চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা ও মুদ্রাবাজারে ডলারের শক্তিশালী অবস্থান আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম কমিয়ে দিয়েছে। অনিশ্চয়তার জের ধরে ২০১৮ সালের উল্লেখযোগ্য অংশজুড়ে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিলেন। ফলে একদিকে মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা কমেছে, অন্যদিকে দামেও বজায় ছিল নিম্নমুখী প্রবণতা। তবে ২০১৯ সালে স্বর্ণের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আশার কথা শোনা গেছে। নতুন বছরের শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়তে শুরু করবে। বছরের শেষ নাগাদ প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম বেড়ে ১ হাজার ৩৫০ ডলারে পৌঁছে যেতে পারে। জার্মান বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান কমার্জব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। খবর কিটকো নিউজ ও সিএনবিসি।
কমার্জব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১ হাজার ২৫০ ডলারের কাছাকাছি অবস্থান করছে। ২০১৯ সালের প্রথম দুই প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ ও এপ্রিল-জুন) মূল্যবান ধাতুটির গড় দাম ১ হাজার ২৫০ ডলারে অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গিয়ে স্বর্ণের গড় দাম বেড়ে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ৩০০ ডলারে উঠতে পারে। আর ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) গিয়ে প্রতি আউন্স স্বর্ণের গড় দাম আরো বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৩৫০ ডলারে। মূলত মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের শক্তিশালী অবস্থান কিছুটা কমে আসা ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার পরিবর্তনে স্বর্ণের গড় দাম বাড়তে পারে। একই সঙ্গে মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি স্বর্ণের বাজার বর্তমানের তুলনায় চাঙ্গা করতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে।
স্বর্ণের পাশাপাশি নতুন বছরে রুপা, প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের দামেও চাঙ্গাভাব দেখা যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে কমার্জব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে রুপার গড় দাম আউন্সপ্রতি ১৪ ডলার ৫০ সেন্টে অবস্থান করতে পারে। পরের প্রান্তিকে তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৫ ডলারে। বছরের তৃতীয় প্রান্তিক নাগাদ মূল্যবান ধাতুটির গড় দাম আউন্সপ্রতি ৫০ সেন্ট বেড়ে ১৫ ডলার ৫০ সেন্টে পৌঁছে যেতে পারে। আর বছরের সর্বশেষ প্রান্তিকে প্রতি আউন্স রুপার গড় দাম বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৬ ডলারে।
২০১৯ সালের শুরুর প্রান্তিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স প্লাটিনামের গড় দাম থাকতে পারে ৮০০ ডলারে। বছরের শেষ প্রান্তিকে মূল্যবান ধাতুটির গড় দাম বেড়ে আউন্সপ্রতি ৯০০ ডলারে উঠতে পারে। একইভাবে বাড়তে পারে ধাতুর বাজারে ২০১৮ সালের সেরা পারফরমার প্যালাডিয়ামের দামও। ২০১৯ সালের প্রথম প্রান্তিকে প্রতি আউন্স প্যালাডিয়ামের গড় দাম ১ হাজার ডলারে অবস্থান করলেও বছরের শেষ প্রান্তিকে তা ১ হাজার ১০০ ডলারে উঠতে পারে।
স্বর্ণের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে অনেকটাই একই রকম পূর্বাভাস দিয়েছে মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগান। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে মুদ্রাবাজারে চাঙ্গা হতে শুরু করে মার্কিন ডলার। ফলে বিনিয়োগকারীরাও ডলারের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। বিপরীতে বিনিয়োগ কমার সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণের দামও কমতে শুরু করে। তবে বছরের শেষ ভাগে ইরানের ওপর নতুন করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় স্বর্ণের বাজার কিছুটা গতি ফিরে পায়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি স্বর্ণের বাজারে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।
জেপি মরগানের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৮ সাল শেষে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের গড় দাম দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ২৫৭ ডলারে। ২০১৯ সালে স্বর্ণের গড় দাম কিছুটা বেড়ে আউন্সপ্রতি ১ হাজার ২৯৪ ডলারে স্থির হতে পারে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যবান ধাতুটির গড় দাম বাড়তে পারে আউন্সে ৩৭ ডলার। তবে ২০২০ সালে গিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারে স্বর্ণের বাজার। এ সময় আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের গড় দাম ১ হাজার ৪৬০ ডলারে পৌঁছে যেতে পারে।