চাল রফতানিতে থাইল্যান্ডের সঙ্গে ব্যবধান বাড়াচ্ছে ভারত
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০১৯-০১-২৪ ১৭:১৪:৩২
চলতি শতকের প্রথম দশকেই (২০০১-১০) চালের বৈশ্বিক রফতানি বাণিজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাম ছিল থাইল্যান্ড।
সে সময় বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশ হিসেবে খাদ্যপণ্যটির বাজারে প্রভাবক হিসেবে সবার আগে আসত থাইল্যান্ডের নাম । তালিকার দ্বিতীয় নম্বরে ছিল ভারত।
ভারত সেসময় শুধুমাত্র বাসমতি চাল রফতানির মধ্য দিয়ে খাদ্যপণ্যটির রফতানিকারকদের তালিকায় নিজের অবস্থান ধরে রেখেছিল। তবে দুই দেশের মধ্যে চাল রফতানির পরিমাণে ছিল বিস্তর ব্যবধান।
চলতি দশকের শুরু থেকে খাদ্যপণ্যটির রফতানি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয় ভারত। বিশেষত বাসুমতির পাশাপাশি অন্যান্য জাতের চাল রফতানিতে বেশি গুরুত্ব দেয় দেশটি। এর জের ধরে ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো থাইল্যান্ডকে টপকে বিশ্বের শীর্ষ চাল রফতানিকারক দেশের স্বীকৃতি পায় ভারত।
এর পর ধারাবাহিকভাবে তালিকায় নিজের অবস্থান আরো জোরালো করেছে দেশটি। বর্তমানে চালের বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতি মূল্যায়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে উচ্চারিত হয় ভারতের নাম। খবর বিজনেস লাইন ও ইকোনমিক টাইমস।
মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে সাকল্যে ২৭ লাখ ৭৪ হাজার টন চাল রফতানি হয়েছিল। এ সময় থাইল্যান্ড থেকে রফতানি হয়েছিল মোট ১ কোটি ৬ লাখ ৪৭ হাজার টন চাল। এক বছরের ব্যবধানে চালের বৈশ্বিক রফতানি বাজারে দেশ দুটির অবস্থান বদলে যায়।
২০১১ সালে ভারতীয় রফতানিকারকরা সব মিলিয়ে ১ কোটি ৩ লাখ ৭৬ হাজার টন চাল রফতানি করেন, যা আগের বছরের তুলনায় ২৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। বিপরীতে ওই বছর থাইল্যান্ড থেকে খাদ্যপণ্যটির সম্মিলিত রফতানি দাঁড়ায় ৬৯ লাখ ৪৫ হাজার টনে, যা আগের বছরের তুলনায় ৩৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ কম। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো চাল রফতানিকারকদের বৈশ্বিক তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে উঠে আসে ভারত। এক ধাপ নেমে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে থাইল্যান্ডের নাম।
চলতি দশকের শুরু থেকে শুধু চাল রফতানি বাড়ায়নি ভারত, বরং দেশটির চাল রফতানি খাতের পুরো চিত্রপট পাল্টে গেছে। বিগত দশকে বাসমতি চাল রফতানিতে গুরুত্ব দিয়ে এসেছিল ভারত। বিজনেস লাইনের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ ও ২০১০-১১ মৌসুমে ভারত থেকে ২০ লাখ টনের বেশি বাসমতি চাল রফতানি হয়েছিল। এর বিপরীতে বাসমতি বাদে অন্যান্য জাতের চাল রফতানি হয়েছিল সাকল্যে দু-চার লাখ টন। ২০১১ সালে ভারত সরকার বাসমতি বাদে অন্যান্য জাতের চাল রফতানিতে দীর্ঘদিনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। এর জের ধরে ২০১১-১২ মৌসুমেই ভারত থেকে বাসমতি বাদে অন্যান্য জাতের চাল রফতানি ৪০ লাখ টন ছাড়িয়ে যায়। এ মৌসুমে ভারতীয় রফতানিকারকরা ৩৫ লাখ টন বাসমতি চাল রফতানি করেছিলেন। ছয় বছরের ব্যবধানে
২০১৭-১৮ মৌসুমে দেশটি থেকে ৮৫ লাখ টনের কাছাকাছি বাসমতি বাদে অন্যান্য জাতের চাল রফতানি হয়েছে।
বৈশ্বিক রফতানি বাজারে ভারতকে শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে যে খাতগুলো সহায়তা করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা,সেগুলো হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমবর্ধমান চাহিদা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, ভতুর্কি মূল্যে কৃষি উপকরণ প্রাপ্তির সুবিধা, কার্যকর রফতানি নীতি প্রণয়ন, ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সহায়তা প্রভৃতি কারণে ভারতীয় কৃষকদের ধান-চাল উৎপাদনে আগ্রহ আগের তুলনায় বেড়েছে। ফলে দেশটি চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ চাল উৎপাদনকারীর স্বীকৃতি পেয়েছে। বিদায়ী বছরে ভারতে রেকর্ড ১১ কোটি ১০ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন খাতের তুলনামূলক চাঙ্গাভাব, অনুকূল আবহাওয়া ও ভূপ্রকৃতি চালের বৈশ্বিক রফতানি বাজার।