আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দরপতনের লাগাম টানতে নেয়া সব উদ্যোগ কি ব্যর্থ হতে যাচ্ছে? জ্বালানি পণ্যটির দাম ব্যারেলপ্রতি ফের ৩০ ডলারের নিচে নামতে পারে? এসব প্রশ্ন এখন খাতসংশ্লিষ্টদের মুখে মুখে। জ্বালানি তেলের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি এসব প্রশ্নের যৌক্তিক ভিত্তি দিয়েছে। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে যেখানে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৮০ ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল, সেখানে এখন জ্বালানি পণ্যটির ব্যারেল ৪০ ডলারের কাছাকাছি নেমে এসেছে। দরপতনের ধারাবাহিকতায় জ্বালানি তেলের বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে নতুন করে অনিশ্চয়তার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জন্ম দিয়েছে শঙ্কার। খবর রয়টার্স ও অয়েলপ্রাইসডটকম।
২০১৪ সালের শুরুর দিকেও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ১০০ ডলারের উপরে ছিল। তবে ২০১৫ সাল নাগাদ জ্বালানি তেলের বাজার বড় ধরনের ধাক্কা খায়। বাড়তি সরবরাহের জের ধরে জ্বালানি পণ্যটির দাম কমতে শুরু করে। কয়েক বছরব্যাপী দরপতনের ধারাবাহিকতায় প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৩০ ডলারের নিচে নেমে আসে। পণ্যটির বাজারে ভারসাম্য ফেরাতে এগিয়ে আসে রফতানিকারকদের জোট অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক)। রাশিয়াসহ জোটবহির্ভূত কয়েকটি দেশকে সঙ্গে নিয়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক উত্তোলন হ্রাসে চুক্তি করে ওপেক। মূলত সরবরাহ কমিয়ে বাজারে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনাই এ চুক্তির মূল লক্ষ্য। কয়েক দফা মেয়াদ বৃদ্ধির পর চলতি ডিসেম্বরে এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে।
ওপেকভুক্ত ও বহির্ভূত দেশগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগ জ্বালানি তেলের বাজারে কিছুটা স্বস্তি ফিরিয়ে আনে। ২০১৭ সালের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। বৈশ্বিক উত্তোলন ও সরবরাহ কমে আসায় চলতি বছরের মাঝামাঝি ব্রেন্ট ক্রুডের ব্যারেল ৮০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে বছরের শেষ ভাগে এসে নতুন করে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে জ্বালানি তেলের বাজার। পণ্যটির দাম বছরের মাঝামাঝি সময়ের তুলনায় কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সর্বশেষ কার্যদিবসে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম দাঁড়িয়েছে ৫০ ডলার ৮৮ সেন্টে। অন্যদিকে ভবিষ্যতে সরবরাহ চুক্তিতে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ব্যারেলপ্রতি ৪৩ ডলার ১১ সেন্টে।
এ বিষয়ে সিঙ্গাপুরের সিএমসি মার্কেটসের বিশ্লেষক মার্গারেট ইয়াং জানান, একদিকে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ করেছে। ফলে জ্বালানি তেলের চাহিদা কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে বাড়তে পারছে না। মুদ্রাবাজার, শেয়ারবাজার সবই অস্থিরতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ওপেকের চুক্তির আওতায় থাকা দেশগুলো অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন আগের তুলনায় বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। ২০১৪-১৫ সালের দরপতনের ধাক্কা এখনো সামলে ওঠা সম্ভব হয়নি। নতুন করে রেকর্ড পরিমাণ দাম কমলে, তা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি শ্লথ করে দিতে পারে।
বাড়তি উত্তোলন, চাহিদায় মন্দাভাব, বড় ধরনের দরপতনসহ জ্বালানি তেলের বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে যখন খাতসংশ্লিষ্টরা চরম উদ্বিগ্ন, নতুন করে অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছেন, তখন আশার কথা শুনিয়েছেন রুশ জ্বালানিমন্ত্রী আলেকজান্ডার নোভাক। এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বড় ধরনের দরপতন দেখা গেছে। তবে আগামী বছরের শুরুর প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) জ্বালানি পণ্যটির বাজার পরিস্থিতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে। এ সময়ের মধ্যে ওপেক, নন-ওপেক সহযোগিতার রূপরেখা চূড়ান্ত হতে পারে। এ উদ্যোগ জ্বালানি তেলের দাম বর্তমানের তুলনায় বাড়িয়ে দিতে পারে।