প্রবাসীদের অভিযোগ বাংলাদেশকে ব্যবহার করে মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে ইয়াবা যাচ্ছে। এই ইয়াবা বিভিন্ন দেশের বিমানবন্দরে আটকের পর বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
শনিবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের ‘প্রবাসী সহায়তা ডেস্ক’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা এসব অভিযোগ করেছেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা বলেছেন, প্রবাসীদের এসব অভিযোগ তিনি ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
চট্টগ্রামে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো চালু হওয়া এই হেল্প ডেস্ক সচল থাকবে ২৪ ঘণ্টা। হেল্প ডেস্কে একটি হটলাইন (০১৭৬৯৬৯৪২৭৪) এবং দুটি ই-মেইল ঠিকানায় (spchittagong@police.gov.bd / dsbchittagong@police.gov.bd) প্রবাসীরা দেশে-বিদেশে তাদের যে কোন সমস্যার কথা জানাতে পারবেন।
এছাড়া একটি ফ্যাক্স নম্বর (০৩১-৭২৬৮৬৬) ও ফেসবুকে ‘চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ’ লিখে সার্চ দিয়ে সেখানেও জানাতে পারবেন। এসব সমস্যা আমলে নিয়ে জেলা পুলিশ দ্রুত তা সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন এসপি নুরে আলম মিনা।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সমিতি, ওমান’র সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী পুলিশ সুপারের উদ্দেশে বলেন, ‘কিছুসংখ্যক প্রবাসী কিছুদিন ধরে ওমানে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদক নিয়ে যাচ্ছে। ইয়াবা, গাঁজার চালান ওমানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমরা বুঝতে পারছি না, এতবড় মাদকের চালান চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে কিভাবে পার হচ্ছে? সেগুলো ওমান পর্যন্ত যাচ্ছে কিভাবে, তাহলে কি দেশের বিমানবন্দরে তল্লাশি সঠিকভাবে হচ্ছে না? এতে আমরা বাংলাদেশি যারা সেখানে আছি, আমাদের লজ্জায় পড়তে হচ্ছে। আমরা প্রবাসীরা এই বিষয়টাতে নজর দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করছি।’
বঙ্গবন্ধু পরিষদ, দুবাই’র সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘বিমানবন্দরে স্ক্যানিং মেশিনে কি ইয়াবা ধরা পড়ে না? তল্লাশির সময় কি মাদক ধরা পড়ে না? স্ক্যানিং মেশিনে কি শুধু শুটকি আর শুকনো মাছ ধরা পড়ে? ইয়াবা-গাঁজা নিয়ে গেলে ধরে না, অথচ আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা সামান্য শুটকি নিয়ে যেতে চাইলে তাদের কত হয়রানি করা হয়! সামান্য কারণে আমাদের এত হয়রানি করা হয় কেন?’
ওমান প্রবাসী মোসাদ্দেক চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশের বিমানবন্দরে আমাদের লাগেজ বারবার তল্লাশি করা হয়। এমনকি এয়ার ক্রুদের পর্যন্ত চেক করা হয়। অথচ আমাদের দেশে বিমানবন্দর দিয়ে ইয়াবা চলে যাচ্ছে। এই ব্যাপারে কঠোর হওয়া দরকার যাতে কোন ইয়াবা যেন পার হতে না পারে।’
আবুধাবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ইফতেখার হোসেন বাবুল বলেন, ‘শুধু জেলা পুলিশে নয়, সব উপজেলায় একটি করে প্রবাসীদের জন্য হেল্প ডেস্ক চালু করা প্রয়োজন। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের তো কোনো কাজ নেই। তাদের একজনকে উপজেলা পরিষদ ভবনে একটি করে কক্ষ চালু করে সেখানে বসানো যায়। তিনি শুধু প্রবাসীদের অভাব-অভিযোগ শুনবেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকেও এই প্রস্তাব সুনির্দিষ্টভাবে দিয়েছি।’
মাদক পাচারের অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্যে পুলিশ সুপার নুরেআলম মিনা বলেন, ‘আপনাদের এসব অভিযোগ আমি লিখিতভাবে ইমিগ্রেশন বিভাগ ও কাস্টমসকে জানাব। ইমিগ্রেশন পুলিশেরই একটি বিভাগ। তাদের আমি সরাসরি বলব যেন লাগেজ ভালোভাবে স্ক্যানিং হয়। কাস্টমস আলাদা কর্তৃপক্ষ। তাদেরও আমি চিঠি দিয়ে অনুরোধ করব। বিদেশে এত কঠোরভাবে তল্লাশি হয়, সেখানে তো আলপিন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায় না। তাহলে আমাদের দেশ থেকে ইয়াবা কিভাবে সেখানে যাচ্ছে?’
প্রবাসীদের জন্য হেল্প ডেস্ক চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হেল্প ডেস্ক আছে। সেখানে কোন অভিযোগ করলে পুলিশ সদর দফতর হয়ে আমাদের কাছে আসে। আমরা রুটিন ওয়ার্কের মতো করে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করি। আসলে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে পারি না। এখন আমরা ডেস্ক চালু করেছি। প্রবাসীরা সরাসরি অভিযোগ দেবেন। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করব।’
‘গ্রামগঞ্জে কিছু দুষ্টচক্র আছে, যারা প্রবাসীদের জমি গ্রাস করে, জাল দলিল সৃজন করে সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করে। এই চক্র প্রবাসীর পরিবারকে আরও বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। আমাদের অধিকাংশ পুলিশ সদস্যই পেশাদার। কিন্তু গুটিকতক সদস্য ওই দুষ্টচক্রের সঙ্গে মিশে প্রবাসীদের হয়রানি করে। এই হেল্প ডেস্ক চালুর ফলে সেই ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত প্রতিকার করব,‘ বলেন এসপি। চট্টগ্রাম জেলার ১৬ থানায় হেল্প ডেস্ক চালুরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পুলিশ সুপার।
নগরীর হালিশহরে জেলা পুলিশ লাইনে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) একেএম এমরান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ওমান প্রবাসী ডা. নাজিম উদ্দিন, আবুধাবি প্রবাসী মো. আলাউদ্দিন ও নাছির তালুকদার, সংযুক্ত আরব-আমিরাতের মো. সেলিম উদ্দিন, জাপান প্রবাসী গাজী সারোয়ার হাবিব, কাতার প্রবাসী আব্দুল জলিল ও নুর মোহাম্মদ।