অ্যান্টিভাইরাসের প্রয়োজন পড়েছে। যুৎসই অ্যান্টিভাইরাস দরকার ডেস্কটপ বা ল্যাপটপের জন্য নয়। চাই রাজনীতিকে ভাইরাসমুক্ত করতে। সত্তরের দশকের রাজনীতির সাক্ষী ছিলাম না আমি। ইতিহাস পাঠ করে বা মৌখিকভাবে বহমান ইতিহাস থেকে জেনেছি। আশির দশক থেকে বর্তমান সময় নাগাদ এগিয়ে গেছি ঘটনার সঙ্গে।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে বা সামনের কাতারে যে ওই দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারাই জায়গা পেয়েছিলেন তা নয়। কেউ দূরে সরে গেছেন নিজে থেকে। কাউকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, আবার কেউ কায়দা করে সামনের সারিতে চলে এসেছেন। বাহ্যিকভাবে দলে তাদের উপস্থিতি এমন ছিল যে, তাদের চেয়ে আওয়ামী লীগের আদর্শ ধারণ করার মতো ক্ষমতা কারও নেই। তারাই ওই আদর্শের মূল ঝাণ্ডাধারী।
এই ঝাণ্ডাধারীদের কেউ-কেউ ওই সময়কালে চিহ্নিত হলেও, বঙ্গবন্ধুর মতো নেতাও তাদের উৎপাটন করতে পারেননি। দলে ভাঙন, মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল, ভেতরে গর্ত করা শুরু হয়েছিল, কিন্তু বঙ্গবন্ধু ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই, ভাইরাসরাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। ইতিহাস পাঠ থেকে জানতে পারি সেই শশাঙ্কের সময় থেকে শুরু করে বাংলাদেশে ক্রান্তিকাল এসেছে নিয়মিত বিরতিতে।
সেই ক্রান্তকালগুলোতে ভিলেন হয়ে উঠেছিলেন কতিপয় ব্যক্তি। রাজনীতিতে তাদের ভুইফোঁড় বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর্দশের সঙ্গে আত্মীয়তা ছিল না এদের কখনওই। পঙ্গপালের মতো এসে তারা রাজনীতিকে নষ্ট করেছে। আম মানুষ ও রাজনীতির নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের সংগ্রহ করা মধু লুট করেছে এই লুটেরারা।
সুখের পায়রার মতোই এরা উড়াল দিয়েছে রাজনীতির সংকটে, রাষ্ট্রের দুঃসময়ে, দলের দুর্দিনে। কোনও যাদুতে যেন তারা আবার ফিরে-ফিরে আসে। তখন দুঃসময়ের সঙ্গীদের ভুলে যায় রাজনীতি, দল, দলের নের্তৃত্ব। এক কথায় বলা যায় রাজনীতির ভাইরাসদের দলই অজ্ঞাত কারণে পুষে রাখে। জানি না ক্ষমতাকে পাহারা দিতে তাদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করার স্বার্থেই এই কৌশল নেওয়া হয় কিনা।
পঁচাত্তর পরবর্তী সময় যারা ক্ষমতায় এসেছেন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে, বা যে রাজনৈতিক দলগুলোর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, পরবর্তীতে সরকার গঠন করেছে, তাদের সবাই ভাইরাস আক্রান্ত হতে হয়েছে। সেই ভাইরাস আদর্শ রাজনীতিবীদদের দলচ্যুত, রাজনীতিচ্যুত করেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির যে জনবিচ্ছিন্নতা বা নিষ্ক্রিয়তা তা ওই ভাইরাস রাজনীতিকদের জন্যই। সাম্প্রতিক সময়ে ক্ষমতাসীন দলের কোনও কোনও রাজনীতিবীদ ক্রান্তিকালের সংকট নিয়ে যে মন্তব্য করছেন, তাতে সাধারণ জনগণ আহত হচ্ছেন। রাজনীতিবিদদের প্রতি চিমটি পরিমাণ যে শ্রদ্ধা সঞ্চিত ছিল, তাও এখন হাতগলে বেরিয়ে যাচ্ছে। ঘাতকের হাতে পুত্র নিহত হওয়ার পর শিক্ষক পিতার বেদনাবোধকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষুদ্র মানসিকতা যে রাজনৈতিক নেতার, তিনি কোনওভাবেই তার দলের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারেন না।
ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যার মধ্যেও দম্ভ ও অহংবোধের পরিচয় মেলে। এ ধরনের নেতা কেবল ক্ষমতাসীন দলই নয়, রাজনীতির জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন। এদের সংখ্যা যে হাতেগোনা তা কিন্তু নয়, এরা যে কেবল ক্ষমতাসীন দলেই আছেন তা নয়। আজ রাজনীতিতে খাদের কিনারে গিয়ে অবস্থান নিয়েছে যে বিএনপি, সেই দলটির আজকের পরিস্থিতির জন্যও কতিপয় ভাইরাস নেতাই দায়ী।
অবাক করা বিষয় হলো রাজনীতিকে, দলকে ভাইরাসে ক্ষতবিক্ষত করার পরও, দল ও শীর্ষ নের্তৃত্ব কোনও অজ্ঞাত কারণে এদের বিরুদ্ধে অ্যান্টিভাইরাসমূলক কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। কিন্তু দেশে রাজনীতি বিমুখতা ও রাজনীতির জনবিচ্ছিন্নতা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে সেখান থেকে রাজনীতিকে বের করে নিয়ে না আসলে, অবসান হবে না এই সংকট বা ক্রান্তিকালের। আমজনতার এই কথাও জানা রাজনীতির শীর্ষ নের্তৃত্ব ও রাজনৈতিক দলের কাছে অ্যান্টিভাইরাস দুর্লভ নয়। প্রয়োজন শুধু প্রয়োগে উদ্যোগী হওয়া।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
(মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর নিজস্ব। www.sunbd24.com-এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে www.sunbd2424.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।)