একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরুঙ্কস বিজয় নিয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ নের্তৃাধীন মহাজোট সরকার। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাত্তাই পায়নি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই নির্বাচনে পুঁজিবাজারের সংঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৮জন ব্যক্তি বিজয়ী হয়েছেন।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, মহাজোট ২৮৮টি আসনে জয়লাভ করেছে। এর মধ্যে- আওয়ামী লীগ ২৫৯, জাতীয় পার্টি ২০, ওয়ার্কার্স পার্টি তিন, জাসদ দুই, বিকল্পধারা দুই, তরিকত ফেডারেশন এক, জেপি একটি আসন পেয়েছে। বিএনপি জোট অর্থাৎ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র সাতটি। এর মধ্যে বিএনপি পাঁচটি ও গণফোরাম দুটি আসনে জয় পেয়েছে। স্বতন্ত্রসহ অন্যরা জয় পেয়েছেন তিনটি আসনে। ঘোষিত হয়নি পার্বত্য রাঙ্গামাটি (২৯৯) অঞ্চলের ফলাফল।
একে আবদুল মোমেন: চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী হয়ে প্রথম বারের মতো সংসদে যাচ্ছেন।
মঞ্জুর হোসেন: ফরিদপুর-১ আসনে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন সাবেক সচিব ও বর্তমানে রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন।
তাহজিব আলম সিদ্দিকী: ঝিনাইদহ-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন তাহজীব আলম সিদ্দিকী। গতবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচিত সদস্য হন তাহজীব। তিনি ডোরিন পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সালমান এফ রহমান: সংসদ নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন পেয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই যাত্রা শুরু করা বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলেন নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে।
ওষুধ, সিরামিক, বস্ত্র, জ্বালানি, তথ্য প্রযুক্তি খাতের ব্যবসা রয়েছে এই গ্রুপের, রয়েছে গণমাধ্যমও। বেক্সিমকো গ্রুপের বেশ কয়েকটি কোম্পানি পুঁজিবাজারেও তালিকাভুক্ত।
২০০১ সালের নির্বাচনে এই আসনে নৌকার টিকেটে নির্বাচনে করে তার আত্মীয় তৎকালীন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কাছে পরাজিত হন সালমান রহমান। এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী সালমা ইসলামকে পরাজিত করে নির্বাচিত হয়েছেন।
সাবের হোসেন চৌধুরী: তিনি ঢাকা-৯ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বচিত হয়েছেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ২০০৮ ও ২০১৪ এর নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য হোন। বর্তমানে তিনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জিএসপি ফাইন্যান্স বাংলাদেশ লি: এর পরিচালক হিসেবে রয়েছেন।
ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন: তিনি কুমিল্লা-৩ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বর্তমানে তিনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি সাউথইস্ট ব্যাংকের উদ্যোক্তা হিসেবে রয়েছেন। ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক এবং চেয়ারম্যান হিসেবে এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আবদুস সালাম মূর্শেদী: তিনি খুলনা -৪ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। আড়াই মাস আগে তিনি এই আসনে উপ-নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এই শিল্পপতি। খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা গত ২৫ জুলাই মারা গেলে খুলনা-৪ (রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা) আসনটি শূন্য হয়। সেপ্টেম্বরের উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হন সালাম মূর্শেদী । আর কোনো প্রার্থী না থাকায় ফাঁকা মাঠেই গোল দেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই ফুটবলার।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এনভয় টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মোরশেদ আলম: তিনি নোয়াখালী-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি ২০১৪ সালে এই আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আহসানুল ইসলাম টিটু: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহসানুল ইসলাম টিটু টাঙ্গাইল-৬ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। সংসদ নির্বাচনে এবারই তিনি প্রথম মনোয়ন পেলেন।
নাজমুল হাসান পাপন: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে তিনি এই আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন।
একেএম এনামুল হক শামীম: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক এনামুল হক শামীম শরিয়তপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এবারই তিনি প্রথম মনোয়ন পেলেন।
এবাদুল করিম বুলবুল: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিকন ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কোহিনূর কেমিক্যালের পরিচালক এবাদুল করিম ব্রাক্ষণবাড়ীয়া-৫ আসনে আওয়ামী লীগের মনোয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
সেলিমা আহমাদ মেরি: নিটল নিলয় গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা আহমাদ কুমিল্লা-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিটল নিলয় গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান নিটল ইন্স্যুরেন্স ও নিলয় সিমেন্ট পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে।
কাজী নাবিল আহমেদ: জেমিনি সি ফুডের পরিচালক কাজী নাবিল যশোর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগেও তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন।
মাহফুজুর রহমান : রূপালী ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মিতা চট্টগ্রাম-৩ আসন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে এক লাখ ৬২ হাজার ৩৫৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মোস্তফা কামাল পাশা পান ৩ হাজার ১২২ ভোট।
আব্দুস শহীদ : নতুন জীবন বীমা কোম্পানি চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ নির্বাচন করেন মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে। তিনি দুই লাখ ১১ হাজার ৬১৩ ভোট পেয়ে জয় নিশ্চিত করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের মুজিবুর রহমান মুজিব পান ৯৩ হাজার ২৯৫ ভোট।
এ কে এম রহমতুল্লাহ: ঢাকা-১১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক এ কে এম রহমতুল্লাহ। এক লাখ ৮৬ হাজার ৬৮১ ভোট পেয়ে তিনি জয় লাভ করেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শামীম আরা বেগম পান ৫৪ হাজার ৭২১ ভোট।
এইচ এম ইব্রাহিম: অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালক এইচ এম ইব্রাহিম নির্বাচন করেন নোয়াখালী-১ আসন থেকে। নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে তিনি দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৭০ ভোট পান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মাহবুব উদ্দিন খোকন পান ১৪ হাজার ৮৬২ ভোট।