ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোনোভাবেই সরকারের অংশ হবে না বলে জানালেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ভারতীয় গণমাধ্যম দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে তিনি একথা জানান বলে শনিবার গণমাধ্যমটিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অধীনে রোববার অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বিএনপি। এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য ২২ জামায়াত প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছে দলটি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যখন আমাদেরকে জামায়াতের (বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী) সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, তখন আমি বলি, দেখুন বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) জামায়াত নয়। বিএনপি ইসলামি আইন ও মৌলবাদে বিশ্বাস করে না।
তিনি বলেন, জামায়াতের প্রতি আমাদের আকর্ষণ নেই। কৌশলগত কারণেই দলটির সঙ্গে আমাদের জোট বাঁধা। তাদের সঙ্গে থাকায় আমরা ৫০টি আসনে সুবিধা পাবো। আমাদের ছাড়া তাদের আসন সংখ্যা বড়জোর তিনটি কমবে।
বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণা সম্পর্কে তিনি বলেন, কোনও প্রচারণা নেই, এটা একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসও। প্রচারণায় পুলিশ বাধা দিচ্ছে এই অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভয়াবহ অবস্থা। আমি কল্পনা করতে পারি না যে এমন অবস্থা ঘটতে পারে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত তিনবার তার সঙ্গে দেখা করতে পেরেছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দেয়ার আগে তার অনুমতি নিয়েছি।
দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত লন্ডনে থাকা খালেদার ছেলে এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গেও পরামর্শ করেছেন তিনি। তারেক স্কাইপের সাহায্যে নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেন।
অর্থাৎ, জিয়া পরিবারের অনুপস্থিতিতে মির্জা ফখরুলই বিএনপিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই বিষয়ে তিনি বলেন, জিয়া পরিবার ছাড়া বিএনপিকে কল্পনা করা অসম্ভব। খালেদা জিয়া সত্যিকারের ক্যারিশম্যাটিক নেত্রী।
তিনি আরও বলেন, আমি বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছি, এটা একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যেতে চাই।
বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। ‘ভোটাধিকার’ ও ‘স্বাধীনভাবে বাঁচা’ এই নির্বাচনে আমাদের মূল এজেন্ডা বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে বিএনপি দেশটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিল উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব বলেন, আমরা দেশের বাইরে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, আমরা ভারতীয় হাই কমিশনারের সঙ্গে তিনবার দেখা করেছিলাম এবং দেশটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়েছিলাম। কিন্তু ভারতীয় কূটনীতিকরা এতে সাড়া দেয়নি।
দেশটিতে বিএনপি সম্পর্কে যে ধারণা আছে, তা ঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদে বিশ্বাসী না। আমরা ভারতবিরোধী এটাও ভুল ধারণা এবং এটা আওয়ামী লীগের প্রোপাগান্ডারই একটা অংশ।
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ২০১২ সালে দিল্লি সফরকালে ভারতের সহযোগিতা চায় আমাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিজেপি ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আমরা ধারণা করেছিলাম। মোদি-খালেদার মধ্যে একটি সফল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় কিন্তু পরবর্তীতে তেমন কিছু ঘটেনি।
তিনি বলেন, আমরা হতাশ হয়েছিলাম। পরবর্তীতে চলতি বছরের আগস্টে ব্যাংককে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের সঙ্গে বৈঠকের একটি দিন নির্ধারণের চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারেও খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি।
ফখরুল বলেন, বিজেপি একটি ডানপন্থি রাজনৈতিক দল, এছাড়া এখানে আছে আরএসএস। কিন্তু তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই। দুর্ভাগ্যবশতভাবে আমি জানি, ভারত কেন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন, গুম প্রভৃতির মতো অপকর্মগুলোর বিষয়ে উদাসীন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ ভারতকেই দায়ী করছে এবং আওয়ামী লীগকে ভারত সহযোগিতা করছে বলেও একটি ধারণা তাদের মধ্যে প্রচলিত। আওয়ামী লীগ একটি ঘৃণ্য রাজনৈতিক দল। কিন্তু শুধু ভারতের কারণেই টিকে আছে দলটি এবং তারাই দলটিকে শক্তিশালী করেছে।
বিএনপি ক্ষমতায় এলে জিয়া পরিবারের সঙ্গে যা করা হয়েছে, হাসিনার পরিবারের সঙ্গে তাই করা হবে কিনা জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনও ধরনের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থাকবে না।