কমতে পারে অ্যাক্টিভ ফাইনের আয়: শর্ত দিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলে দিলো এনবিআর
:: আপডেট: ২০১৯-০৫-২২ ১০:৫৪:৩৩
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালসের ব্যাংক হিসাব খুলে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে এর জন্য পরিশোধ করতে হয়েছে ২ কোটি টাকা। বাকী টাকা পরিশোধের শর্তে ব্যাংক হিসাব খুলে দিয়েছে এনবিআর। শেষ পর্যন্ত কোম্পানিকে এই টাকা পরিশোধ করতে হলে মুনাফা কমতে পারে।
অন্যদিকে কোম্পানিটিকে যদি শেষ পর্যন্ত এনবিআরের শর্ত অনুযাীয় পুরণ করতে হয়, তাহলে ২০১৬-১৭ করবর্ষের বিপরীতে আরও প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হতে পারে। এতে কোম্পানির আয়ের ওপর চাপ আসতে পারে বলে মনে করছে শেয়ারধারী একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান। এটি হলে কোম্পানির মুনাফা কমে যাবে। এ সমস্যার বিষয়ে কোম্পানির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে নিরীক্ষকও শেয়ারহোল্ডারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে অনাদায়ী আয়কর, এর সুদ ও জরিমানা বাবদ মোট ৫৫ কোটি টাকা পায় এনবিআর। টাকা আদায় করার জন্য চলতি মাসের শুরুর দিকে কোম্পানিটির সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করে এনবিআর। এর পর গত ৯ জানুয়ারী এনবিআর এর কাছে ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়ার জন্য আবেদন করে কোম্পানির চেয়ারম্যান মো: জিয়া উদ্দিন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের মে মাসে বাণিজ্যমন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ২৬.০০.০০০০.১০০.৪২.০০৮.১৭-৫৪ নম্বর গেজেটে এপিআই শিল্পের প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমাদের কোম্পানিকে ২০৩২ সাল পর্যন্ত কর ও মূসকমুক্ত ঘোষণা করে সরকার। এ বিষয়ে শিগগিরই এসআরও প্রকাশিত হবে বলে আশা প্রকাশ করছি। চিঠিতে কোম্পানিটি আরও বলে, অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যাল দেশের ওষুধ শিল্পের একমাত্র এপিআই প্রস্তুতকারক কোম্পানি। কোম্পানিটির উৎপাদিত বিভিন্ন এপিআই থেকে অনেক জীবন রক্ষাকারী ওষুধ প্রস্তুত করা হচ্ছে, যেগুলো আগে আমদানি করা হতো। পাশাপাশি আলোচনার ভিত্তিতে ২০১৬-১৭ করবর্ষের স্বীকৃত দায় পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোম্পানিটি তাদের সব ব্যাংক হিসাব খুলে দেয়ার আবেদন করে।
জানা গেছে, খাতসংশ্লিষ্টদের দাবির মুখে আমদানি বিকল্প পণ্যের নতুন শিল্প হিসেবে ওষুধের কাঁচামাল (এপিআই) উৎপাদকদের কর ও মূসকমুক্ত শিল্প খাত ঘোষণা দিয়ে গত বছর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। খাতসংশ্লিষ্টদের আবেদন ও সরকারি প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতেই দুই বছর ধরে হিসাব প্রতিবেদন প্রস্তুত করে কর পরিশোধ করে আসছিল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এপিআই প্রস্তুতকারক অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো এসআরও জারি না হওয়ায় কোম্পানিটির কাছে আয়কর, সুদ ও জরিমানা বাবদ ৫৫ কোটি টাকার বেশি দাবি করে আসছিল এনবিআর।
এ বিষয়ে কোম্পানিটর চেয়ারম্যান মো: জিয়া উদ্দিন সানবিডিকে বলেন, এনবিআর আমাদের ব্যাংক হিসবা জব্দ করেছিলো। তবে সেটি খুলে দিয়েছে।
অন্যদিকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম সাইফুর রহমান বলেন, ওষুধের কাঁচামাল উৎসাহিত করতে সরকার ২০১৮ সালের মে মাসে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে আমাদের কর, মূসক অব্যাহতির ঘোষণা দেয়। আমরা সেভাবেই নিজেদের ব্যবসায়িক প্রস্তুতি নিই এবং কর পরিশোধ করি। তবে এনবিআর কর্তৃক এসআরও জারির বিষয়টি বিলম্বিত হওয়ায় কর কর্মকর্তারা আমাদের কাছে আরও বেশি রাজস্ব দাবি করে আসছিলেন। সম্প্রতি আমাদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়। আমরা আমাদের বক্তব্যগুলো এনবিআরকে লিখিতভাবে জানিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলে দেয়ার আবেদন করি। আমরা আলোচনার ভিত্তিতে অর্থ পরিশোধেও স্বীকৃতি জানিয়েছি। প্রাথমিকভাবে ২ কোটি টাকা জমা দেয়ার পর কোম্পানির ব্যাংক হিসাবগুলো সচল হয়।
তিনি আরও বলেন, সরকার এপিআই শিল্প নিয়ে যে নীতি ঘোষণা করেছিল, তা কার্যকর হলে আমরা সরকারের কোষাগারে এরই মধ্যে যে অর্থ পরিশোধ করেছি, সেখান থেকে উল্টো ফেরত পাওয়ার কথা। কিন্তু এসআরও জারি না হওয়ায় আমাদের কাছে আরও বেশি অর্থ দাবি করছে এনবিআর। আমরা আলোচনার ভিত্তিতে অর্থ পরিশোধে সম্মত হয়ে ব্যাংক হিসাবগুলো সচল করতে বাধ্য হয়েছি।
আমরা এখানো আশা করছি, এনবিআর বিষয়টি অনুধাবন করে এসআরও জারি করবে এবং আমাদের ওপর থেকে দাবি প্রত্যাহার করে নেবে। এ বিষয়ে আমরা সরকারেরও সহযোগিতা চাই। তা না হলে রাজস্ব কর্মকর্তারা যেটি চাইবেন, আমাদের তা-ই দিতে হবে। এমনটি হলে একদিকে এপিআই শিল্প গড়ে তুলতে কোম্পানির উদ্যোগ বাধাগ্রস্ত হবে, অন্যদিকে শেয়ারহোল্ডাররাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
সানবিডি/জিইউ