বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের ২৩ জন যুদ্ধাপরাধী বা তাদের পরিবার কোনো না কোনোভাবে ৭১ সালে পাকিস্তান সরকার ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
মক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের এসব নেতা ঘৃণিত ভূমিকা পালন করেছেন। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতেতে সক্রিয় থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বনে গেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাসহ নানা ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারা।
রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী আহমেদ।
‘যারা যুদ্ধাপরাধীদের মনোনয়ন দেয় তারা দেশকে ধ্বংস করে দেবে। ধানের শীষকে ভোট দেয়া মানে দুর্নীতি, লুটপাট ও জঙ্গিবাদকে প্রশয় দেয়া’-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি বাংলাদেশ ব্যাংক লুটের কথা তো বললেন না? এটা কে লুট করেছে? সব ব্যাংকগুলো লুটপাট করে খালি করেছে কারা? শেয়ারবাজার লুট করেছে কারা?’
তিনি বলেন, ‘আপনার অর্থমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, এই সরকারের আমলে পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের খবর প্রকাশিত হয়েছে। মাত্র কয়েকদিন আগেই সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, গত দশ বছরে সাড়ে বাইশ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে এই সরকারের লোকজন। হলমার্ক কেলেঙ্কারির সময় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, চার হাজার কোটি টাকা নাকি কোনো টাকাই নয়। আওয়ামী সরকারের আমলে দুর্নীতির তীব্রতায় শিক্ষামন্ত্রী প্রকাশ্যে সরকারি কর্মচারীদের বলেছেন, সহনীয় পর্যায়ে ঘুষ খেতে। আওয়ামী সরকার আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারী।’
প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি বক্তব্যের সমলোচনা করে রিজভী আহমেদ বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের কথা বলছেন। প্রধানমন্ত্রী, আপনিই তো জামালপুরের নুরু রাজাকারের গাড়িতে প্রথম পতাকা দিয়েছেন। এখনও আপনার দলে স্বাধীনতাবিরোধীদের ভিড়। জনগণকে প্রতারিত করে প্রধানমন্ত্রী আবারও মুক্তিযুদ্ধকে বিক্রি করে চলেছেন।’
আওয়ামী লীগে রাজাকার আছে এমন অভিযোগ এনে বিএনপির এই মহাসচিব বলেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে-এমন অভিযোগে এক ডজন ব্যক্তির বিচার করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
আওয়ামী সরকার নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের কথিত স্বপক্ষ শক্তি দাবি করে এ বিচার করলেও তাদের দলে থাকা রাজাকারদের ব্যাপারে একেবারে নীরব। এ দলটিতেও রয়েছে কুখ্যাত রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, গণহত্যকারী, গণধর্ষণকারী, অগ্নিসংযোগকারী। অসংখ্য ব্যক্তি স্বাধীনতাযুদ্ধে মানবতাবিরোধী লিপ্ত ছিল। এই ব্যক্তিরাসহ তাদের সন্তান-সন্তুতি এখন আওয়ামী লীগের বড় নেতা বা তাদের টিকিটে নির্বাচন করছেন। কিন্তু এখন তারা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বিতর্কিত ভূমিকা এবং তৎকালীন পাকিস্তান সরকারকে সহায়তার জন্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, অ্যাডভোকেট মোসলেম উদ্দিন, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, কাজী জাফর উল্লাহ, মুসা বিন শমসের, মির্জা গোলাম কাশেম, এইচ এন আশিকুর রহমান, মহিউদ্দিন খান আলমগীর, মাওলানা নুরুল ইসলাম, মজিবর রহামান হাওলাদার, আবদুল বারেক হাওলাদার, মালেক দাড়িয়া, মোহন মিয়া, মুন্সী রজ্জব আলী দাড়িয়া, রেজাউল হাওলাদার, বাহাদুর হাজরা, আ্যাডভোকেট দেলোয়ার হোসেন সরদার, হাসেম সরদার, আবদুল কাইয়ুম মুন্সির নাম উল্লেখ করেন রিজভী।
পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততার অভিযোগ উড়িয়ে দেন রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, ‘জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত কুৎসা, ঘৃণ্য অপপ্রচারের ধারাবাহিকতা এখনও অব্যাহত আছে। আইএসআই নাকি বিএনপির মনোনয়নে ভূমিকা রেখেছে। এটি ডাহা মিথ্যাই নয়, নোংরা অপপ্রচার।’