯০০ গাড়ি পুড়িয়েছে। বাস পুড়িয়েছে, লঞ্চ পুড়িয়েছে, প্রাইভেট কার পুড়িয়ে, ট্রেন পুড়িয়েছে, সিএনজি পুড়িয়েছে। বাস, ট্রাকের ভেতর থেকে ড্রাইভার হেলপারদের বের করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্কুলের শিক্ষার্থী, ছোট শিশুরা পর্যন্ত রেহাই পায়নি। মানুষ জীবন ভিক্ষা চেয়েছে, তারা দেয়নি।
দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের একটাই লক্ষ্য, মানুষের জীবনের উন্নয়ন। আমরা ই-গভর্ন্যান্স চালু করেছি, এখন আর মানুষকে ঢাকায় আসার প্রয়োজন হয় না। আমরা সেই অবকাঠামো গড়ে দিয়েছি। পোস্ট অফিসগুলোকে আমরা ডিজিটাল সেন্টারে রূপান্তর করে দিয়েছি। ঢাকাকে দৃষ্টিনন্দন করে দিয়েছি। হাতিরঝিল করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, এই যে এত মানুষ বিদেশে যান, তাদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক করে দিয়েছি। তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। শিক্ষার হার বৃদ্ধি করার জন্য এলাকায় এলাকায় স্কুল-কলেজ করে দয়েছি। এই রাজধানীতেই নতুন ১১টি স্কুল ও কলেজ করে দিয়েছি। প্রতিটি এলাকায় সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দিয়েছি। মানুষের জীবনযাপন যেন উন্নত হয়, তার সব ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন সবার হাতে পৌঁছে দিয়েছি। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। এই যে সবার হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে গিয়েছে, কে দিয়েছে? আওয়ামী লীগ আসার আগে মোবাইল ফোন ছিল না। আমরা সবার হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। বিএনপির একজন মন্ত্রী মোবাইল ফোনের ব্যবসা করত। ওইসময় একটি মোবাইল ফোনের দাম কত ছিল, জানেন? এক ফোন কিনতে খরচ হতো এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। এক মিনিট ফোন করলে খরচ ১০ টাকা, ফোন রিসিভ করলেও ১০ টাকা।
রাজধানীবাসীর জন্য আরও কাজ করার অঙ্গীকার জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ৩০০ ফিট রাস্তার একশ ফিট নিয়ে কাজ চলছে। ওই রাস্তাকে আরও দৃষ্টিনন্দন করে দেবো, কোনো যানজট থাকবে না। বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় আমরা পরিবর্তন এনেছি। আমরা বিদ্যুৎ বিতরণের জন্য তারগুলোকে আন্ডারগ্রাউন্ড দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবো। এতে করে সেগুলো কখনও ঝড়ে ছিঁড়ে পড়বে না, ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আমরা এসব পদক্ষেপ নিয়েছি। রাজধানীবাসীর জন্য ফ্লাইওভার করে দিয়েছি। মেট্রোরেলের কাজ চলছে। আমরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি করে দেবো। রাজধানীজুড়ে পাতাল রেলের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছি। ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত করতে যা কিছু করা দরকার, আমরা করে দেবো।
শেখ হাসিনা বলেন, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে আমিই বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। এখন ৪৪টি টিভি চ্যানেল লাইসেন্স পেয়েছে। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমরা ব্যাংক, বীমাকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করেছি। শিল্প, কল-কারখানা গড়ার সুযোগ করে দিয়েছি, যেন সেখানে তরুণদের চাকরি হয়। আমরা একশটি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিয়েছি। এই অঞ্চলে সোয়া কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এতে দেশের অর্থনীতি আরও সম্প্রসারিত হবে, রফতানি আরও বাড়বে, দেশের উন্নয়ন আরও মজবুত হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই নীতিমালা নিয়েছি আমরা।
তিনি আরও বলেন, আপনারা ভোট দিয়ে নৌকা মার্কাকে জয়যুক্ত করে জনগণের সেবা করার সুযোগ দিন, আমরা আপনাদের সেবায় নিয়োজিত থাকব। আপনারা কষ্ট করে এসেছেন, এজন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, ধন্যবাদ জানাই। সেইসঙ্গে আবারও বলছি, আমরা অনেক মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু গড়ে তুলছি। আমরা আমাদের এসব মেগা প্রকল্প সমাপ্ত করতে চাই। আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে চাই। আর এই জন্য আপনাদের ভোট চাই।
জনসভার বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে শেখ হাসিনা ঢাকা-১১, ঢাকা-১২, ঢাকা-১৪, ঢাকা-১৬, ঢাকা-১৭, ঢাকা-১৮ ও ঢাকা-১ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। এসময় তিনি এসব প্রার্থীকে নিজ নিজ আসনে জয়ী করতে আরও একবার সবার ভোট প্রার্থনা করেন।